ক. সৃষ্টিজগতের চিরন্তন রীতি (السنن الكونية)

আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমতাবলে জগৎসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার রীতি অনুযায়ী তা পরিচালনাও করেন, আর তার এ রীতি দ্বারাই তার ক্ষমতাকে গোপন করেন। মহাপবিত্র আল্লাহ তা‘আলা এ মহাজগত সৃষ্টি করে তাতে প্রতিটি সৃষ্টির জন্য নিয়ম পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন, যার উপর সৃষ্টি জগত পরিচালিত হয়। আর এর মাধ্যমে শ্রবণ, আনুগত্য, উপকারিতা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। অতঃপর চন্দ্র, সূর্য, দিন, রাত্রি, উদ্ভিদ, প্রাণি জগত, বাতাস, পানি, সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত, তারকারাজি, মেঘমালা এরূপ প্রতিটি সৃষ্টির জন্যই সুনির্দিষ্ট নিয়ম-পদ্ধতি রয়েছে, যার উপর এগুলো পরিচালিত হয় এবং আল্লাহর ইবাদত করে। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ছাড়া এগুলো পরিবর্তন হয় না।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ (36) وَآيَةٌ لَهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُمْ مُظْلِمُونَ (37) وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ (38) وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ (39) لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ (40)﴾ [يس: 36 - 40]

‘পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন সকল জোড়া জোড়া, যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ এবং তাদের (মানুষের) নিজেদের মধ্য থেকেও (পুরুষ ও নারী) আর সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না (৩৬) আর রাত তাদের জন্য একটি নিদর্শন; আমরা তা থেকে দিনকে সরিয়ে নেই। ফলে তখনই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় (৩৭) আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট পথে, এটা মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহ)-র নির্ধারণ (৩৮) আর চাঁদের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি মানযিলসমূহ, অবশেষে সেটি খেজুরের শুষ্ক পুরাতন শাখার মত হয়ে যায় (৩৯) সূর্যের জন্য সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাতের জন্য সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা, আর প্রত্যেকেই কক্ষ পথে সন্তরণ করে’ (৪০) (সূরা ইয়াসীন ৩৬: ৩৬-৪০)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ (18) ﴾ .. [الحج: 18]

‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করে যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীব-জন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন’ (সূরা আল-হাজ্জ: ১৮)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُبِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا (44)) [الإسراء: 44]

‘সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে, সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে না; কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না। নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ (সূরা বনী ইসরাঈল: ৪৪)।

৪। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا (23)) [الفتح: 23]

‘তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে, তাদের ব্যাপারে এটি আল্লাহর নিয়ম; আর তুমি আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না’ (সূরা আল-ফাতহ: ২৩)।