مجمل এর আভিধানিক অর্থ: অষ্পষ্ট, ব্যাখ্যাহীন, সামষ্টিক ইত্যাদি।

পারিভাষিক অর্থ:

ما يتوقف فهم المراد منه علي غيره اما في تعيينه او بيان صفته او مقداره

অর্থাৎ مجمل ঐ শব্দকে বলে যার উদ্দিষ্ট বুঝ অন্যের উপর নির্ভর করে। হয়তো তার সত্ত্বা নির্ধারণ অথবা তার সিফাত বর্ণনা অথবা তার পরিমাণ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে।

সত্ত্বা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয় এর উদাহরণ: আল্লাহর বাণী:

وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ

‘‘তালাক প্রাপ্তা নারীরা তিন হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করবে (সূরা আল-বাক্বারা ২:২২৮)।’’

কেননা, قرء শব্দটি حيض ও طهر উভয় অর্থের সমষ্টি। কাজেই এর মধ্যে যে কোন একটি নির্দিষ্ট হওয়ার ব্যাপারে ভিন্ন দলীলের প্রয়োজন।

صفة এর বিবরণ জানার জন্য যা অন্যের উপর নির্ভরশীল, এর দৃষ্টান্ত: আল্লাহর বাণী:

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ

তোমরা ছ্বলাত প্রতিষ্ঠা করো (সূরা আল-বাক্বারা ২:৪৩)।

এখানে ছ্বলাত প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতি অজ্ঞাত, যার বিবরণ জানা প্রয়োজন।

পরিমাণ নির্ধারিত হওয়ার ক্ষেত্রে যা অন্যের মুখাপেক্ষী, এর উদাহরণ:

وَآَتُوا الزَّكَاةَ

‘‘ তোমরা যাকাত প্রদান করো (সূরা আল-বাক্বারা ২:৪৩)।’’

এখানে যাকাতের নিসাব অজ্ঞাত, যার বিবরণ প্রয়োজন।


مبين এর সংজ্ঞা: مبين এর আভিধানিক অর্থ: স্পষ্ট, ব্যাখ্যাকৃত। مبين এর পারিভাষিক অর্থ:

ما يفهم المراد منه إما بأصل الوضع أو بعد التبيين

‘‘যে শব্দের উদ্দিষ্ট অর্থ বুঝা যায়, হয়তো মূল সৃষ্টিগতভাবে অথবা বর্ণনা করার পর, তাকে مبين বলে।’’

যার উদ্দিষ্ট মর্মার্থ মূল সৃষ্টিগতভাবে বুঝা যায়, এর উদাহরণ: আসমান, জমিন, পাহাড়, মানুষ, জুলুম, সততা ইত্যাদি এ ধরণের শব্দগুলির উদ্দিষ্ট মর্মার্থ মূল সৃষ্টিগত ভাবেই জানা যায়। এদের অর্থের বিবরণের জন্য এ শব্দসমূহ অন্য শব্দের মুখাপেক্ষী হয় না।

যে শব্দের উদ্দিষ্ট মর্মার্থ স্পষ্ট করার পর বুঝা যায়-এর উদাহরণ: আল্লাহর বাণী:

وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ

তোমরা ছ্বলাত প্রতিষ্ঠা করো যাকাত দাও (সূরা আল-বাক্বারা ২:৪৩)।

এখানে اقامة (প্রতিষ্ঠা করো) ও ايتاء (প্রদান করো) উভয়টি مجمل শব্দ। কিন্তু শরীয়ত প্রণেতা তার বর্ণনা দিয়েছেন। তাই বর্ণনা করার পর সেটি مبين শব্দে পরিণত হয়েছে।

مجمل অনুযায়ী আমল করা

مكلف বিবরণ-ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে শরীয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো مجمل অনুযায়ী আমল করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীয়তের মৌলিক-শাখাগত সমস্ত বিষয় তাঁর উম্মতের জন্য সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি তিনি এ উম্মতকে স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন শরীয়তের উপর রেখে গিয়েছেন; যার রাত দিবালোকের মতই। তিনি প্রয়াজনীয় মূহুর্তে কখনও বিবরণ দেওয়া ছেড়ে দেননি।

তার বিবরণ হয়তো বা বাচনিক কথা অথবা কর্মের মাধ্যমে হয়, অথবা কথা ও কর্ম উভয়ের মাধ্যমে হয়।

কথার মাধ্যমে বিবরণের উদাহরণ: যাকাতের নিসাব ও পরিমাণ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া। যেমন তিনি বলেছেন:

فيما سقت السماء العشر

বৃষ্টির পানিতে যে শষ্য উৎপন্ন হয়, তাতে এক দশমাংশ ওশর দিতে হবে।’’

এটি হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত مجمل বাণীর بيان বা ব্যাখ্যা।

وَآَتُوا الزَّكَاةَ

তোমরা যাকাত প্রদান করো (সূরা আল-বাক্বারা ২:৪৩)।

কর্মের মাধ্যমে বিবরণ দেওয়ার উদাহরণ: উম্মতের সামনে হজ্জের কার্যক্রম সম্পন্ন করা; এটি আল্লাহর নিচের مجمل (ব্যাখ্যাহীন) আয়াতের ব্যাখ্যা। আল্লাহর বাণী:

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا

‘‘এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার।’’

অনুরূপভা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক صلوة الكسوف বা সূর্য গ্রহণের ছালাত যথা-নিয়মে সম্পন্ন করা। এটি বাস্তবে তার নিম্নোক্ত مجمل (ব্যাখ্যাহীন) বাণীর ব্যাখ্যা। তিনি বলেছেন:

فاذا رايتم منها شيئا فصلوا

‘‘যখন তোমরা তাতে কোন কিছু হতে দেখবে, তখন ছালাত আদায় করবে।’’[1]

কথা ও কর্ম উভয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যার উদাহরণ: ছ্বলাত আদায়ের পদ্ধতির বিবরণ। কেননা, এ বিবরণ কথার মাধ্যমে হয়েছিলো। যেমন: ছ্বালাতে ভুলকারী সম্পর্কে হাদীছে রসূল বলেছেন,

إذا قمتم الی الصلاة فأسبغ الوضوء ثم استقبل القبلة فكبر...

‘যখন তুমি ছবলাতে দাড়াতে ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন পরিপূর্ণ ভাবে ওযু করবে। তারপর কেবলা মুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলবে।[2]আবার তার কর্মের মাধ্যমেও এর বিবরণ হয়েছিল। যেমন: সাহল বিন সা'দের হাদীছে রয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়ালেন। অতঃপর তাকবীর দিলেন এবং তার পেছনে লোকজনও তাকবীর দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি মিম্বারের উপর ছিলেন... ’ অত্র হাদীছে আরো আছে, তারপর তিনি লোকদের অভিমূখী হলেন এবং বললেন: আমি এ রকম করলাম, যাতে তোমরা আমার অনুসরণ করতে পারো এবং আমার ছ্বলাত তোমরা শিখে নিতে পারো।

[1]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৫৭৮৫, ছ্বহীহ মুসলিম হা/৯১১।

[2]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৬২৫১, ছ্বহীহ মুসলিম হা/৩৯৭, ইবনে মাজাহ হা/১০৬০।