শক্তিশালী গোষ্ঠীর রীতিকে হক্ব মনে করে তা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা

শক্তিশালী গোষ্ঠীর রীতিকে হক্ব মনে করে তা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা: যে সম্প্রদায়কে বোধশক্তি, কর্মক্ষমতা, ধনসম্পদ, সম্মান ও রাজত্ব দান করা হয়েছে তার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা তার বাণীর মাধ্যমে এটা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন,

(وَلَقَدْ مَكَّنَّاهُمْ فِيمَا إِنْ مَكَّنَّاكُمْ فِيهِ) [الأحقاف:26]

আর আমি অবশ্যই তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, তোমাদেরকে তাতে প্রতিষ্ঠিত করি নি (সূরা আহক্বাফ ৪৬: ২৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(كَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ) [البقرة: 89]

আর তারা (এর মাধ্যমে) পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় কামনা করত। সুতরাং যখন তাদের নিকট এল, যা তারা চিনত, তারা তা অস্বীকার করল। অতএব কাফিরদের উপর আল্লাহর লা‘নত (সূরা বাক্বারাহ ২:৮৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ

তারা তাকে চিনে, যেমন চিনে তাদের সন্তানদেরকে (সূরা বাক্বারাহ ২:১৪৬)।

.............................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী সমস্যাসমূহ: শক্তি, জ্ঞান ও মর্যাদা সম্পন্ন মানুষেরা যে রীতির উপর থাকে, সেটাকে তারা হক্ব মনে করে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে। এটাই ছিল তাদের নিকট হক্ব চেনার পদ্ধতি। তারা মানুষের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং মনে করে সামর্থবান, সম্পদশালী, বিলাসী ও খ্যাতিমানরাই সঠিক পথে আছে। আর দুর্বল ও গরীবদেরকে তারা বাতিল মনে করে। এটাই হলো জাহিলদের অবস্থা, তাদের এ পদ্ধতি পরিত্যাজ্য।

আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী কাফির জাতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন যে, তারা সম্পদশালী ও শক্তিসম্পন্ন ছিল। কুরআনের অনেক আয়াতের মাধ্যমে তাদের গৌরবের কথা জানা যায়। তারা জ্ঞানবান ও বোধশক্তি সম্পন্নও ছিল। কিন্তু এসব কিছুই তাদের কোন কাজে আসেনি। বরং তারা বাতিলের উপরই ছিল। এ বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলা অনেক আয়াতেই উল্লেখ করেন। আল্লাহর বাণী:

(وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا أَيُّ الْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَقَاماً وَأَحْسَنُ نَدِيّاً) [مريم:73]

আর যখন তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টরূপে পাঠ করা হয়, তখন কাফিররা ঈমানদারকে বলে, “দুই দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর এবং মজলিস হিসাবে উত্তম?” (সূরা মারইয়াম ১৯:৭৩)।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের ধ্বংস সাধনের ব্যাপারে বলেন,

وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنْ قَرْنٍ هُمْ أَحْسَنُ أَثَاثاً وَرِئْياً

আর তাদের পূর্বে আমি কত প্রজন্ম ধ্বংস করে দিয়েছি যারা সাজ-সরঞ্জাম ও বাহ্য দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল! (সূরা মারইয়াম ১৯:৭৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(أَوَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَكَانُوا أَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِنْ شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلا فِي الْأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيماً قَدِيراً) [فاطر:44]

আর তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা দেখত, কেমন ছিল তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম। অথচ তারাতো শক্তিতে ছিল এদের চেয়েও প্রবল। আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমানসমূহ ও যমীনের কোন কিছু তাকে অক্ষম করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান (সূরা ফাতির ৩৫:৪৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরোও বলেন,

(وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنْ قَرْنٍ هُمْ أَشَدُّ مِنْهُمْ بَطْشاً) [قّ:36]

আমি তাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা পাকড়াও করার ক্ষেত্রে এদের তুলনায় ছিল প্রবলতর (সূরা ক্বফ ৫০:৩৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরোও বলেন,

(أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ قَرْنٍ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّنْ لَكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِمْ مِدْرَاراً وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَنْشَأْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ قَرْناً آخَرِينَ) [الأنعام:6]

তারা কি দেখে না আমি তাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি? যাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেভাবে তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিনি। আর তাদের উপর বৃষ্টি পাঠিয়েছিলাম মুষলধারে এবং সৃষ্টি করেছিলাম নদীসমূহ যা তাদের নীচে প্রবাহিত হত। অতঃপর তাদের পাপের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করেছি এবং তাদের পরে অন্য প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছি (সূরা আন‘আম ৬:৬)।

এ সকল আয়াত ও উদাহরণ সমূহের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ধন-সম্পদ ও শক্তিতে কোন শিক্ষা নেই। কেননা সম্পদশালী ও ক্ষমতাবানরা যখন ভ্রষ্টতায় নিমোজ্জিত ছিল তখন তাদের এ ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রাচুর্য কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, কাফিরদেরকে পাঁকড়াও করার জন্য তিনি এগুলো তাদেরকে দান করেন। আল্লাহর বাণী:

(فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) [الأنعام:45،44]

অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের উপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল হল, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল। অতএব যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল। আর সকল প্রশংসা রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য (সূরা আন‘আম ৬:৪৪-৪৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরোও বলেন,

(فَذَرْنِي وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَذَا الْحَدِيثِ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لا يَعْلَمُونَ وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ) [القلم:44،45]

অতএব ছেড়ে দাও আমাকে এবং যারা এ বাণীকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে। আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতে পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দেব। অবশ্যই আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ (সূরা ক্বলাম ৬৮:৪৪-৪৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরোও বলেন,

(وَلا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْماً وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ) [آل عمران: 178]

আর যারা কুফরী করেছে তারা যেন মনে না করে যে, আমি তাদের জন্য যে অবকাশ দেই, তা তাদের নিজেদের জন্য উত্তম। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে তারা পাপ বৃদ্ধি করে। আর তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক আযাব (সূরা আলে ইমরান ৩:১৭৮)।

মহান আল্লাহ কাফিরদেরকে প্রাচুর্য, পৃথিবীতে ক্ষমতা, রাজত্ব ও কর্তৃত্ব দান করেছেন। বিভিন্ন জিনিস আবিস্কার ও উদ্ভাবনে তিনি তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। যেমন বর্তমান যুগের কাফিররা এসবের উপরই রয়েছে। এটা প্রমাণ করে না যে, তারা হক্বের উপর আছে। এটাও প্রমাণিত নয় যে, মহান আল্লাহ এসব কিছু তাদেরকে দান করে তাদের উপর সন্তুষ্ট।

এটা কাফিরদেরকে পাঁকড়া করার অবকাশ ও তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার ক্ষেত্র বিশেষ, যাতে তাদের পাপাচারিতা বৃদ্ধি পায়। জাহিলরা এ সবের মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করে থাকে। পক্ষান্তরে বোধ সম্পন্নরা বিভিন্ন জাতি সম্পর্কে চিন্তা করে, তাদের মাঝে হক্বের সন্ধান পাওয়া গেলে তা গ্রহণ করে, যদিও তারা অভাবী হয়। আর কোন গোষ্ঠী প্রাচুর্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বাতিল হলে জ্ঞানীরা তা প্রত্যাখ্যান করে।

এ বিষয়ে অনেক আয়াত আছে। শাইখ রহিমাহুল্লাহ এখানে কতিপয় আয়াত উল্লেখ করেছেন। যে আয়াতে আদ জাতির ধ্বংসের কথা আছে তা তিনি উল্লেখ করেন। আল্লাহর বাণী:

(وَلَقَدْ مَكَّنَّاهُمْ فِيمَا إِنْ مَكَّنَّاكُمْ فِيهِ وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعاً وَأَبْصَاراً وَأَفْئِدَةً فَمَا أَغْنَى عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلا أَبْصَارُهُمْ وَلا أَفْئِدَتُهُمْ ... ) [الأحقاف: 26]

আর আমি অবশ্যই তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, তোমাদেরকে তাতে প্রতিষ্ঠিত করি নি। আর আমি তাদেরকে কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা যখন আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের হৃদয় সমূহ তাদের কোন উপকারে আসেনি (সূরা আহক্বাফ ৪৬:২৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلادِ) [الفجر: 6-8]

তুমি কি দেখনি তোমার রব ‘আদ সম্প্রদায়ের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? ইরাম জাতির প্রতি, যারা ছিল সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী (সূরা ফাজর ৮৯: ৬-৮)।

রায় বা সিদ্ধান্ত: ইরমা বলতে ইরমা গোত্র অথবা যে শহরে গোত্রটি বসবাস করতো তার নাম ইরমা।

(ذَاتِ الْعِمَادِ الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلادِ وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ) [الفجر: 7-9]

ইরাম জাতির প্রতি, যারা ছিল সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী। যার সমতুল্য দেশ সমূহে সৃষ্টি করা হয়নি। এবং সামুদ সম্প্রদায়, যারা উপত্যকায় পাথর কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেছিল? (সূরা ফাজর ৮৯:৭-৯)।

গোত্রটি পাহাড় কেটে কারুকাজ করতো ও সেখানে তাদের বাসস্থান নির্মাণ করতো। বর্তমানেও সিরিয়ার পাহাড়ের পাদদেশে তাদের অবস্থান রয়েছে।

(فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَنْ مِنْ بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِيلاً وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ) [القصص: 58]

আর আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দারা তাদের জীবন উপকরণ নিয়ে দম্ভ করত। এগুলো তো তাদের বাসস্থান। তাদের পরে (এখানে) সামান্যই বসবাস করা হয়েছে। আর আমি চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী (সূরা ক্বাসাস ২৮: ৫৮)।

(فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا) [النمل: 52]

সুতরাং ঐগুলো তাদের বাড়ীঘর, যা তাদের যুলমের কারণে বিরাণ হয়ে আছে। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য যারা জ্ঞান রাখে (সূরা নামল ২৭:৫২)।

আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে প্রচুর শক্তি দান করেছিলেন অথচ তারা ছিল কাফির। তাদের নিকট নাবীগণ আগমন করলে তাদের শক্তি, প্রাচুর্য ও বিলাসীতার কারণে তারা প্রতারিত হন। তারা রসূলগণের প্রতি অহংকার প্রদর্শন করতো। তাদের শিরকী আমলের উপরই তারা বহাল ছিল এবং তারা হক্বকে গ্রহণ করেনি। গোত্রটি নিজেদের শক্তির মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা আদ জাতির কথাও উল্লেখ করেন, তাদের শক্তির মাধ্যমে তারাও প্রতারিত হয়েছিল।

(وَقَالُوا مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَهُمْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُمْ قُوَّةً) [فصلت: 15]

(আর ‘আদ সম্প্রদায়, তারা যমীনে অযথা অহঙ্কার করত এবং) বলত, আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে? তবে কি তারা লক্ষ করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৫)।

বনী ইসরাঈল ও ইয়াহুদীদের জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ পেশ করা হয় এভাবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জ্ঞান ও বুঝশক্তি দান করেছিলেন। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাবলী সম্পর্কে জানতো যে, অচিরেই তিনি প্রেরিত হবেন, যা তাদের তাওরাত ও ইনজিলে বর্ণিত হয়েছে। আর একথাও বর্ণিত হয়েছে, তিনি শেষ নাবী হিসাবে প্রেরিত হবেন এবং তার বিভিন্ন গুণাবলীরও বর্ণনা আছে। মদিনায় আরবের আউস ও খাযরাজ গোত্রের সাথে তাদের যুদ্ধের বর্ণনাও আছে।

(وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا) [البقرة: 89]

আর তারা (এর মাধ্যমে) পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় কামনা করত (সূরা বাক্বারাহ ২:৮৯)।

তারা বলতো, শেষ যুগে অচিরেই একজন নাবী প্রেরিত হবেন। আমরা তার অনুসরণ করবো ও তার সাথে তোমাদেরকে হত্যা করবো।

(فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ) [البقرة: 89]

সুতরাং যখন তাদের নিকট এল, যা তারা চিনত, তারা তা অস্বীকার করল (সূরা বাক্বারাহ ২:৮৯)।

অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসমাঈল বংশে প্রেরিত হন। ইয়াহুদীরা তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। কারণ বনী ইসরাঈলের মধ্যে থেকে নাবী হোক তারা এটা কামনা করতো। যাতে তারা নিজেদের জন্য তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করতে পারে। ইসমাঈলী বংশে নাবী হওয়ায় রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি তারা ঈর্ষান্বিত হয়। তারা জানতো যে, তিনি আল্লাহর রসূল। এ সত্ত্বেও তাদের জ্ঞান ও বোধগম্যতা কোন কাজে আসেনি।

মূলতঃ যারা হক্ব বুঝে, তদনুযায়ী আমল করে। আর হক্ব থেকে বিমুখ করে এমন বিষয় হলো: হিংসা, অহংকার ও দুনিয়া প্রীতি অথবা নের্তৃত্বের লোভ। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে মানুষ জেনে বুঝে হক্ব থেকে বিরত থাকে। হেদায়াত ও অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। শিক্ষা, জ্ঞান ও বুঝের মাধ্যমে হেদায়াত লাভ হয় না। তাই যে কোন বিষয় আল্লাহ তা‘আলার দিকেই অভিমুখী হয়। একারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করতেন,

يا مقلب القلوب والأبصار، ثبت قلبي على دينك

হে অন্তর ও চক্ষুর পরিবর্তনকারী! তোমার দীনের উপর আমার অন্তরকে অটল রাখো।[1]

শিক্ষা, জ্ঞান, বুঝ ও ফিক্বহ এসবই ভাল উপকরণ, তবে তা যথেষ্ট নয়। মু’মিনের সতর্কতার জন্য এসব তাকে দান করা হয়। যাতে মু’মিন তার জ্ঞান ও বুঝের মাধ্যমে প্রতারিত না হয়। আর সর্বদা হক্বের উপর অটল থাকা ও সঠিক পথের হিদায়াত লাভের জন্য রবের নিকট দু’আ করবে। এমনিভাবে মু’মিন তার শক্তির মাধ্যমেও প্রতারিত হয় না। যেমন বলা হয়ে থাকে, এটা শক্তিশালী রাষ্ট্র, কেউ এর উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না। কেননা এ রাষ্ট্র অস্ত্রাদী, ধ্বংসাত্নক গোলাবারুদ ও পারমাণবিক বোমার সমারোহে সমৃদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئاً وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِينَ) [التوبة: 25]

হুনাইনের দিনে যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল করেছিল, অথচ তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর যমীন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে (সূরা আত তাওবা ৯:২৫)।এটা হলো বৃহত্তর বিষয় যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই সচেতন নয়। শক্তি, প্রাচুর্য, খ্যাতি ও অহংকারের মাধ্যমে জাহিলরা যুক্তি দেখিয়ে বলে, এটা উন্নত জাতি, যাতে প্রমাণিত হয় এ জাতি হক্বের উপর আছে। তাদের ধারণা হক্ব ছাড়া কেউ এ সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না, কেননা তাদের রয়েছে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জ্ঞান। কতিপয় জনসমষ্টি প্রতারিত হয়ে তাদের বিষয়ে এরূপ ধারণাই করে থাকে, অথচ তারা কুফরীর উপর প্রতিষ্ঠিত, সেদিকে তারা দৃষ্টি দেয় না।

>
[1]. ছহীহ: তিরমিযী ৩৫৯৬, হাকিম ১৯৭০, ইবনে মাজাহ ১৯৯, ছহীহ জামে ৭৯৮৭-৮৮।