উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) ইজমা (الاجماع) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

 ইজমা এর আভিধানিক অর্থ: দৃঢ় সংকল্প করা, একমত হওয়া।

পারিভাষিক অর্থ:

اتفاق مجتهدي هذه الأمة بعد النبي صلى الله عليه وسلم على حكم شرعي

‘‘ইজমা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশার পর শারঈ কোন হুকুমের বিষয়ে এ উম্মতের মুজতাহিদগণের ঐক্যমত পোষণ করা।’’

আমাদের বক্তব্য: اتفاق (ঐক্যমত) এ শব্দ দ্বারা ‘মতানৈক্যের অস্তিত্ব বের হয়ে গেছে। যদিও মতানৈক্য একজন বিদ্বানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই কোন বিষয়ে মতানৈক্য বিদ্যমান থাকলে সে বিষয়ে ইজমা সংঘঠিত হবে না।

مجتهدي (মুজতাহিদগণ) এ শব্দ দ্বারা সাধারণ মানুষ ও মুকাল্লিদগণ বের হয়ে গেছে। কাজেই এদের একমত হওয়া বা ভিন্ন মত পোষণ করা ধর্তব্য হবে না।

هذه الامة (এ উম্মতের) এ অংশ দ্বারা অন্য জাতির ঐক্যমত বের হয়ে গেছে। সুতরাং ভিন্ন জাতির ঐক্যমত শরীয়তে ধর্তব্য হবে না।

بعد النبي صلى الله عليه وسلم (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশার পর) এ অংশ দ্বারা তার জীবদ্দশায় তার (ছাহাবীদের) ঐক্যমত বের হয়ে গেছে। সেগুলো স্বয়ং সম্পন্ন ভাবে দলীল হওয়ার কারণে তা ইজমা হিসাবে অভিহিত হবে না। কেননা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অনুমোদনের সুন্নাহ দ্বারাই দলীল অর্জিত হয়। এজন্য ছাহাবীরা যখন বলেন, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এরূপ করতাম অথবা তারা এরূপ করতো। এগুলো বিধানগতভাবে মারফু হাদীছ; ‘ইজমার বিবরণ’ নয়।

على حكم شرعي (শারঈ কোন হুকুমের বিষয়ে) এ অংশ দ্বারা জ্ঞানগত কিংবা প্রকৃতিগত বিষয়ে ঐক্যমত বের হয়ে গেছে। এখানে এসবের কোন অনুপ্রবেশ নেই। কেননা, ‘ইজমা’ শরীয়তের একটি দলীল এখানে আলোচ্য বিষয় এটিই।

বেশ কিছু দলীলের ভিত্তিতে ইজমা প্রামাণ্য বিষয় বলে গণ্য। তন্মেধ্যে অন্যতম দলীল হলো:

১. আল্লাহর বাণী:

وَكَذَالِكَ جَعَلْنٰكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ

‘‘এমনিভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা মানবমন্ডলীর জন্যে সাক্ষ্যদাতা হও (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৪৩)।’’

‘মানুষের জন্য সাক্ষী হতে পারো’ এটি মানুষের কর্মের বিধানের সাক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে সাক্ষীর কথা গ্রহণযোগ্য।

২. আল্লাহর বাণী:

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ

‘‘অত:পর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হও, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করো (সূরা আন-নিসা ৪:৫৯)।’’

আয়াতটি প্রমাণ করে যেসব ব্যাপারে তাঁরা ঐক্যমত পোষণ করেন, তা হক্ব বা সত্য।

৩. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

لا تجتمع امتي علي الضلالة

‘‘আমার উম্মত গোমরাহীর উপর ঐক্যমত পোষণ করবে না।’’[1]৪. আমরা বলতে পারি যে, কোন বিষয়ে এ উম্মতের ঐক্যমত পোষণ করা হয়তো হক হবে, না হয় বাতিল হবে। যদি হক হয় তাহলে সেটি দলীল যোগ্য। আর যদি বাতিল হয়, তাহলে এটি কিভাবে হতে পারে যে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাবান এ উম্মত আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি বাতিল বিষয়ের উপর ঐক্যমত পোষণ করবেন, যে বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহ সন্তুষ্ট নন? এটা তো বড়ই অসম্ভব বিষয়!

[1]. আবূ দাউদ হা/৪২৫৩, ইবনে মাজাহ হা/৩৯৫০, তিরমিযী/২১৬৭, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) হাদীছটিকে হাসান বলেছেন। (তাখরীজুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৮২)