বংশ, ইযযত ও সম্ভ্রম রক্ষা করা ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য ইসলাম ব্যভিচারকে হারাম করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [الاسراء: ٣٢]

“তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় তা একটি অশ্লীল কাজ ও খারাপ পন্থা”। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩২]

শরী‘আত পর্দা ফরয করেছে, নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছে এবং গায়ের মাহরাম স্ত্রীলোকদের সঙ্গে নির্জনে মিলিত হওয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এভাবে ব্যভিচারের সকল উপায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেউ ব্যভিচার করে বসলে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে না মরা পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। এভাবে সে তার কাজের উপযুক্ত পরিণাম ভোগ করবে এবং হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল এখন তেমনি করে যন্ত্রণা উপভোগ করবে।

আর অবিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীদেরকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই শরী‘আতের সর্বোচ্চ শাস্তি। একদল মুমিনের সামনে অর্থাৎ জনতার সামনে খোলা ময়দানে এ শাস্তি কার্যকর করতে হবে, যাতে সে অপমানের চূড়ান্ত হয়। একই সঙ্গে তাকে এক বৎসরের জন্য অপরাধ সংঘটিত এলাকা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এরূপ ব্যবস্থা চালু হলে ব্যভিচারের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করা যায়।

ব্যভিচারী নর-নারী বারাযাখ তথা কবরের জীবনেও তাকে কঠিন শাস্তি পোহাবে। তারা এমন একটি অগ্নিকুণ্ডে থাকবে যার ঊর্ধ্বাংশ হবে সংকীর্ণ; কিন্তু নিম্নাংশ হবে প্রশস্ত। তার নিচ থেকে আগুন জ্বালানো হবে। সেই আগুনে তারা উলঙ্গ, বিবস্ত্র অবস্থায় থাকবে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকবে। ঐ আগুন এতই উত্তপ্ত হবে যে, তার তোড়ে তারা উপরের দিকে উঠে আসবে। এমনকি তারা প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম করবে। যখনই এমন হবে তখনই আগুন নিভিয়ে দেওয়া হবে। ফলে তারা আবার অগ্নিকুণ্ডের তলদেশে ফিরে যাবে। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের জন্য এ ব্যবস্থা চলতে থাকবে।[1]

ব্যভিচারের বিষয়টি আরও কদর্য ও ঘৃণিত হয়ে দাঁড়ায় তখন, যখন কোনো ব্যক্তি বয়সে ভারী ও এক পা কবরে চলে যাওয়ার পরও হরদম ব্যভিচার করে যায় আর আল্লাহও তাকে ছাড় দিয়ে যান। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ - قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ: وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ - وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ»

“কিয়ামত দিবসে তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না; বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হলো বয়োবৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রনায়ক ও অহংকারী দরিদ্র”।[2]

অনেকে ব্যভিচার বা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে। অথচ পতিতাবৃত্তি থেকে অর্জিত আয় নিকৃষ্ট উপার্জনাদিরই একটি। যে পতিতা তার ইজ্জত বেচে খায় সে মধ্যরাতে যখন দো‘আ কবুলের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হয় তখন দো‘আ কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।[3] অভাব ও দারিদ্র্য আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার জন্য কোনো শর‘ঈ ওযর হতে পারে না। বলা হয়ে থাকে স্বাধীনা নারী ক্ষুধার্ত থাকতে পারে কিন্তু সে তার স্তন বিক্রি করে খেতে পারে না, যদি স্তনের ব্যাপারে তা হয় তাহলে লজ্জাস্থানের ব্যাপার কী দাঁড়াতে পারে তা বলাই বাহুল্য।

আমাদের যুগে তো অশ্লীলতার সকল দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছে। শয়তান ও তার দোসরদের চক্রান্তে অশ্লীলতার পথ ও পন্থাগুলো সহজলভ্য হয়ে গেছে। পাপী ব্যভিচারীরা এখন খোলাখুলি শয়তানের অনুসরণ করছে। মেয়েরা দ্বিধাহীনচিত্তে ব্যাপকভাবে বাইরে পর্দাহীনভাবে যাতায়াত করে তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে। মোড়ে মোড়ে বখাটে ছেলেদের বক্র চাহনি ও হা করে মেয়েদের পানে তাকিয়ে থাকা তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাধ মেলা-মেশা, পর্ণোগ্রাফি ও ব্লু ফ্লিমে দেশ ভরে গেছে। ফ্রি সেক্সের দেশগুলোতে মানুষের ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। কে কত বেশি খোলামেলা হতে পারে যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। ধর্ষণ ও বলাৎকারে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। জারজ সন্তানের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ক্লিনিকে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে অবৈধ গর্ভপাতের মাধ্যমে মানব সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে।হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট দয়া, অনুগ্রহ ও গোপনীয়তা প্রার্থনা করছি এবং এমন সম্ভ্রম কামনা করছি যার বদৌলতে তুমি আমাদেরকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করবে। আমরা তোমার নিকট আমাদের মনের পবিত্রতা ও ইযযতের হেফাযত প্রার্থনা করছি। দয়া করে তুমি আমাদের মাঝে ও হারামের মাঝে একটি সুদৃঢ় অন্তরাল তৈরি করে দাও। আমীন!

>
[1] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৪৬২১।

[2] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৫১০৯।

[3] সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৯৭১।