রমযান মাসের ৩০ আসর একবিংশ আসর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
ই‘তিকাফ রমযানের শেষ ১০ দিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ১০ দিনে মসজিদে ই‘তিকাফ করতেন।

আর ই‘তিকাফ হলো, আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য পার্থিব কাজ থেকে অবসর হয়ে মসজিদে অবস্থান করা। ই‘তিকাফ করা সুন্নাত, যা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ ﴾ [البقرة: ١٨٧]

‘তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মেলা-মেশা করো না।’ (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ১৮৭)

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফ করতেন সাহাবাগণও ই‘তিকাফ করতেন।

* আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের প্রথম ১০ দিন ই‘তিকাফ করলেন, এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ই‘তিকাফ করলেন, এরপর বললেন,

« إِنِّى اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ثُمَّ أُتِيتُ فَقِيلَ لِى إِنَّهَا فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ ».

‘আমি প্রথম ১০ দিন ই‘তিকাফ করে এ মহান রাতটি খুঁজলাম, এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ই‘তিকাফ করলাম, কিন্তু তাতে কদর নামক রাতটি পেলাম না। এরপর আমাকে বলা হলো, এ রাতটি শেষ ১০ দিনের মাঝে নিহেত রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই ই‘তিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষ দশকে ই‘তিকাফ করে।’[1]

* সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ‘আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত,

كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِه.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রমযানের শেষ ১০ দিনে ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীগণও ই‘তিকাফ করতেন।’[2]

* সহীহ বুখারীতে ‘আয়েশা ছিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে আরও বর্ণিত,

كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমযানে ১০ দিন ই‘তিকাফ করতেন। আর তিনি যে বছর মারা যান, সে বছর ২০ দিন ই‘তিকাফ করেছেন।’[3]

* আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত,

كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ فَلَمْ يَعْتَكِفْ عَامًا فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ لَيْلَةً.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ ১০ দিন ই‘তিকাফ করতেন, পুরো বছর আর কোনো ই‘তিকাফ করতেন না। পরবর্তী বছর রমযানে ২০ দিন ই‘তিকাফ করেছেন।’[4]

* ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ই‘তিকাফ করতেন, ফজরের সালাত আদায় করতেন তারপর ই‘তিকাফের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করতেন। একবার আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার কাছে অনুমতি চাইলেন, তিনি তাকে অনুমতি দিলেন, অতঃপর তার জন্যও তাঁবু টাঙ্গানো হলো। এরপর হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা আয়েশার কাছে তার জন্য রাসূলের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার অনুরোধ জানালেন, তিনি তাই করলেন, ফলে তার জন্যও তাঁবু টাঙ্গানো হলো, অতঃপর যখন যায়নার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সেটা দেখলেন, তিনি তার জন্য তাঁবু টাঙ্গানোর নির্দেশ দিলেন, ফলে তাই করা হলো। অতঃপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকগুলো তাঁবু দেখলেন তখন বললেন, এটা কি? তারা বলল, এ হচ্ছে আয়েশা, হাফসা ও যাইনাবের তাঁবু। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তারা কী এর মাধ্যমে সাওয়াব পাওয়ার ইচ্ছা করছে? তোমরা এগুলোকে খুলে ফেল, আমি এগুলোকে দেখতে চাই না। ফলে এগুলো খুলে ফেলা হলো, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের ই‘তিকাফ পরিত্যাগ করলেন; শেষপর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়ালে প্রথম দশক ই‘তিকাফ করলেন।” (বুখারী ও মুসলিমের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে সংগৃহীত।[5]* ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. বলেন, “আমি জানি না কোনো আলেম দ্বিমত করেছেন কি না যে: ই‘তিকাফ সুন্নাত।”

[1] মুসলিম: ১১৬৭।

[2] বুখারী: ২০২৬; মুসলিম: ১১৭২।

[3] বুখারী: ২০৪৪।

[4] তিরমিযী: ৮০৩; ইবন মাজাহ: ১৭৭০; ইবন খুযাইমাহ: ৩/৩৪৬।

[5] বুখারী: ২০৩৩, ২০৩৪, ২০৪৫; মুসলিম: ১১৭১।