হক্বকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করে স্পষ্ট দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

بَلْ كَذَّبُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ فَهُمْ فِي أَمْرٍ مَرِيجٍ

বরং তারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, যখনই তাদের কাছে সত্য এসেছে। অতএব তারা সংশয়যুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে (সূরা ক্বাফ ৫০:৫)।

............................................

ব্যাখ্যা: এখানে দ্বন্দ্ব বলতে হক্ববিহীন কথা-বার্তা নিয়ে বিবাদ ও মতানৈক্য করা। যে হক্ব পরিত্যাগ করে, সে মিথ্যা কথা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বিবাদে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষায় পড়ে। কেননা, বিভিন্নভাবে ভ্রষ্টতার শাখা-প্রশাখা বিস্তারলাভ করে, আর শাখার কোন পরিসীমা নেই। পক্ষান্তরে, হক্ব হচ্ছে একটিই যার ভিন্নতা নেই এবং মতানৈক্যও নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلالُ) [يونس: 32]

অতএব, তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব। অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? অতএব কোথায় তোমাদেরকে ফেরানো হচ্ছে? (সূরা ইউনূছ ১০:৩২)।

যে হক্ব বর্জন করে সে ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়। আর ভ্রষ্টতা হলো গোলকধাঁধা; এ থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ভ্রষ্টরা নিজেদের মাঝে বিভিন্ন মতানৈক্যে লিপ্ত থাকে। তাদের প্রত্যেকেই ভিন্ন মতের উপর বহাল থাকে। তাদের নিকট হেদায়াত নেই; যার উপর তারা পরিচালিত হবে। কেবল তারা বিপথেই পরিচালিত হয়। কখনো বলে এটা ঠিক আবার কখনো বলে ঐটাই ঠিক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

بَلْ كَذَّبُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ فَهُمْ فِي أَمْرٍمَرِيجٍ

বরং তারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, যখনই তাদের কাছে সত্য এসেছে। অতএব তারা সংশয়যুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে (সূরা ক্বাফ ৫০:৫)।

অর্থাৎ ভ্রষ্টতায় ডুবে থাকে। তাই বাতিলপন্থীরা নিজেদের মাঝে মতানৈক্যে লিপ্ত হয়। তারা পরস্পর শত্রুতা করে, একে অপরকে ভ্রান্ত পথ দেখায় এবং পরস্পরকে কাফির বলে আখ্যা দেয়।

পক্ষান্তরে, হক্বপন্থীরা হক্ব আঁকড়ে ধরে, নিজেদের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি করে না। ইজতেহাদের ব্যাপারে যদিও মতানৈক্য হয়; তবুও পরস্পরে শত্রুতা করে না এবং বিচ্ছিন্ন হয় না। হক্ব স্পষ্ট হলে তারা সেদিকেই প্রত্যাবর্তন করে এবং নিজেদের কথা বর্জন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ) [الشورى: 10]

যে বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর না কেন, তার ফায়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই ওপর আমি তাওয়াক্কুল করি এবং তাঁরই অভিমুখী হই (সূরা আশ-শুরা ৪২:১০)।

(فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ) [النساء: 59]

কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর (সূরা নিসা ৪:৫৯)।

চার ইমাম ও ফকীহগণের মাঝে মতানৈক্য হলেও তাদের কেউ কাউকে ভ্রষ্ট ও কাফির বলে আখ্যা দেয়নি। তাদের প্রত্যেকের দলীল অনুযায়ী তারা আমল করে। আর দলীল বিরোধী কোন বিষয় প্রকাশ পেলে তারা হক্বের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

অপরদিকে ভ্রষ্টরা প্রত্যাবর্তনের সুযোগ কাজে লাগায় না। তাদের প্রত্যেকে কু-প্রবৃত্তির দিকেই ফিরে যায়। আর কু-প্রবৃত্তি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।