ঢ. আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের পর্যায় (مراحل الدعوة إلى الله)

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দা‘ওয়াতী কাজের তিনটি পর্যায় ছিলঃ

প্রথম: দ্বীন প্রচার ও তা পৌঁছে দেয়া (مرحلة النشر والبلاغ):

এ পর্যায়ে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর একত্ব ও ঈমান আনয়নের দা‘ওয়াত দিয়ে ছিলেন এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও মূর্তিপূজা ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন। আর অন্যান্য নবী ও তাদের জাতির কিছছা-কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন।আখেরাতের অবস্থা ও জান্নাত-জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিলেন। উত্তম চরিত্র ও আমলের ফযীলত বর্ণনা করে দা‘ওয়াত দিয়েছিলেন।

মক্কায় এ পর্যায়ের দা‘ওয়াতের সূচনা হয়েছিল। আর মদীনায় তা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তারপর তাঁর ছাহাবীছাহাবীগণ এপথ ধরেই চলেছিলেন।

দ্বিতীয়: তৈরি ও সংগঠিত করা (مرحلة البناء والتكوين):

এ পর্যায়ে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসলাম গ্রহণকারী ছাহাবীছাহাবীগণের বিশেষ তত্ত্বাবধান করেছিলেন। মক্কায় দারুল আরকামে তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি ঈমান ও উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে তাদেরকে সংশোধন করেছিলেন। এভাবে এক পর্যায়ে দ্বীনের উপর আমল করার এবং সেদিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার প্রস্ত্ততি তাদের মধ্যে জন্ম নেয়।যখন তাদের প্রস্ত্ততি সম্পূর্ণ হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন।

তৃতীয়: খিলাফত ও রাজত্ব/কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা (مرحلة الاستخلاف والتمكين):

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার ছাহাবীগণ মদীনায় হিজরত করার পর এ পর্যায়টি বাস্তবায়িত হয়। শরী‘আতের সকল বিধি-বিধান মদীনায় অবতীর্ণ হয় যখন ছাহাবীগণের ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর সকল আদেশ পালনে প্রস্ত্তত ছিলেন। ঈমান, তাক্বওয়া ও সৎ আমল যখন তাদের মধ্যে গ্রথিত হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা ছাহাবীদেরকে দুনিয়ায় কর্তৃত্ব দান করেন। মদীনায় ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয় ও দ্বীন সম্প্রসারিত হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিনিধি ও আমীরদেরকে বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করেন, যারা আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতদেন এবং ইসলামের বিধান প্রতিষ্ঠা করেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেন।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا (46) وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُمْ مِنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا (47) وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ وَدَعْ أَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلًا (48)) [الأحزاب: 45 - 48]

‘হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে (৪৫) এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসাবে। (৪৬) আর তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে বিরাট অনুগ্রহ। (৪৭) আর তুমি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না এবং তাদের নির্যাতন উপেক্ষা কর ওআল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর।তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আল-আহযাব: ৪৫-৪৮)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (100)) [التوبة: 100]

‘আর মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে স্থায়ী থাকবে। এটাই মহাসাফল্য’(সূরা আত-তাওবা: ১০০)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ (55)) [النور: 55]

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে,আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক’ (সূরা আন-নূর: ৫৫)।