দ্বীনের মূল ভিত্তি দু’টি। হক্বের (আল্লাহর) উপর পূর্ণ বিশ্বাস, সৃষ্টির প্রতি পূর্ণ দয়া। হকেবর উপর দৃঢ় বিশ্বাসই (ঈমান) দাঈকে সৃষ্টির মন্দ বিষয় থেকে বিরত রাখবে। আর সৃষ্টির প্রতি পূর্ণ দয়াই দাঈকে সৃষ্টির ক্ষতি করা থেকে প্রতিহত করবে। ফলে, ঈমান শক্তিশালী করার মাধ্যমে মানুষের সকল ধরণের ক্ষতি করা থেকে আমরা বিরত থাকবো। অনুরূপভাবে, মন্দ লোকদের প্রতি অতি দয়ার কারণে তারাও দাঈর পক্ষ থেকে নিরাপদে থাকবে। এভাবে হেদায়াত ও কল্যাণ অর্জিত হবে, আর দ্বীনের প্রতি মানুষের হৃদয় ঝুঁকে পড়বে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا (3)) [الطلاق: 3]

‘আর যে আল্লাহরউপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়-সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন’ (সূরা আত-ত্বলাক: ৩)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ (67)) [المائدة: 67]

‘হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও এবং যদি তুমি না কর, তবে তুমি তাঁর রিছালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহকাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না’ (সূরা আল-মায়েদা: ৬৭)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন::

(وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ) ... [الأنبياء: 107]

‘আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবেই প্রেরণ করেছি’(সূরা আল-আম্বিয়া:১০৭)।

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِاللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهما أنَّهُ غَزَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قِبَلَ نَجْدٍ، فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَفَلَ مَعَهُ، فَأدْرَكَتْهُمُ القَائِلَةُ فِي وَادٍ كَثِيرِ العِضَاهِ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَتَفَرَّقَ النَّاسُ فِي العِضَاهِ يَسْتَظِلُّونَ بِالشَّجَرِ، وَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَحْتَ سَمُرَةٍ فَعَلَّقَ بِهَا سَيْفَهُ. قال جَابِرٌ: فَنِمْنَا نَوْمَةً، ثُمَّ إِذَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدْعُونَا فَجِئْنَاهُ، فَإِذَا عِنْدَهُ أعْرَابِيٌّ جَالِسٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ هَذَا اخْتَرَطَ سَيْفِي وَأنَا نَائِمٌ، فَاسْتَيْقَظْتُ وَهُوَ فِي يَدِهِ صَلْتاً، فَقَالَ لِي: مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي؟ قُلْتُ: اللهُ، فَهَا هُوَ ذَا جَالِسٌ». ثُمَّ لَمْ يُعَاقِبْهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (4135) , واللفظ له، ومسلم برقم (843)

৪। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি নাজদ এলাকায় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। পথিমধ্যে কাটা গাছ ভরা এক উপত্যকায় মধ্যাহ্নের সময় তাদের ভীষণ গরম অনুভূত হলো। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখানেই অবতরণ করলেন। লোকজন ছায়াদার বৃক্ষের খোঁজে কাঁটাবনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান করে তরবারিখানা গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন। জাবের (রা.) বলেন, সবেমাত্র আমরা নিদ্রা গিয়েছি। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ডাকতে লাগলেন। আমরা তার কাছে উপস্থিত হলাম। তখন তার কাছে এক বেদুঈন বসেছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি নিদ্রিত অবস্থায় ছিলাম, এমতাবস্থায় সে আমার তরবারিখানা হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার উপর উচিয়ে ধরলে আমি জেগে যাই। তখন সে আমাকে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? আমি বললাম, আল্লাহ। দেখ না, এ-ই তো সে বসে আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না (ছহীহ বুখারী, হা/৪১৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৪৩)।

রবের প্রতি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পূর্ণ বিশ্বাসই আগন্তুককে রাসূলের ক্ষতি করা থেকে বিরত রাখে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দয়াই আগন্তুককে হত্যা করা থেকে বিরত রাখে। আর এ দয়ার কারণেই আগন্তুত ও তার দলবল হেদায়াত লাভ করেন।