কর্মভেদে মানুষ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। তাদের মধ্যে প্রথম প্রকার হচ্ছে, কাফের-যারা দুনিয়ার চেষ্টায় মৃত্যু পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে, মুমিন- যারা মৃত্যু পর্যন্ত আখেরাতের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। আখেরাতের চেষ্টায় নিয়োজিত মুমিনরা আবার দু’প্রকার:

প্রথম প্রকারঃ এ প্রকার মুমিন শুধুমাত্র ইবাদত নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে, মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর তাদের আমলনামাও বন্ধ হয়ে যায়।

দ্বিতীয় প্রকারঃ এ প্রকার মুমিন শুধু ইবাদত নিয়ে ব্যস্ত থাকে না; বরং তারা আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করে, দ্বীন শিক্ষা করে ও অন্যকে দ্বীন শিক্ষা দেয়, সৃষ্টির প্রতি সদয় হয়। এ শ্রেণীর মুমিন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং মৃত্যুর পরও তাদের আমল চালু থাকে। আর প্রত্যহ তাদের আমলনামা নেকী দ্বারা পূর্ণ হতে থাকে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَوُونَ عِنْدَ اللَّهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (19) الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ (20) يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ (21) خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ (22)) ... [التوبة: 19 - 22]

‘তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো ও মসজিদুল হারাম আবাদ করাকে ঐ ব্যক্তির মত বিবেচনা কর, যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারা আল্লাহর নিকট বরাবর নয়। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। (১৯) যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তারা বড়ই মর্যাদাবান আর তারাই সফলকাম। (২০) তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজের পক্ষ হতে সুসংবাদ দিচ্ছেন রহমত ও সন্তুষ্টির এবং এমন জান্নাতসমূহের, যাতে রয়েছে তাদের জন্য স্থায়ী নেয়ামত। (২১) তথায় তারা থাকবে চিরকাল। নিশ্চয় আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার’ (সূরা আত-তাওবা: ১৯-২২)।

وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إلَى النّبِيّ - صلى الله عليه وسلم -فَقَالَ: إنّي أُبْدِعَ بِي فَاحْمِلْنِي، فَقَالَ: «مَا عِنْدِي» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ الله أَنَا أَدُلّهُ عَلَىَ مَنْ يَحْمِلُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «مَنْ دَلّ علىَ خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ» أخرجه مسلم برقم (1893)

২। আবু মাস‘ঊদ আনছারী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক লোক নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমার বাহন নষ্ট হয়ে গেছে, আপনি আমাকে একটি বাহন দিন। তিনি বললেন: আমার কাছে তো তা নেই। সে সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এমন এক ব্যক্তির সন্ধান তাকে দিচ্ছি, যে তাকে বাহন দিতে পারবে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: যে ব্যক্তি কোন ভাল আমলের পথ প্রদর্শন করে, তার জন্য আমলকারীর সমান ছওয়াব রয়েছে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৯)।

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئاً». أخرجه مسلم برقم (2674)

৩। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হেদায়াতের দিকে ডাকে, তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকে, তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকাও হবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪)।