শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানের সেতু ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী] ১ টি
জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানের সেতু

القنطرة بين الجنة والنار

জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানের সেতু:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

فَمَنْ مَرَّ عَلَى الصِّرَاطِ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَإِذَا عَبَرُوا عَلَيْهِ وُقِفُوا عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقْتَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ فَإِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ

যারা পুলসিরাত অতিক্রম করতে সক্ষম হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যখন তারা পুলসিরাত পার হবে, তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি সেতুর উপর থামানো হবে। এখানে তাদের একজন থেকে অপরজনের কিসাস বা বদলা গ্রহণ করা হবে। অতঃপর যখন তাদেরকে পারস্পরিক যুলুম থেকে পরিশুদ্ধ ও পরিস্কার করা হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।[1]


ব্যাখ্যাঃ (৭) কিয়ামতের দিন আরো যা হবে, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) তা থেকে কানতারার (সেতুর) উপর দন্ডায়মান হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি পুলসিরাত অতিক্রম করবে এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ﴾

‘‘অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে৷ একমাত্র সে ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে ৷ আর এ দুনিয়া নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া আর কিছুই নয়’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৮৫) আল্লাহ তাআলা সূরা শুরার ৭ নং আয়াতে বলেন, فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ ‘‘এক দল জান্নাতে যাবে এবং অপর দলকে যেতে হবে জাহান্নামে’’।

তবে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে মুমিনদের পারস্পরিক যুলুমের কিসাস নেওয়া হবে। পরিশেষে তারা যুলুম থেকে একদম পরিস্কার-পরচ্ছিন্ন হয়ে সুন্দরতম অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া فإذا عبروا বাক্য দ্বারা এই কথার প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ তারা যখন পুলসিরাত পার হবে এবং জাহান্নামে পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে, তখন তারা একটি কানতারার উপর থামবে। সেতু, ওভার ব্রীজ এবং যমীনের উপর যেসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়, তার চেয়ে উঁচু বস্ত্তকে কানতারা বলা হয়। এই কানতারা সম্পর্কে একাধিক কথা পাওয়া যায়। কেউ বলেছেনঃ এটি হচ্ছে পুলসিরাতের ঐ কিনারা, যা জান্নাতের নিকটবর্তী। কেউ কেউ বলেছেনঃ এটি হচ্ছে শুধু মুমিনদের জন্য খাস আরেকটি সিরাত।

فَيُقْتَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ অতঃপর তাদের একজনের জন্য অপরজন থেকে কিসাস বা বদলা গ্রহণ করা হবেঃ অর্থাৎ তাদের মধ্যকার পারস্পরিক যুলুমের বদলা নেওয়া হবে। যালেম থেকে মাযলুমের হক আদায় করে নেওয়া হবে। অতঃপর তাদেরকে যখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে অর্থাৎ মাযলুমের হক আদায় এবং অন্যান্য দায়ভার হতে মুক্ত হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হবে। তখন তাদের কতকের অন্তরে অন্যদের প্রতি যেই হিংসা-বিদ্বেষ ছিল, তা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ﴾

‘‘তাদের মনে যে সামান্য কিছু মনোমালিন্য থাকবে তা আমি বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে বসবে’’। (সূরা হিজরঃ ৪৭)

[1] - কেননা জান্নাতের ঘরসমূহ এবং উহার নেয়ামতগুলো অত্যন্ত পবিত্র ও সুন্দর। সুতরাং তার অধিবাসীগণও হবে পবিত্র। তাই যার মধ্যে সামান্যতম দোষ-ত্রুটি এবং অপবিত্রতা থাকবে, তাকে উহা থেকে পবিত্র না করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবেনা।