উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) তাক্বলীদ (التقليد) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

তাক্বলীদ দু’প্রকার:

১. العام (ব্যাপক তাক্বলীদ) ২. الخاص (নির্দিষ্ট তাক্বলীদ)

(ক) العام (ব্যাপক তাক্বলীদ): তাক্বলীদে ‘আম বা ব্যাপক তাক্বলীদ হলো, নির্দিষ্ট একটি মাযহাবকে আঁকড়ে ধরা, দীনের সব বিষয়ে মুকাল্লিদ উক্ত মাযহাবের রুখসাত (নমনীয়-সাধারণ) ও আযীমাত (শরীয়াতের আবশ্যিক) গুলো গ্রহণ করে।[1]

এ তাক্বলীদের ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। পরবর্তী লোকদের দ্বারা ইজতিহাদ করা সম্ভবপর না হবার কারণে কেউ কেউ এটাকে ওয়াজিব বলেছেন।[2] আবার কতিপয় বিদ্বান এটাকে হারাম বলেছেন -যেহেতু এতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের অনুসরণের ক্ষেত্রে শর্তহীন বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেছেন,

"إن في القول بوجوب طاعة غير النبي صلي الله عليه وسلم في كل أمره ونهيه، وهو خلاف الاجماع وجوازه فيه ما فيه..."

‘‘আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া কারো আদেশ ও নিষেধের ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা আবশ্যকতার মতটি ইজমা বিরোধী। এটি জায়েয হওয়ার মধ্যে ত্রম্নটি রয়েছে।[3]

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন মাযহাবকে আঁকড়ে ধরে, অতঃপর উক্ত মাযহাবের বিপরীত কোন আমল করে, কোন কারণ ছাড়াই অন্য কোন আলিমের ফাতাওয়ার কারণে ঐ মাযহাবের অনুসরণ করেছে এমন নয়, মাযহাবের বিপরীত আমলের দাবি রাখে এমন কোন দলীলও তার কাছে নেই অথবা তার কর্মের বৈধতা দাবি করে এমন কোন শারঈ ওজরও নেই, তবে সে ব্যক্তি শারঈ কোন ওজর ছাড়াই হারাম সম্পাদনকারী ও তার প্রবৃত্তির পূজারী হিসাবে বিবেচিত হবে। এটি অবশ্যই গর্হিত কর্ম।

কিন্তু যখন তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায় এমন বিষয়, যা এক মতের উপর আরেক মতকে অগ্রাধিকার দেয়াকে অবধারিত করে, এটি হতে পারে বিস্তারিত দলীল প্রমাণের মাধ্যমে, যদি সে উক্ত দলীল-প্রমাণ জানতে ও বুঝতে পারে অথবা দু’জনের মধ্যে একজনকে উক্ত মাসআ‘লার বিষয়ে অধিক জ্ঞাত মনে করে এবং সে ব্যক্তি তার বক্তব্যের ব্যাপারে আল্লাহকে অধিক ভয় করে, এমতাবস্থায় সে যদি এক অভিমত থেকে অন্য অভিমতের দিকে ফিরে যায়, তবে এটি জায়েয। বরং ওয়াজিব। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন।’’[4]

২. الخاص (নির্দিষ্ট তাক্বলীদ): নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির অভিমত গ্রহণ করাকে তাক্বলীদে خاص বলে। যখন কোন ব্যক্তি ইজতিহাদের মাধ্যমে হক্ব জানতে অপারগ হবে, তখন এটি জায়েয। চাই সে ইজতেহাদ করতে প্রকৃত অর্থেই অপারগ হোক অথবা খুব কষ্ট করে ইজতিহাদ করতে সক্ষম হোক।

[1]. রুখসাত হলো ছাড়মূলক ফাতাওয়া। যেমন: হানাফী মাযহাব মতে, উটের গোশত খেলে ওযু করা লাগে না। আযিমাত হলো আবশ্যক পালনীয় বিষয়। যেমন: হাম্বলী মাযহাব মতে, উটের গোশত খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। পরে ছ্বলাত আদায় করতে চাইলে নতুন করে ওযু করা আবশ্যক হয়। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি তার অনুসরণীয় মাযহাবের সব রুখসাত ও আযীমাত গ্রহণ করে।

[2]. এটা খুবই বাজে মত। কেননা, কুরআন-হাদীছের নছ বহাল থাকার পরেও, পরবর্তী যুগের লোকদের জন্য ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করে তাকলীদ অবধারিত করে দেয়া মোটেও সঠিক কথা নয়।

[3]. ফাতাওয়া আল কুবরা ৪/৬২৫

[4]. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) এর বক্তব্য অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। এ জন্য বলা হয় যে, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) এর কথায় সব সময় নূর থাকে। যদি মুকাল্লিদ ভাইয়েরা এমন ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অবলম্বন করতো, তবে মুসলিম উম্মাহ মাযহাবীয় গোঁড়ামী ও অনেক অনেক বিবাদ-বিতর্ক থেকে রক্ষা পেতো। আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি।