উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) নিষেধ (النَّهْي) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
النهي এর ছীগার মাধ্যমে যে দাবি পেশ করা হয় (ما تقتضيه صيغة النهي)

النهي এর ছীগার মাধ্যমে নিষিদ্ধ বিষয় হারাম এবং কোন কিছু অন্যায় হিসাবে গণ্য হওয়ার দাবি পেশ করা হয়। এ ছীগা ব্যবহৃত হওয়ার মাধ্যমে হারাম সাব্যস্ত করণের উদাহরণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا) [الحشر: من الآية 7

রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো (সূরা আল-হাশর ৫৯:৭)।

বুঝা যায়, তিনি যা কিছু নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকা ওয়াজীব সাব্যস্ত হয়। সর্বপরি নিষিদ্ধ কর্মটি হারাম হওয়াই উদ্দেশ্যে। নিষিদ্ধ কর্ম অন্যায় গণ্য হওয়ার উদাহরণ: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد

কেউ এমন কোন কাজ করলো যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত।[1]

‘নিষিদ্ধ বিষয়’ কি বাতিল হবে নাকি হারাম হওয়া সত্ত্বেও ছহীহ হয়ে যাবে? এ ব্যাপারে হাম্বলী মাযহাবের মূলনীতি নিম্নে তুলে ধরা হলো:

নিষেধাজ্ঞা আরোপিত নিষিদ্ধ বিষয়ের সত্ত্বা বা শর্তের দিকে ফিরে যাবে। এমতাবস্থায় কর্মটি বাতিল গণ্য হবে।
নিষেধাজ্ঞা বহিরাগত কোন বিষয়ের দিকে ফিরে যাবে, যা নিষিদ্ধ বিষয়ের সত্ত্বা বা শর্তের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে না। এমতাস্থায় কর্মটি বাতিল গণ্য হবে না।

ইবাদতের ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিষিদ্ধ বিষয়ের সত্ত্বার দিকে ফিরে যায়, এর দৃষ্টান্ত হলো: দু’ঈদের দিন সিয়াম পালনে নিষেধাজ্ঞা।

পারস্পারিক লেন-দেনের ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিষিদ্ধ বিষয়ের সত্ত্বার দিকে ফিরে যায়, এর দৃষ্টান্ত হলো: যার উপর জুম‘আর ছ্বলাত ফরজ এমন ব্যক্তিকে জুম‘আর দিন দ্বিতীয় আজানের পর ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করা।

ইবাদতের ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিষিদ্ধ বিষয়ের শর্তের দিকে ফিরে যায় এর দৃষ্টান্ত হলো: পুরুষকে রেশমের কাপড় পরিধান করার নিষেধাজ্ঞা। ছ্বলাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা। সুতরাং কেউ যখন নিষিদ্ধ কাপড় পরিধান করে লজ্জাস্থান ঢাকবে, নিষেধাজ্ঞা ছ্বালাতের শর্তের দিকে ফিরে যাওয়ার কারণে, ছ্বলাত শুদ্ধ হবে না।[2]

পারস্পরিক লেন-দেনের ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিষিদ্ধ বিষয়ের শর্তের দিকে ফিরে যায়- এর দৃষ্টান্ত হলো: গর্ভস্থিত প্রাণী ক্রয়-বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা। যেহেতু বিক্রয় শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, বিক্রয়যোগ্য পণ্য সম্পর্কে জানা। কাজেই কেউ যখন গর্ভস্থিত প্রাণী বিক্রয় করবে, নিষেধাজ্ঞা শর্তের দিকে ফিরে যাওয়ার কারণে বিক্রয়টি শুদ্ধ হবে না।

ইবাদতের ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ বহিরাগত কোন বিষয়ের দিকে ফিরে যায়- এর দৃষ্টান্ত হলো: পুরুষকে রেশমের পাগড়ী পরিধান করার নিষেধাজ্ঞা। সুতরাং কেউ যদি রেশমের কাপড় পরিধান করে ছ্বলাত আদায় করে, তাহলে তার ছ্বলাত বাতিল হবে না। কেননা, এখানে নিষেধাজ্ঞা ছ্বালাতের সত্ত্বা বা শর্তের দিকে ফিরে যায় নি।

পারস্পারিক লেন-দেনের ক্ষেত্রে ‘নিষেধাজ্ঞা’ বহিরাগত কোন বিষয়ের দিকে ফিরে যায়- এর দৃষ্টান্ত হলো: ধোঁকা দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি ধোঁকা দিয়ে কোন কিছু বিক্রয় করে, তাহলে তার বিক্রয়টি বাতিল হবে না। কারণ নিষেধাজ্ঞাটি ক্রয়-বিক্রয়ের সত্ত্বা বা শর্তের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়নি।

ভিন্ন দলীলের দাবির কারণে نهي ‘হারাম সাব্যস্ত’ করার অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। তন্মধ্যে অন্যতম হলো:

মাকরূহ: উসূলবিদগণ এর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিম্নোক্ত বাণীর মাধ্যমে। তিনি বলেছেন

لا يمسنَّ أحدكم ذكره بيمينه وهو يبول

‘তোমাদের কেউ যেন পেশাব করা অবস্থায় তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে।[3]’

অধিকাংশ বিদ্বান বলেছেন, এখানে নিষেধাজ্ঞা হলো মাকরূহ এর জন্য প্রযোজ্য। কেননা, লজ্জাস্থান মানুষেরই একটি অঙ্গ বিশেষ। এখানে নিষেধ করার তাৎপর্য হলো, ডান হাতকে তা হতে বিরত রাখা।

الإرشاد : নির্দেশনা দেওয়ার জন্য: যেমন: মুআ‘য রাযিয়াল্লাহু আনহুর উদ্দেশ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

لا تدعن أن تقول دبر كل صلاة: اللهم أعنّي على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك

প্রত্যেক ছ্বালাতের পর এ দু‘আ বলা অবশ্যই ছেড়ে দিবে না। দু‘আটি হলো; - اللهم أعنّي على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك হে আল্লাহ, আমাকে তোমার যিকর, তোমার শুকরিয়া ও ভালো ইবাদত করতে সহযোগিতা করো।[4]

يدخل في الخطاب بالأمر والنهي

أمر ও نهي দ্বারা সম্বোধনে কারা অন্তর্ভুক্ত হবে?

الذي يدخل في الخطاب بالأمر والنهي «هو» المكلف، وهو البالغ العاقل

أمر ও نهي দ্বারা সম্বোধনের মধ্যে মুকাল্লাফ তথা শরীয়তের দায়িত্ব বর্তায় এমন ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হবে। আর মুকাল্লাফ বলতে প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানবান ব্যক্তি।

আমাদের ভাষ্য: البالغ (প্রাপ্ত বয়স্ক) শব্দটি দ্বারা শিশু বিলুপ্ত হয়েছে। তাই শিশু আদেশ-নিষেধের দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দায়িত্বপ্রাপ্তির সমান হবে না। তবে ভালো মন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হওয়ার পর আনুগত্যমূলক কাজের প্রশিক্ষণ হিসেবে তাকে ইবাদত পালনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে এবং সীমালঙ্ঘন মূলক কাজে তাকে বাধা দেওয়া হবে যাতে অন্যায় থেকে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে।

আমাদের বক্তব্য: العاقل (জ্ঞানবান) দ্বারা মস্তিস্ক বিকৃত হয়েছে এমন ব্যক্তি বিলুপ্ত হয়েছে। সুতরাং পাগল আদেশ নিষেধের দায়িত্ব প্রাপ্ত হবে না। তবে অন্যের উপর সীমালঙ্ঘন করা থেকে এবং ধ্বংসাত্নক কাজ হতে তাকে বাধা দেওয়া হবে। যদি সে কোন আদিষ্ট বিষয় পালন করে, তবে তাতে আনুগত্যের উদ্দেশ্য না থাকার কারণে শুদ্ধ হবে না।

তবে শিশু ও পাগলের সম্পদে যাকাত ফরয হওয়া ও ‘অর্থনৈতিক অধিকার’ উক্ত বিধানের অন্তর্ভূক্ত হবে না। কারণ এগুলির আবশ্যকতাসুনির্দিষ্ট কিছু কারণের সাথে যুক্ত। যখনই সেই কারণ গুলি পাওয়া যাবে, তখনই হুকুম সাব্যস্ত হবে। এতএব এগুলিতে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো ‘কারণ’; ‘ব্যক্তি’ নয়।

আদেশ নিষেধের দায়িত্ব মুসলিম, কাফির সবার উপর বর্তায়। কিন্তু কাফের ব্যক্তির জন্য কুফরী অবস্থায় আদিষ্ট বিষয় পালন করা শুদ্ধ নয়। আল্লাহর বাণী:

وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِه) [التوبة: من الآية 54]

তাদের অর্থ সাহায্যে নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করে (সূরা আত-তাওবাহ ৯:৫৩)।

তবে কাফের অবস্থায় ছুটে যাওয়া আমল মুসলিম হওয়ার পর কাযা করারও নির্দেশ দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী:

قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ

তুমি কাফিরদেরকে বলে দাও, তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে পূর্বে যা কিছু ঘটে গেছে তা ক্ষমা করা হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৩৮)।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

أما علمت يا عمرو أن الإسلام يهدم ما كان قبله

হে আমর, তুমি কি জানো না, নিশ্চয় ইসলাম পূর্বের সমস্ত গোনাহকে মিটিয়ে দেয়।’[5] আর কুফরী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে শরীয়ত নির্দেশিত বিষয় পালন করা ছেড়ে দেওয়ার কারণে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তাদের জবাব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

(مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ) [المدثر:42] (قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ) [المدثر:43] (وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ) [المدثر:44] (وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ) [المدثر:45] (وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ) [المدثر:46] (حَتَّى أَتَانَا

জান্নাতীরা বলবে, তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা ছ্বলাত আদায়কারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না, অভাব গ্রস্থকে খাদ্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম। আমাদের নিকট মৃত্যু আসা পর্যন্ত (সূরা আল-মুদ্দাছি্ছর ৭৪: ৪৩,৪৪,৪৫,৪৬,৪৭)।

موانع التكليف -শরীয়তের দায়িত্ব আরোপিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সমূহ:

কারো উপর শরীয়তের দায়িত্ব আরোপিত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো: অজ্ঞতা, ভুলে যাওয়া, বাধ্য করা প্রভৃতি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

إن الله تجاوز عن أمتي الخطأ والنسيان وما استكرهوا عليه

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি ও বলপূর্বক যা করিয়ে নেওয়া হয়, তা ক্ষমা করে দিয়েছেন।’[6] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্কী। হাদীছটির বিশুদ্ধতা প্রমাণে কুরআন ও হাদীছে আরো অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে।

جهل - অজ্ঞতা: جهل হলো না জানা। সুতরাং মুকাল্লাফ ব্যক্তি যখন কোন বিষয়ের হারাম হওয়া সম্পর্কে না জেনে হারাম কাজটি করে ফেলে, তাহলে তার উপর কোন শাস্তি ধার্য হবে না। যেমন: কোন ব্যক্তি ছ্বালাতে কথা বলা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি না জেনে কথা বললো। অনুরূপ ভাবে যদি কোন ব্যক্তি ওয়াজিব কর্ম ছেড়ে দেয়, তার ওয়াজিব সম্পর্কে না জানার কারণে, তবে উক্ত ওয়াজিব কর্ম পালন করার নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে থাকলে, ঐ ব্যক্তিকে তা ক্বাযা আদায় করতে হবে না। দলীল: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছ্বালাতে ভুলকারী ব্যক্তিকে অতীতের ছ্বলাত ক্বাযা করার নির্দেশ দেননি। বরং তাকে শুধু বর্তমান ছ্বলাত শারঈ পন্থায় সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

النسيان- ভুলে যাওয়া: النسيان হলো কোন জ্ঞাত বিষয় অন্তরে স্মরণ করতে না পারা।[7] এতএব কোন ব্যক্তি ভুল বশতঃ কোন কাজ করলে, তার উপর কোন কিছুই বর্তাবে না। যেমন: কোন ব্যক্তি ভুলবশতঃ ছিয়াম অবস্থায় কিছু খেয়ে নিলো। অনুরূপ ভাবে কোন ব্যক্তি কোন ওয়াজিব কাজ ভুলবশতঃ ছেড়ে দিলো, তাহলে ভুল অবস্থায় তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। তবে তা স্মরণ হওয়া মাত্র তাকে তা আদায় করতে হবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

من نسي صلاة فليصلها إذا ذكرها

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি কোন ছ্বলাত আদায় করতে ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র পড়ে নেয়।’[8]

الإكراه : إكراه হলো কোন ব্যক্তিকে এমন কিছু করতে বাধ্য করা, যা সে আদৌ করতে চায় না। এতএব কোন ব্যক্তিকে কোন হারাম কাজ করতে বাধ্য করা হলে, তার উপর কোন কিছুই বর্তাবে না। যেমন: কোন ব্যক্তিকে যদি কুফরী করতে বাধ্য করা হয়, অথচ তার অন্তর ঈমানের সাথেই প্রশান্ত আছে। অনুরূপ ভাবে কোন ব্যক্তিকে যদি ওয়াজিব কাজ পালন না করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে বাধ্যগত অবস্থায় তার উপর কোন কিছুই বর্তাবে না। তবে বাধ্যগত অবস্থা দুর হয়ে গেলে, তাকে তা ক্বাযা করতে হবে। যেমন: কোন ব্যক্তিকে ছ্বলাত আদায় না করতে বাধ্য করা হলো, এমনকি তা আদায়ের সময় চলে গেলো, তাহলে তার এই বাধ্যগত অবস্থা দুর হয়ে গেলে, তাকে উক্ত ছ্বলাত ক্বাযা করতে হবে।

উপরোক্ত প্রতিবন্ধকতাসমূহ কেবল আল্লাহর হক্বের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা, এসব কারণ ক্ষমা ও দয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। এতএব সৃষ্টি জীবের হক্বের ক্ষেত্রে যে দায়িত্ব আদায় করা আবশ্যক, সেক্ষেত্রে হকদার ব্যক্তি তার দাবি ছেড়ে দিতে সম্মত না হলে, উক্ত বিষয়সমূহ প্রতিবন্ধক হিসাবে গণ্য হবে না।[9]

আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

[1]. ছহীহ মুসলিম ১৭১৮।

[2]. কিছু বিদ্বান বলেছেন, হারাম পোষাক পরিধান করে ছ্বলাত আদায় করলে, তার ছ্বলাত হয়ে যাবে। তবে হারাম পোষাক পরিধান করার কারণে সে গোনাহগার হবে। তারা আরো বলেছেন, এতে মূলত নিষেধাজ্ঞাটি শর্তের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কারণ শর্ত হলো, লজ্জাস্থান ঢাকা। যেহেতু ছ্বলাত আদায়কারী লজ্জাস্থান ঢেকেছে, কাজেই তার ছ্বলাত শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদি সরাসরি রেশমের কাপড় পরে ছ্বলাত আদায় করতে নিষেধ করা হতো, তবে নিষেধাজ্ঞাটি শর্তের সাথে সংশ্লিষ্ট হতো। দেখুন: শরহুল মমতি‘ ২/১৫১, আল ইখতিয়ারাত /৪১।

[3]. ছহীহ বুখারী ১৫৩।

[4]. ছ্বহীহ: সুনানে আবূ দাউদ হা/১৫২২, মুসনাদে আহমাদ

[5]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১২১

[6]. ইবনু মাজাহ /২০৪৩, বাইহাক্কী ৬/৮৪, আজালূনী তার ‘কাশফুল খাফা’ (১/৫২৩/১৩৯৩) নামক গ্রন্থে বলেছেন,‘ইমাম নভবী (রহঃ) তাঁর গ্রন্থ ‘আর রওযা’ ও ‘আল-আরবাঈন’ নামক গ্রন্থে হাদীছটিকে হাসান বলেছেন।’

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) তার ‘তুহফাতুত ত্বলিব’ (১/২৭১/১৫৮) নামক গ্রন্থে হাদীছটির সনদ উত্তম বলেছেন।

আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহুল জামে‘ / ১৭৩১।

[7]. অন্তরের বেখেয়াল হয়ে যাওয়া- এভাবে বললে তার অর্থ দাড়ায় মানুষের স্মৃতি বা মেমোরী অন্তরে থাকে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানে এটা প্রমাণিত যে, মানুষের মেমোরী থাকে মস্তিষ্কে। অন্তরের কাজ হলো বুঝা, উপলব্ধি করা, ভালো মন্দ নিরুপণ করা প্রভৃতি। আর মস্তিষ্কের কাজ হলো তা সংরÿন করা। কাজেই نسيان এর সংজ্ঞা এভাবে দিলে আর কোন আপত্তি থাকে না।

النسيان هو الذهول عن شيئ معلوم

অর্থাৎ نسيان হলো কোন জ্ঞাত বা জানা জিনিস ভূলে যাওয়া।

[8]. ছহীহ বুখারী /৫৯৭, ছহীহ মুসলিম /৬৮৪।

[9]. যেমন: কোন ব্যক্তি অন্যের কাপড় নিজের মনে করে পরিধান করলো। অত:পর দেখলো যে, কাপড়টি পুরাতন হয়ে গেছে, ফলে কাপড়টি ছিঁড়ে ফেললো। সুতরাং অন্যের কাপড় জানার পর কাপড় ওয়ালা দাবি না ছাড়লে, তাকে উক্ত কাপড়ের জরিমানা দিতে হবে।