শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৯৬. ভাল কাজ করে অহংকার করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান ১ টি

বাইতুল্লাহর কর্তৃত্ব গ্রহণ করে অহংকার করা। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভৎর্সনা করে বলেন,

(مُسْتَكْبِرِينَ بِهِ سَامِراً تَهْجُرُونَ) [المؤمنون:67]

এর উপর অহঙ্কারবশে, রাত জেগে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে করতে (সূরা মূ‘মিনূন ২৩:৬৭)।

.......................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী সমস্যা হলো হারাম এলাকার অধিবাসী হয়ে পবিত্র কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান, কাবা ঘরের দিকে আগমনকারীদের সেবা-যত্ন ও হাজীদের পানি পান করানোর কারণে জাহিলরা অহংকার করতো।

(مُسْتَكْبِرِينَ بِهِ) [المؤمنون: 67]

এর উপর অহঙ্কারবশে (সূরা মূ‘মিনূন ২৩:৬৭)।

অর্থাৎ বাইতুল্লাহর কর্তৃত্ব গ্রহণ করা, পবিত্র কাবা শরীফ ও তার দিকে আগমনকারীদের খেদমত করার মাধ্যমে জাহিলরা অন্যান্য আরববাসীর উপর অহংকার করতো। এসবই জাহিলী কর্ম। কেননা, পবিত্র কাবার খেদমত করা ইবাদত। ইবাদতের মাধ্যমে অহংকার করা মানুষের জন্য বৈধ নয়। কারণ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ হয়, মানুষের প্রশংসা লাভ করা উদ্দেশ্যে নয়। বরং এসব ভাল কাজের সুযোগ লাভের জন্য আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করতে হয়। অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতে হয় না। নাবী-রসূল ও আসমানী কিতাব অনুসরণের পরিবর্তে জাহিলরা কাবার খেদমতের মাধ্যমে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতো। তারা ধারণা করতো যে, কিতাব ও নাবী-রসূলের অনুসরণের চেয়ে কাবা কেন্দ্রীক এসব আমলই তাদের জন্য যথেষ্ট।

এ কারণে জাহিলরা নিন্দনীয়; তারা কিতাব অনুসরণের পরিবর্তে কাবা ঘরের খেদমত করে পূণ্য অর্জন করতে চাইতো। তারা ধারণা করতো যে, এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট, মূলতঃ তা জাহিলী কর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لا يَسْتَوُونَ عِنْدَ اللَّهِ) [التوبة: 19]

তোমরা কি হাজীদের পানি পান করান ও মাসজিদুল হারাম আবাদ করাকে ঐ ব্যক্তির মত বিবেচনা কর, যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারা আল্লাহর নিকট বরাবর নয় (সূরা আত-তাওবা ৯:১৯)।

তবে হ্যাঁ, হাজীদের পানি পান করানো, মসজিদে হারাম আবাদ করা হচ্ছে সৎ আমল। কিন্তু এ কাজের মাধ্যমে অহংকার করা যাবে না। আর ধারণা করা যাবে না যে, এটাই যথেষ্ট। বরং অন্যান্য সৎ আমল করাও আবশ্যক, যা হাজীদের পানি পান করানো ও মসজিদে হারাম আবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা (الجهاد في سبيل الله), আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা (والإيمان بالله), হিজরত করা (والهجرة) ও সৎকাজ করা (وأعمال جليلة)।

মানুষ কোন সৎ আমলকে যথেষ্ট মনে করে বসে থাকতে পারে না। বিশেষত কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের চেয়ে অন্য আমল যথেষ্ট নয়। বর্তমানে যারা ধারণা করে যে, মক্কা মদিনায় বসবাস করা আমলের চেয়ে যথেষ্ট, তাদের কেউ বলে, হারাম এলাকায় ঘুমন্ত ব্যক্তি অন্য এলাকায় দন্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে ভাল। এটাই শয়তানের ধোঁকা।