ফাসিক আলিম ও মুর্খ ইবাদতকারীদের অনুসরণ করা

আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী:

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيراً مِنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ) [التوبة: 34]

হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় পন্ডিতগণ ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাহে খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও (সূরা আত-তাওবা ৯:৩৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(لا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلا تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيراً وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ) [المائدة: 77]

বল, হে কিতাবীরা, সত্য ছাড়া তোমরা তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না এবং এমন সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সোজা পথ বিচ্যুত হয়েছে (সূরা আল-মায়েদা ৫:৭৭ )।

.........................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী বিষয়সমূহ: আলেমদের পাপাচারীতার মাধ্যমে দলীল পেশ করা। ফাসেক হলো জ্ঞান ও আমলগত দিক থেকে যে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যায়। ফাসেক আলেম হচ্ছে যারা জ্ঞানানুযায়ী আমল করে না অথবা আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে, যদিও জানে তারাই মিথ্যাবাদী। নিজেদের খেয়ালখুশি ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের জন্য তারা আলেমের বেশ ধারণ করে, মানুষ তাদের বিশ্বাস করে। আর ইলম-জ্ঞান ছাড়া আমল করাই হচ্ছে ইবাদতকারীদের পাপাচারীতা। মানুষ ইবাদতকারীদের বিশ্বাস করে বলে থাকে তারাতো নেকলোক।

আলেম ও ইবাদতকারীর দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না যতক্ষণ না তাদের প্রত্যেকে সঠিক দীনে বহাল থাকে। ইয়াহুদী খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيراً مِنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ) [التوبة: 34]

হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় পন্ডিতগণ ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় (সূরা আত-তাওবা ৯:৩৪)।

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِنْ دُونِ اللَّهِ

তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে (সূরা আত-তাওবা ৯:৩১)।

তারা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম সাব্যস্ত করে, অতঃপর তার অনুসরণ করে। একারণে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়াই তারা নিজেদেরকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করেছে। এ থেকে আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

হালাল ও হারাম নির্ধারণ করা আল্লাহরই অধিকার। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে হারাম অথবা হালাল নির্ধারণ করার অধিকার কারো নেই। তাতে মানুষ খুশি হয় ও তাল মিলিয়ে চলে। বর্তমানেও মানুষ শরী‘আতের পরিবর্তন করছে। মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ও মানুষকে খুশি করার জন্য অনুমান করে হারামকে হালাল করা হচ্ছে। তারা ফন্দি তালাশ করে অনুমোদন চায় অথবা আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্বার্থেই হালাল ও হারাম নির্ধারণ করেন। (দীনের পরিবর্তনকারী) ঐসব লোকই পাপাচারী আলেম। আর যে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যায় সে ফাসেক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيراً مِنَ الْأَحْبَارِ

হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় পন্ডিতগণ ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে (সূরা আত-তাওবা ৯:৩৪)।

মু’মিনদেরকে সতর্ক করার জন্য এ আহবান করা হয়েছে। আর আহবার (الأحبار) হলো আলেমগণ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইয়াহুদী আলেমদেরকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর রূহবান (الرهبان) তথা ইবাদতকারীগণ। এটাও অধিকাংশ সময় খ্রিষ্টান ইবাদতকারীগণকে বুঝানো হয়।

খ্রিষ্টানদের মাঝে বৈরাগ্যবাদ রয়েছে। আর ইয়াহুদীদের মাঝে বিদ্বান আছে। যদিও ইয়াহুদীরা অভিশপ্ত ও খ্রিষ্টানরা পথভ্রষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের প্রত্যেক রাক‘আতে আমাদেরকে নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করার নির্দেশ দেন:

(اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ) [الفاتحة :6، 7]

আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে নি’মাত দিয়েছেন (নাবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ, সৎকর্মপরায়ণ): যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয় (সূরা ফাতিহা ১:৬,৭)।

(غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ)

যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি

আর খ্রিষ্টানরা আমল ছাড়াই ইলমের অধিকারী। তারাই হলো পাপাচারী আলেম।

(وَلا الضَّالِّينَ) অর্থাৎ যারা পথভ্রষ্টও নয়

খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য জাতির মাঝে বৈরাগ্যবাদী আছে, যারা দলীল-প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহর ইবাদত করে। তারা কেবল বিদ‘আত, নবাবিষ্কৃত বিষয়ের অনুসরণ ও নির্বুদ্ধিতার বশবর্তী হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিষেধ করেন পাপাচারী আলেম ও পথভ্রষ্ট ইবাদতকারীর নিকট যেতে। আর আদেশ করেন কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসহ হক্ব গ্রহণ করতে।

বর্তমানে কোন বিষয়ে কারো জানার আকাঙ্খা হলে সে বলে, অমুক আমাকে এ ফাতওয়া দিয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহর দলীলের দিকে ভ্রূক্ষেপ করা ছাড়াই এটা করা হয়। তাই ফাতওয়া দানকারীকে যখন বলা হয়, এটা ভুল ফাতওয়া। তখন সে বলে, আমার কি করার আছে! অমুকতো এর উপর অটল থেকেই ফাতওয়া দিয়েছেন।

যখন কোন ফাতওয়া তার ইচ্ছা বিরোধী হয় তখন সে বলে, এ ফাতওয়া ঠিক নয় অথবা এটা কঠিন ফাতওয়া। আর মিথ্যা ও আলেমদের ভুল-ত্রুটি একত্রিত করে তারা কিতাব আকারে মানুষের মাঝে প্রকাশ করে। মানুষের সামনে তাদের অনুমান ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরে বলে, ইসলাম উদার। তোমরা মানুষকে বাধ্য করো না। তাদেরকে যখন বলা হয়, এসব ফাতওয়া কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে পেশ করুন। তখন তারা বলে, এগুলোতো আলেমদের কথা।

কুরআন ও সুন্নাহর চেয়ে কি আলেম বড় হতে পারে! কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে তারা পেশ করে না কেন?! এরূপ কাজ কু-প্রবৃত্তির অনুসারীরাই করতে পারে। এ থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যারা বলে:

(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِنْ دُونِ اللَّهِ) [التوبة: 31]

তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে (সূরা আত-তাওবা ৯:৩১)।

যখন তাদেরকে বিদআ‘ত থেকে নিষেধ করা হয় যে ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন, তখন তারা বলে, অমুক ব্যক্তি এরূপ আমল করে, তিনিতো আলেম অথবা নেকলোক। আর অমুক দেশে এ আমলের প্রচলন আছে। তাদের মাঝেও সৎকর্ম ও তাক্বওয়া আছে। এক্ষেত্রে আমরা বলবো, সৎকর্ম ও তাক্বওয়া যথেষ্ট নয়। কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক হওয়া আবশ্যক।

সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর দলীল ছাড়াই আলিম ও ইবাদতকারীদের কথাকে তারা সঠিক সিদ্ধান্তরূপে গ্রহণ করে। এটাই জাহিলদের পদ্ধতি যারা তাদের আলেম ও ইবাদতকারীদেরকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করেছে।