শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের স্তরসমূহের ব্যাখ্যা ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী] ১ টি
তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের স্তরসমূহের ব্যাখ্যাঃ প্রথম স্তর ও তাতে যা শামিল রয়েছে

تفصيل مراتب القدر: الدرجة الأولى وما تتضمنه

তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের স্তরসমূহের ব্যাখ্যাঃ প্রথম স্তর ও তাতে যা শামিল রয়েছে:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

فَالدَّرَجَةُ الْأُولَى: الْإِيمَانُ بِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى عَلِيمٌ بِالْخَلْقِ وَهُمْ عَامِلُونَ بِعِلْمِهِ الْقَدِيمِ الَّذِي هُوَ مَوْصُوفٌ بِهِ أَزَلًا وَأَبَدًا وَعَلِمَ جَمِيعَ أَحْوَالِهِمْ مِنَ الطَّاعَاتِ وَالْمَعَاصِي وَالْأَرْزَاقِ وَالْآجَالِ ثُمَّ كَتَبَ اللَّهُ فِي اللَّوْحِ الْمَحْفُوظِ مَقَادِيرَ الْخَلْقِ فَأَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ قَالَ لَهُ: اكْتُبْ قَالَ : مَا أَكْتُبُ؟ قَالَ: اكْتُبْ مَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الِقْيَامَةِ فَمَا أَصَابَ الْإِنْسَانَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ وَمَا أَخْطَأَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَهُ جَفَّتِ الْأَقْلَامُ وَطُوِيَتِ الصُّحُفُ كَمَا قَالَ تَعَالَى: ﴿أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾ وَقَالَ تعالى: ﴿مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾ وَهَذَا التَّقْدِيرُ التَّابِعُ لِعِلْمِهِ سُبْحَانَهُ يَكُونُ فِي مَوَاضِعَ جُمْلَةً وَتَفْصِيلًا: فَقَدْ كَتَبَ فِي اللَّوْحِ الْمَحْفُوظِ مَا شَاءَ وَإِذَا خَلَقَ جَسَدَ الْجَنِينِ قَبْلَ نَفْخِ الرُّوحِ فِيهِ بَعَثَ إِلَيْهِ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ فَيُقَالُ لَهُ: اكْتُبْ رِزْقَهُ وَأَجَلَهُ وَعَمَلَهُ وَشَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ وَنَحْوَ ذَلِكَ فَهَذَا التَّقْدِيرُ قَدْ كَانَ يُنْكِرُهُ غُلَاةُ الْقَدَرِيَّةِ قَدِيمًا وَمُنْكِرُوهُ الْيَوْمَ قَلِيلٌ

তাকদীরের প্রতি ঈমানের প্রথম স্তর হচ্ছে, অন্তর দিয়ে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা তার সকল সৃষ্টি সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন। আরো বিশ্বাস করা যে, বান্দারা যেসব আমল করে থাকে, আল্লাহ তাআলা তাঁর চিরন্তন ও অবিনশ্বর ইলম দ্বারা আগে থেকেই অবগত আছেন। সর্বদাই তিনি এই বিশেষণে বিশেষিত। অর্থাৎ মাখলুক সৃষ্টি করার আগেও তিনি এই গুণে গুণান্বিত ছিলেন, এখনো তা দ্বারা বিশেষিত আছেন এবং আবাদুল আবাদ এই বিশেষণে বিশেষিত থাকবেন। এই কথা বিশ্বাস করাও তাকদীরের প্রথম স্তরের অন্তর্ভুক্ত যে, তিনি বান্দাদের সকল অবস্থা যেমন তাদের সকল প্রকার সৎ আমল, পাপাচার, রিযিক, বয়স ইত্যাদি সবকিছুই জানেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির তাকদীর সমূহ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন। তিনি সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে কলমকে আদেশ করলেন যে, লিখো। কলম বললঃ কী লিখবো? আল্লাহ তাআলা বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সবই লিখো।[1]

সুতরাং মানুষের জন্য যা হবার, তা হবেই। আর যা তার জন্য ঘটার নয়, তা ঘটবে না। কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং দফতর গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾

‘‘তুমি কি জান না, আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেক জিনিষই আল্লাহ জানেন? সবকিছু একটি কিতাবে লিখিত আছে৷ আল্লাহর জন্য এটা মোটেই কঠিন নয়’’। (সূরা হজ্জঃ ৭০) আল্লাহ তাআলা সূরা হাদীদের ২২ নং আয়াতে আরো বলেন,

﴿مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾

‘‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের উপর যেসব মসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি৷ এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ’’। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইলমের অনুগামী এই তাকদীর বিভিন্ন স্থানে লিখা হয়। একই সময় একসাথে লিখা এবং বিভিন্ন সময় আলাদাভাবেও লিখা হয়ে থাকে।

আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করেছেন, লাওহে মাফুযে তাই লিখে রেখেছেন। আর যখন মাতৃগর্ভে শিশুর দৈহিক আকৃতি দান করেন, তখন তাতে রূহ ফুকে দেয়ার পূর্বে তার কাছে একজন ফেরেশতা পাঠান এবং ফেরেশতাকে চারটি কথা লিখে দেয়ার আদেশ করা হয়। তাকে বলা হয়, (১) রিযিক লিখে দাও, (২) তার বয়স লিখে দাও, (৩) সে কী আমল করবে তা লিখে দাও এবং (৪) হতভাগ্য হবে না সৌভাগ্যবান হবে? তাও লিখে দাও। অনুরূপ অন্যান্য বিষয়ও লিখার আদেশ করা হয়।

পূর্বকালের কাদারীয়াদের মধ্য হতে যারা তাকদীরকে অস্বীকার করায় সীমালংঘন ও বাড়াবাড়ি করেছিল, তারা তাকদীরের এই স্তরকে অস্বীকার করতো। তবে বর্তমানে তাতে অবিশ্বাসীদের সংখ্যা খুবই কম।


ব্যাখ্যাঃ الأزل দ্বারা অতীতের এমন প্রাচীনত্ব, পূর্ববর্তীতা, অগ্রগামীতা, অগ্রবর্তীতা ও চিরন্তনতা বুঝানো হয়েছে, যার কোন শুরু নেই। আর الأبد দ্বারা ভবিষ্যতে এমন অবিনশ্বরতা, চিরন্তনতা, স্থায়িত্ব এবং টিকে থাকা বুঝানো হয়েছে, যার কোন শেষ নেই। الطاعات শব্দটি الطاعة এর বহুবচন। শরীয়তের আদেশ মেনে নেওয়াকে الطاعة (আনুগত্য) বলা হয়। আর শরীয়তের আদেশের বিরোধীতা করাকে المعصية (পাপাচার) বলা হয়। المعاصي শব্দটি المعصية এর বহুবচন। الأرزاق শব্দটি رزق (রিযিক) এর বহুবচন। মানুষের জন্য যা উপকারী হয়, তাই রিযিক। الآجال শব্দটি الأجل -এর বহুবচন। কোন বস্ত্তর কিংবা কাজের সময়সীমাকে আজাল বলা হয়। মানুষের আজাল বলতে মৃত্যুর মাধ্যমে তার দুনিয়ার জীবনে বয়সের পরিসমাপ্তি বুঝায়। লাওহে মাহফুয অর্থ হচ্ছে أم الكتاب ‘মূল কিতাব’। মাহফুয অর্থ সংরক্ষিত। উহাতে কোন কিছু বাড়ানো কিংবা উহা থেকে কোন কিছু কমানো হতে এই কিতাবকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

ঈমান বিল কাদারের স্তর দু’টির মধ্য হতে প্রথম স্তরটি যেসব বিষয়কে শামিল করে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এখানে ঐসব বিষয় উল্লেখ করেছেন। মোট কথা তাকদীরের প্রথম স্তর দু’টি জিনিষ বা স্তরকে শামিল করে।

প্রথম স্তরঃ আল্লাহ তাআলার ইলম বিশেষণে বিশ্বাস করা, যা অস্থিত্বশীল কিংবা অস্থিত্বহীন সকল বস্ত্তকে পরিবেষ্টন করে আছে। এই ইলম আল্লাহ তাআলার ঐ সমস্ত সিফাতে যাতীয়া বা সত্তাগত বিশেষণসমূহের মধ্যে গণ্য, যার মাধ্যমে তিনি সর্বদাই বিশেষিত। বান্দার ভাল-মন্দ আমলগুলো সম্পর্কে তিনি অবগত, তাদের রিযিক, বয়স ইত্যাদি সকল অবস্থা সম্পর্কেও তিনি অবগত।

দ্বিতীয় স্তরঃ তাকদীরের দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে লিখার স্তর। আল্লাহ তাআলা লাওহে মাহফুযে সমস্ত সৃষ্টির তাকদীর অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যত মাখলুক সৃষ্টি হবে তাদের সকলের সমস্ত অবস্থা, হায়াত-রিযিক, আমল, পরিণতি-পরিণাম ইত্যাদি সবকিছুই লিখে রেখেছেন। সুতরাং সৃষ্টিজগতে যা কিছু হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই অবগত আছেন এবং তা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন।

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া উপরোক্ত স্তর দু’টির পক্ষে কুরআন সুন্নাহর দলীল পেশ করেছেন। সুন্নাতের দলীলগুলো থেকে শাইখ এ ব্যাপারে একটি হাদীছের অর্থ উল্লেখ করেছেন। হাদীছের শব্দগুলো ইমাম আবু দাউদ স্বীয় সুনানে উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ وقَالَ: وَمَا أَكْتُبُ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ»

‘‘আল্লাহ্ তাআলা কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে বললেনঃ লিখো। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখবো? আল্লাহ্ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক বস্ত্তর তাকদীর লিখো’’।[2] এই হাদীছ তাকদীর লিখার স্তর সাব্যস্ত করে। সেই সাথে আরো প্রমাণ করে যে, সবকিছুই লিখা রয়েছে।

فَأَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ قَالَ لَهُ: اكْتُبْt এখানে أول এবং القلم শব্দ দু’টিকে এই হিসাবে নসব (যবর) দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এখানে মোট বাক্য একটিই। তখন বাক্যটি হবে এ রকমঃأولَ ما خلق الله القلمَ قال له اكتب (কলম সৃষ্টি করে আল্লাহ কলমকে আদেশ করলেনঃ তুমি লিখো)। এর অর্থ হলো কলম সৃষ্টির সময় কলমের প্রতি প্রথম আদেশ ছিল, তুমি লিখো।[3]

أول এবং القلم শব্দ দু’টিকে রফা (পেশ) দিয়েও বর্ণনা করা হয়েছে। তখন মোট বাক্য হবে দু’টি। তখন প্রথম বাক্যটি হবে أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمُ (সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কলম সৃষ্টি করেছেন)। আর দ্বিতীয় বাক্যটি হবে قَالَ لَهُ: اكْتُبْ (কলমকে আদেশ করলেনঃ তুমি লিখো)। সবগুলো শব্দ মিলে তখন হাদীছের অর্থ হবে, সৃষ্টিজগতের সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে কলম।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ فَمَا أَصَابَ الْإِنْسَانَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ وَمَا أَخْطَأَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَهُ جَفَّتِ الْأَقْلَامُ وَطُوِيَتِ সুতরাং মানুষের জন্য যা হবার, তা হবেই। আর যা তার জন্য ঘটার নয়, তা ঘটবেনা। কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং দফতর গুটিয়ে নেয়া হয়েছেঃ

الصُّحُفُ সুতরাং মানুষের জন্য যা হবার, তা হবেই, এটি হাদীছের রাবী উবাদাহ ইবনে সামেতের উক্তি। অর্থাৎ মানুষ কল্যাণকর যেসব বিষয় অর্জন করে এবং ক্ষতিকর যেসব বিষয়ের সম্মুখীন হয়, তা তার জন্য নির্ধারিত। তা অবশ্যই তার জন্য অর্জিত হবে। কখনো তার বিপরীত হবেনা।

جَفَّتِ الْأَقْلَامُ وَطُوِيَتِ الصُّحُفُ কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং দফতর গুটিয়ে নেয়া হয়েছেঃ এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, পূর্বেই সবকিছু নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তা লিখে শেষ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাসের হাদীছে যা বর্ণিত হয়েছে এখানে সে কথাই বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ যা কিছু নির্ধারণ করা হয়েছে, তা লিখার পর কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) কুরআনের দলীলগুলো উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾

‘‘তুমি কি জান না, আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিষই আল্লাহ জানেন? সবকিছু একটি কিতাবে লিখা আছে৷ আল্লাহর জন্য এটা একদম সহজ’’। (সূরা হজ্জঃ ৭০) এখানে জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়নি; বরং আসমান-যমীনের সবকিছু সম্পর্কে আল্লাহর ইলম সাব্যস্ত করার জন্যই প্রশ্নটি করা হয়েছে। অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! তুমি অবশ্যই অবগত আছো যে, আল্লাহ তাআলা আসমান-যমীনের সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছেন। এতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার জ্ঞান উর্ধ ও নিম্ন জগতের সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে। তাকদীরের এই স্তর হলো আল্লাহ তাআলার ইলমের সম্পর্কে। إن ذلك নিশ্চয়ই উহা, অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা আছে, তা আল্লাহ তাআলার অবগতিতে একটি কিতাবের মধ্যেই রয়েছে। আল্লাহ তাআলার নিকট যেই মূল কিতাব রয়েছে, তাতে সবই লিখা রয়েছে। এটি হচ্ছে তাকদীর লিখার স্তর।

إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ আল্লাহর জন্য এটা একদম সহজঃ অর্থাৎ জ্ঞানের মাধ্যমে আসমান-যমীনের সবকিছুকে পরিবেষ্টন করা এবং তা লিখে রাখা আল্লাহ তাআলার জন্য মোটেই কঠিন নয়।

উপরের আয়াতে কারীমা থেকে জানা গেল, সবকিছু সম্পর্কে আল্লাহর ইলম রয়েছে এবং তা হওয়ার পূর্বেই লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাকদীরের প্রথম স্তরটি এই বিষয় দু’টিকেই শামিল করে।

শাইখ সূরা হাদীদের ২২ নং আয়াত থেকেও দলীল গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ আয়াতে আরো বলেনঃ

﴿مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾

‘‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের উপর যেসব মসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে বিশেষ একটি কিতাবে লিখে রাখিনি৷ এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ’’। অর্থাৎ যমীনে যেই অনাবৃষ্টি, ফসলের ঘাটতি, ফলফলাদির কমতি দেখা দেয়, তোমাদের শরীরে যেই ব্যথা, রোগ-ব্যাধি এবং জীবনোপকরণে যেই সংকীর্ণতা অনুভব করো, তা বিশেষ একটি কিতাবে লিখা রয়েছে। অর্থাৎ লাওহে মাহফুযে তা লিখিত আকারে রয়েছে।

مِّنْ قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا সৃষ্টি করার পূর্বেঃ অর্থাৎ সৃষ্টি করার আগেই আমি প্রত্যেক জিনিষকে লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছি। আল্লাহর জন্য উহা একদম সহজ। অর্থাৎ মাখলুকের সংখ্যা ও পরিমাণ অনেক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো লাওহে মাহফুযে লিখে রাখা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য একেবারেই সহজ।

এই আয়াতে কারীমাতেও উর্ধ্ব ও নিম্ন জগতের ঘটনাবলী সংঘটিত হওয়ার আগেই লাওহে মাহফুযে লিখে রাখার দলীল পাওয়া যায়। এর দ্বারা আরো বুঝা যায় যে, লিখার পূর্বেই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং আয়াতটি তাকদীরের দু’টি স্তর অর্থাৎ আল্লাহর ইলম এবং সে অনুযায়ী সবকিছু লিখে রাখার অন্যতম একটি দলীল।

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইঙ্গিত করেছেন যে, তাকদীর দুই প্রকার। (১) সাধারণ তাকদীর, যা প্রত্যেক সৃষ্টিকেই একসাথে শামিল করে নিয়েছে। এটি হচ্ছে সেই তাকদীর, যা দলীল-প্রমাণসহ একটু পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। লাওহে মাহফুযে এই প্রকার তাকদীর লিখা আছে। (২) খাস তাকদীর। সাধারণ তাকদীরের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও শ্রেণী বিন্যাসই হলো খাস তাকদীর। (ক) তাকদীরে উমুরী তথা পুরো জীবনের তাকদীর (খ) তাকদীরে হাওলী তথা একবছরের তাকদীর এবং (গ) তাকদীরে ইয়াওমী তথা দৈনন্দিন তাকদীর।

শাইখুল ইসলামের উক্তিঃ وَهَذَا التَّقْدِيرُ التَّابِعُ لِعِلْمِهِ سُبْحَانَهُ يَكُونُ فِي مَوَاضِعَ جُمْلَةً وَتَفْصِيلًا আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইলমের অনুগামী এই তাকদীর বিভিন্ন স্থানে লিখা হয়। একই সময় একসাথে লিখা এবং বিভিন্ন সময় আলাদাভাবেও লিখা হয়। সমস্ত মাখলুকের তাকদীর একসাথে একই সময় লাওহে মাহফুযে লিখা হয়েছে। এই আম তাকদীরকে আবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে ভাগ ভাগ করেও লিখা হয়। আর সেই স্থান ও সময়গুলো হচ্ছেঃ

তাকদীরে উমুরী এবং উহা লিখার স্থান ও সময়ঃ যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের হাদীছে এসেছে, মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই শিশুর উপর যে চারটি বাক্য লিখে দেয়া হয়, উহাই হচ্ছে তাকদীরে উমুরী। লিখে দেয়া হয় তার রিযিক, তার বয়স, তার আমল এবং তার হতভাগ্য হওয়া কিংবা সৌভাগ্যবান হওয়ার কথা।

তাকদীরে হাওলী এবং উহা লিখার সময়ঃ লাইলাতুল কদরে বাৎসরিক তাকদীর লিখিত হয়। তাতে পুরো বছরের সকল বিষয় একসাথে লিখা হয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

﴿إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ﴾

‘‘আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা হয় আমার আদেশক্রমে। আমিই প্রেরণকারী’’। (সূরা দুখানঃ ৩-৫)

তাকদীরে ইয়াওমীঃ হায়াত, মওত, সম্মান, অপমান ইত্যাদি আরো যা প্রতিদিন নির্ধারণ করা হয়, তাই দৈনন্দিন তাকদীর। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴾ ﴿كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ ‘‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোন মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান। ২৯)

আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্য হতে অন্যতম একটি সৃষ্টি হচ্ছে লাওহে মাহ্ফুয। সাদা মুক্তা দিয়ে তিনি এটি তৈরী করেছেন। তার উভয় পার্শ্ব তৈরী করা হয়েছে লাল রঙ্গের হিরা দিয়ে। কলমটি হচ্ছে নূরের তৈরী, কালিও নূরের। উহার প্রশস্ততা হচ্ছে আসমান-যমীনের মধ্যকার প্রশস্ততার সমপরিমাণ। আল্লাহ্ তাআলা তাতে দৈনিক তিনশ ষাট বার দৃষ্টি দেন। প্রত্যেকবার দৃষ্টি দেয়ার সময় কাউকে জীবিত রাখেন (কোনো না কোনো বস্ত্ত সৃষ্টি করেন), কারো মৃত্যু ঘটান, কাউকে সম্মানিত করেন, কাউকে অপমানিত করেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। এটিই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার এই বাণী: ﴾ ﴿كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ ‘‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোন মহান কার্যে রত আছেন’’, এর মর্মার্থ। ইমাম আব্দুর রায্যাক, ইবনুল মুনযির, তাবারানী এবং হাকেম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

তাকদীর অস্বীকার করার ক্ষেত্রে পূর্বযুগের কাদারীয়া সম্প্রদায়ের যেসব লোক সীমালংঘন করেছে, তারা উপরোক্ত আম ও খাস উভয় প্রকার তাকদীরকে অস্বীকার করেছে। সৃষ্টিজগতে যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়, তা ঘটার পূর্বে সেগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ইলম বা অবগতিকে তারা অস্বীকার করে। লাওহে মাহফুযে এবং অন্যান্য স্থানে আল্লাহ তাআলা যা কিছু পূর্বেই লিখে রেখেছেন, তারা তাও অস্বীকার করেছে।

তারা আরো বলে থাকে, আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন এবং নিষেধ করেছেন। কিন্তু কারা সেই আদেশ মানবে, কারা সেই নিষেধ থেকে বিরত থাকবে, আদেশ বা নিষেধ বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলা তা জানেন না। (নাউযুবিল্লাহ) তাদের মতে الأمر أنف ‘‘আল্লাহর কাছে সকল বিষয়ই নতুন’’। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ইলম ও তাকদীরে আগে থেকে কিছুই নির্ধারিত নয়। যারা এই কথা বলেছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইমামগণ তাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়েছে।[4] তবে সীমা লংঘনকারী এই ফির্কার লোকেরা বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে তাদের মাজহাবও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই শাইখুল ইসলাম বলেনঃ منكروه اليوم قليل বর্তমানে আল্লাহর ইলমকে অস্বীকার কারীর সংখ্যা খুবই কম।কাদারীয়াদের যেই ফির্কা এখনো রয়েছে, তারা আল্লাহর ইলমকে স্বীকার করে। তবে বান্দারা যেসব কাজ-কর্ম করে, তাদের মতে সেগুলো তাকদীরের মধ্যে শামিল নয়। এই ফির্কার লোকেরা মনে করে বান্দার কর্ম বান্দা নিজেই সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাআলা উহা সৃষ্টি করেন নি এবং সৃষ্টি করার ইচ্ছাও করেন নি। সামনে এ বিষয়ে আরো বিবরণ আসছে।

[1] - সর্বপ্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে আলেমগণ থেকে একাধিক কথা বর্ণিত হয়েছে। আলেমদের কেউ বলেছেনঃ আরশ এবং কুরসী হচ্ছে সর্বপ্রথম সৃষ্টি। কেউ বলেছেন সর্বপ্রথম আল্লাহ পানি সৃষ্টি করেছেন। আবার কেউ বলেছেনঃ কলমই প্রথম সৃষ্টি। প্রখ্যাত আলেম ইবনে জারীর, ইবনুল আরাবী এ মতেরই সমর্থক ছিলেন। পরবর্তীদের মধ্যে ইমাম আলবানী (রঃ) এমতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা নিম্নের সহীহ হাদীছগুলো দিয়ে দলীল গ্রহণ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«إن أول شيء خلقه الله تعالى القلم وأمره أن يكتب كل شيء يكون»

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যে জিনিষটি সৃষ্টি করেছেন, তা হচ্ছে কলম। অতঃপর কলমকে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা লিখতে বললেন’’। {(আবু ইয়ালা (১/১২৬) আল-আসমা ওয়াস সিফাত লিল-বায়হাকী ২৭১), সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৩৩)} তিনি আরো বলেনঃ

«إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ»

‘‘আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখব? আল্লাহ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্ত্তর তাকদীর লিখো’’। (দেখুনঃ আবু দাউদ, তিরমিজী, বায়হাকী এবং অন্যান্য) মালেকী মাজহাবের বিখ্যাত আলেম ইবনুল আরাবী বলেনঃ قبل القلم لم يكن شيء إلا هو سبحانه কলমের পূর্বে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। (দেখুন আরেযাতুল আহওয়াযী) অপর পক্ষে আরেক দল আলেমের মতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহর আরশ। আল্লামা ইবনে তাইমীয়া এবং অন্যান্য আলেম থেকে এই মত পাওয়া যায়। তাদের দলীল হচ্ছে, ইমরান বিন হুসাইন থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَىْءٌ غَيْرُهُ ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ ، وَكَتَبَ فِى الذِّكْرِ كُلَّ شَىْءٍ ، وَخَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ»

আদিতে একমাত্র আল্লাহ-ই ছিলেন। তিনি ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তারপর তিনি প্রত্যেক জিনিষ লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করলেন এবং তিনি আসমান ও যমিন সৃষ্টি করলেন। (বুখারী, হাদীছ নং- ৩১৯১) উপরের হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ পানি সর্বপ্রথম সৃষ্টি বলে মত প্রকাশ করেছেন। এটিই সর্বাধিক শক্তিশালী মত। কারণ এ ব্যাপারে আরো সুস্পষ্ট হাদীছ হলো, আবু রাযীন বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম,

«أَيْنَ كَانَ رَبُّنَا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ خَلْقَهُ قَالَ كَانَ فِي عَمَاءٍ مَا تَحْتَهُ هَوَاءٌ وَمَا فَوْقَهُ هَوَاءٌ وَخلق عرشهُ عَلَى الْمَاءِ»

সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করার পূর্বে আমাদের রব কোথায় ছিলেন? তিনি বললেন, বাদলের উপর ছিলেন। যার উপর-নীচে কোনো বায়ু ছিলনা। অতঃপর তিনি পানির উপর আরশ সৃষ্টি করেছেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ثم خلق عرشه على الماء ‘‘অতঃপর তিনি তাঁর আরশকে পানির উপর সৃষ্টি করেছেন। (আহমাদ ২৬/১০৮) উপরোক্ত হাদীছকে ইমাম তাবারী, তিরমিযী, ইমাম যাহাবী ও ইমাম ইবনে তাইমীয়া বিশুদ্ধ বলেছেন।

আল্লাহই অধিক অবগত।

প্রথম পর্যায়ের কতিপয় মাখলুক বা সৃষ্টিঃ بعض الأمثلة من أوائل المخلوقات

এ কথা সত্য যে, আরশ, কুরসী, লাওহে মাহফুয, পানি, আসমান, ফেরেশতা, জিন ইত্যাদি প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত। মানুষ কোন ক্রমেই উপরোক্ত সৃষ্টিসমূহের পূর্বে সৃষ্টি হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নন। কলমও প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টি। তবে আমরা যে কলম দিয়ে লেখি সেই কলম সর্বপ্রথম সৃষ্টি নয়; বরং যে কলম দিয়ে লাওহে মাহফুয লেখা হয়েছে সেটিই সর্বপ্রথম সৃষ্টি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল না থাকায় তা মুসলিমের আকীদাহ হতে পারেনা। তাই উপরোক্ত হাদীছগুলো এবং অন্যান্য সহীহ হাদীছের শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরী। ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ

«ما منا من أحد إلا يؤخذ من قوله أو يرد عليه إلا صاحب هذا القبر ويشير إلى قبر النبي صلى الله عليه وسلم»

আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সকল কথাই গ্রহণ করা হবে অর্থাৎ আমাদের কারো কথা গ্রহণ করা যেতে পারে আবার প্রত্যাখ্যানও করা যেতে পারে। তবে এই কবরের অধিবাসী ব্যতীত। এই কথা বলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।





[2] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ আবওয়াবুল কাদ্র। তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। তবে ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলা সহীহাঃ (১/৩০৭) আল্লাহর আরশ পানির উপরে থাকার অর্থ হলো সাত আকাশের উপরে রয়েছে পানি। আর সেই পানির উপর আল্লাহর আরশ। এখনো আরশ স্বীয় অবস্থানেই রয়েছে।

[3] - এভাবে পড়া হলে কলম যে, আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি তা এই হাদীছ দ্বারা প্রমাণ করা যাবেনা। কারণ তখন হাদীছ এটি বুঝাবেনা যে কলমই প্রথম সৃষ্টি। তখন হাদীছের তাৎপর্য হবে কলম সৃষ্টির সময় কলমের প্রতি আল্লাহর সর্বপ্রথম আদেশটি ছিল, তুমি লিখো।

[4] - ইলম (জ্ঞান) আল্লাহ তাআলার সিফাতে যাতীয়া তথা সত্তাগত গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার জ্ঞান এতই বিশাল, গভীর ও ব্যাপক যে, সৃষ্টি জগতের ছোট-বড় কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। আসমান-যমীন এবং এতোদূভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। বান্দার সকল অবস্থা, সকল কর্ম এমন কি অন্তরের মধ্যে যা আছে তাও তিনি অবগত। এমনটি নয় যে, বান্দা আমল করার পরই আল্লাহ তাআলা বান্দার কর্ম সম্পর্কে জানতে পারেন; বরং আমল করার আগেই আল্লাহ তাআলা জেনে ফেলেন। শুধু তাই নয়; সৃষ্টি করার পূর্বেই তিনি বান্দার সকল অবস্থা ও কর্ম সম্পর্কে অবগত আছেন এবং সে অনুযায়ী লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন। এমনকি যে জিনিষ আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেন নি, তা সৃষ্টি করা হলে কেমন হতো, তাও তিনি জানেন।