কুফুরীর রুকন চারটি। সেগুলো হচ্ছে: অহংকার, হিংসা, রাগ ও প্রবৃত্তি।

অহংকার ব্যক্তিকে আনুগত্য করা থেকে বিরত রাখে, হিংসা তাকে সদুপদেশ গ্রহণ ও প্রদান করতে বাধা দেয়, রাগ তাকে ন্যায় বিচারে বাধা দেয় এবং প্রবৃত্তি ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে।

এ চারটির মূল উৎপত্তি হলো ব্যক্তির অজ্ঞতা ও মূর্খতা; কেননা সে যদি তার রবকে তাঁর পরিপূর্ণ গুণাবলী ও মহান বৈশিষ্ট্য সহকারে যথাযথভাবে চিনত এবং নিজের অপূর্ণাঙ্গতা, কমতি ও দোষ-ত্রুটি বুঝত তাহলে সে কখনও অহংকার করত না, কারো ওপর রাগ হতো না, আল্লাহর যাকে দান করেন তাতে সে হিংসা করত না। কেননা প্রকৃতপক্ষে হিংসা তো হচ্ছে আল্লাহর সাথে একধরণের শত্রুতা। আল্লাহ যে বান্দাকে নি‘আমত দিতে ভালোবাসেন সে তাকে সে নি‘আমত প্রদান অপছন্দ করে এবং সে তার থেকে উক্ত নি‘আমত চলে যাওয়া পছন্দ করে; অথচ আল্লাহ তা অপছন্দ করেন। আল্লাহর ফয়সালা, তাঁর বণ্টন, তাঁর পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদির বিপরীত হলো কাউকে হিংসা করা। আর এ কারণেই ইবলিস তাঁর প্রকৃত শত্রুতে পরিণত হয়েছে। কেননা তার অপরাধের মূল ছিল অহংকার ও হিংসা।

এ দু’টি দোষ থেকে মুক্তির উপায় হলো আল্লাহর জ্ঞানার্জন, তাঁর তাওহীদ শিক্ষা, তাঁর বণ্টনে সন্তুষ্ট থাকা এবং তাঁর প্রতি সর্বদা বিনয়ী ও অনুগত থাকা। রাগের ত্রুটি থেকে বেঁচে থাকার উপায় হলো নিজেকে চেনা, কারো ওপর রাগ করা বা কারো থেকে প্রতিশোধ নেয়ার তার কোনো অধিকার নেই, এ বিষয়টি জানা। কেননা নিজেকে চেনার মাধ্যমে স্রষ্টার বণ্টনে সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট থাকা এটি তার নিজের প্রতি অগ্রাধিকার প্রদান করা।

এসব ব্যাধি থেকে মুক্তির সর্বোত্তম পন্থা হলো, নিজেকে এভাবে অভ্যস্ত করা যে, আল্লাহ তা‘আলা জন্য কারো ওপর ক্রোধান্বিত হওয়া ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই কারো প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। অতএব, কারো অন্তরে আল্লাহর জন্য রাগান্বিত হওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারো প্রতি সন্তুষ্ট থাকা প্রবিষ্ট করলে তার অন্তর থেকে অন্যের ওপর রাগ হওয়া ও সন্তুষ্টি থাকা দূরীভূত হয়ে যাবে। বিপরীতভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাগ বা সন্তুষ্ট না থাকলে তার অন্তরে বিপরীতমূখী রাগ ও সন্তুষ্ট থাকবে (যা তাকে ধ্বংস করে দেয়)।

অন্যদিকে, প্রবৃত্তির ঔষধ হচ্ছে সঠিক জ্ঞানার্জন ও জানা। তা এভাবে যে, ব্যক্তির প্রবৃত্তি তার সঠিক জ্ঞানার্জন ও জানার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা এবং এ কারণে সে সঠিক জ্ঞান লাভ ও জানা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রবৃত্তিকে দমন করা সঠিক জ্ঞান ও জানার উৎকৃষ্ট উপায়। অতএব, যখনই তুমি প্রবৃত্তির পথ খুলে দিবে ততই তুমি সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হবে, আর প্রবৃত্তির পথ যখনই বন্ধ করে দিবে তখনই তুমি সঠিক জ্ঞানের দিকে সর্বদিক থেকে দ্রুত ধাবিত হবে। মানুষের রাগ হিংস্র জন্তুর ন্যায়। হিংস্র জন্তু যেমন কাউকে নির্জনে কায়দায় পেলে তাকেই শুরুতে খাওয়া শুরু করে, তেমনিভাবে রাগও তাকে খেয়ে ফেলে (তার আমল নষ্ট করে দেয়)। আর প্রবৃত্তি আগুনের মত। কোন ব্যক্তি আগুন প্রজ্বলিত করলে তাকেই শুরুতে আগুন ভস্মিত করে। অহংকার সম্রাজ্যের প্রতিপক্ষ শত্রুর মত, সে তোমাকে ধ্বংস করতে না পারলেও তোমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। হিংসা তোমার চেয়ে শক্তিশালী শত্রুর মতো। যে ব্যক্তি প্রবৃত্তি ও রাগের ওপর জয়লাভ করে, শয়তান তার ছায়া দেখেও ভীত [1] হয়। আর যার ওপর তার প্রবৃত্তি ও ক্রোধ বিজয় লাভ করে তার চিন্তাভাবনা ও কল্পনা কিছুই শয়তান ভয় পায় না।

>
[1] يفرق শব্দের অর্থ ভয় করা, চিন্তিত হওয়া। দেখুন, আন-নিহায়া, ৩/৪৩৮।