৭- এটি সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর মাখলুকের সাথেই। এটি সাব্যস্ত করা আরশের উপর তাঁর সমুন্নত হওয়ার পরিপন্থি নয়

৭- إثبات معية الله لخلقه وأنها لاتنافي علوه فوق عرشه

৭- এটি সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর মাখলুকের সাথেই। এটি সাব্যস্ত করা আরশের উপর তাঁর সমুন্নত হওয়ার পরিপন্থি নয়:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

أَفْضَلُ الإِيمَانِ أَنْ تَعْلَمَ أَنَّ اللهَ مَعَكَ حَيْثُمَا كُنْتَ" حَدِيثٌ حَسَنٌ.أخرجه الطبراني من حديث عبادة بن الصامت

‘‘সর্বোত্তম ঈমান হলো তুমি জানবে যে, যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমার সাথেই’’।[1] হাদীছটি হাসান। ইমাম তাবারানী উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) থেকে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلاةِ؛ فَلاَ يَبْصُقَنَّ قِبَلَ وَجْهِهِ، وَلاَ عَنْ يَمِينِهِ؛ فَإِنَّ اللهَ قِبَلَ وَجْهِهِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ،

‘‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। এমনকি ডান দিকেওনা। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর সামনে রয়েছেন।[2] একান্ত যদি থুথু ফেলতেই হয় তাহলে বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলবে। বুখারী ও মুসলিম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

اللهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَالأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنَ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا، أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ؛ اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ وَأَغْنِنِي مِنَ الْفَقْرِ رِوَاه مُسْلِمٌ،

‘‘হে আল্লাহ! হে সাত আসমান ও যমীনের প্রভু! হে আরশে আযীমের রব! হে আমাদের প্রতিপালক এবং সকল বস্ত্তর প্রতিপালক! হে দানা ও বীচি বিদীর্ণকারী! হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন অবতীর্ণকারী! আমি তোমার নিকট আমার নফসের অনিষ্ট হতে এবং ভূপৃষ্ঠে প্রত্যেক বিচরণকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার ললাট তুমি ধারণ করে আছ।

হে আল্লাহ! তুমিই الأَوَّل (প্রথম)। তোমার পূর্বে কেউ ছিলনা। তুমিই الآخر (সর্বশেষ), তোমার পর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। তুমিই الظَاهِر (সবকিছুর উপরে), তোমার উপরে আর কিছুই নেই। তুমিই البَاطِن (মাখলুকের অতি নিকটে), তোমার চেয়ে অধিক নিকটে আর কিছু নেই’’।[3] তুমি আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করো এবং আমাকে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত করো। ইমাম মুসলিম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

সাহাবীগণ যখন আল্লাহর যিকির করার সময় তাদের আওয়াজ উঁচু করলেন তখন তিনি বললেন,

أَيُّهَا النَّاسُ! اِرْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا إِنَّمَا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا قَرِيبًا، إِنَّ الَّذي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ" مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

‘‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের জন্য সহজ পন্থা অবলম্বন করো। কেননা তোমরা তো বধির বা দূরে অবস্থানকারী কাউকে আহবান করছো না। যাকে তোমরা আহবান করছো তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা এবং অতি নিকটে। তোমাদের কেউ বাহনে আরোহন করা অবস্থায় তার বাহনের ঘাড়ের যত নিকটবর্তী থাকে, তোমরা যাকে আহবান করছো, তিনি তার চেয়েও আহবানকারীর অধিক নিকটে’’।


ব্যাখ্যাঃ أَفْضَلُ الإِيمَانِ সর্বোত্তম ঈমানঃ অর্থাৎ ঈমানের বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম বৈশিষ্ট হচ্ছে তুমি যেখানেই থাক না কেন, এই কথা বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমার সাথেই। পূর্বোক্ত কথার মধ্যে দলীল পাওয়া যায় যে, ঈমানের তারতম্য হয়। অর্থাৎ সকল মুমিনের ঈমান এক সমান নয়।

أَنْ تَعْلَمَ أَنَّ اللهَ مَعَكَ তুমি জানবে যে, আল্লাহ তোমার সাথেইঃ অর্থাৎ ইলমের মাধ্যমে এবং তোমার যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার মাধ্যমে তিনি তোমার সাথেই, তুমি যেখানেই থাকোনা কেন। যে ব্যক্তি ইহা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, তার ভিতর ও বাহির একই রকম হবে এবং সকল স্থানেই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলবে। ইমাম তাবারানী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম তাবারানী হচ্ছেন, আবুল কাসেম সুলায়মান আল-লাখমী। হাদীছের যেসব হাফেয বিপুল সংখ্যক হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মু’জামুল কাবীরে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

এই হাদীছে দলীল পাওয়া গেল যে, আল্লাহ তাআলা ইলমের মাধ্যমে মাখলুকের সাথেই এবং তিনি তাদের আমলসমূহ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। সুতরাং বান্দার উপর আবশ্যক হলো সবসময় এই কথা মনে রাখা। এতে তার আমল সুন্দর হবে।

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلاةِ তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়ঃ অর্থাৎ নামায শুরু করে, তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। হাদীছে উল্লেখিত قبل শব্দের ‘কাফ’ বর্ণে যের দিয়ে এবং ‘বা’ বর্ণে যবর দিয়ে পড়তে হবে।

فَإِنَّ اللهَ قِبَلَ وَجْهِهِ কেননা আল্লাহ তাআলা তার সামনের দিকে রয়েছেনঃ এটি হচ্ছে নামাযীকে কিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করতে নিষেধ করার কারণ। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নামাযীর চেহারার দিকে রয়েছেন। অর্থাৎ সামনের দিকে রয়েছেন। যেভাবে সামনে থাকা আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয়, তিনি সেভাবেই নামাযীর সামনে থাকেন।[4] এতে করে এটি আবশ্যক হয়না যে, তিনি মাখলুকের সাথে একদম মিলিত অবস্থায় রয়েছেন। বরং আসমানসূহের উপর আরশে তিনি সমুন্নত। আরশে সমুন্নত হয়েও তিনি মাখলুকের অতি নিকটে এবং তাদের সকলকে পরিবেষ্টনকারী।

নামাযী যেন তার ডান দিকেও থুথু না ফেলে। কেননা ডান দিকের আলাদা মর্যাদা রয়েছে এবং নামাযীর ডান দিকে রয়েছে দু’জন ফেরেশতা। যেমন বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এসেছে।

وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ একান্ত যদি নামাযী ব্যক্তিকে থুথু ফেলতেই হয় তাহলে বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলবেঃ অর্থাৎ নামাযী ব্যক্তি যদি থুথু ফেলতে বাধ্য হয়, তাহলে সে যেন তাঁর বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে থুথু নিক্ষেপ করে।

এই হাদীছ থেকে প্রমাণিত হলো, আসমানসমূহের উপরে আরশে সমুন্নত হয়েও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নামাযী বান্দার নিকটবর্তী হন এবং নামাযীর দিকে বিশেষভাবে অগ্রসর হন (মনোনিবেশ করেন)।

اللهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَالأَرْضِ হে আল্লাহ! হে সাত আসমান ও যমীনের প্রভুঃ اللهم এর মূল হচ্ছে يا ألله। আল্লাহ শব্দের পূর্ব হতে হরফে নেদা يا কে ফেলে দিয়ে তার বদলে শেষে ميم বাড়ানো হয়েছে। হে সাত আসমানের প্রভু! অর্থাৎ উহার স্রষ্টা ও মালিক।

وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ আরশে আযীমের রবঃ অর্থাৎ এমন বিশাল আরশের মালিক, যার বিশালতা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়। আরশ হচ্ছে আল্লাহর সর্ববৃহৎ সৃষ্টি। আরশের ব্যাখ্যা পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।

رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ হে আমাদের প্রতিপালক এবং সকল বস্ত্তর প্রতিপালক! অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা, সকল জিনিষের সৃষ্টিকর্তা এবং সবকিছুর মালিক। এতে সাব্যস্ত হলো, সবকিছুর প্রতিপালনকারী একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।

فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى দানা ও বীচি বিদীর্ণকারীঃ খাদ্য দ্রব্যের দানা ও খেজুরের বীচিকে উদ্গত করণের জন্য বিদীর্ণকারী। মুসা (আঃ)এর উপর তাওরাত, ঈসা (আঃ)এর উপর ইঞ্জিল অবতীর্ণকারী এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন অবতীর্ণকারী। এই হাদীছে তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুরআন, -এই তিনটি কিতাবের ফযীলত প্রমাণিত হলো। আরো জানা গেল যে, এই কিতাবগুলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। أعوذ بك আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছিঃ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি এবং তোমার পথকেই আকঁড়ে ধরছি।وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ তোমার নিকট ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী প্রত্যেক প্রাণীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছিঃ ভূপৃষ্ঠে যেসব প্রাণী বিচরণ করে, সেগুলোর প্রত্যেকটিকেই دابة বলা হয়।

أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا যার ললাট তুমি ধারণ করে আছোঃ মাথার সামনের অংশকে ললাট বা কপাল বলা হয়। অর্থাৎ হে আল্লাহ! ঐসব অনিষ্টকারী প্রাণী যেহেতু তোমার ক্ষমতা ও আয়ত্তাধীন এবং তুমি যেভাবে ইচ্ছা সেগুলোকে সেভাবেই পরিচালনা করো, তাই তুমি আমার উপর থেকে ঐগুলোর অনিষ্ট দূর করে দাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু’আয় বলতেন,

«أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ»

‘‘হে আল্লাহ! তুমিই الأَوَّل (প্রথম)। তোমার পূর্বে কিছুই ছিলনা। তুমিই الآخر (সর্বশেষ), তোমার পর কিছুই থাকবেনা। তুমিই الظَاهِر (সবকিছুর উপরে), তোমার উপরে আর কিছুই নেই। তুমিই البَاطِن (অতি নিকটে), তোমার চেয়ে অধিক নিকটে আর কিছুই নেই’’।[5] আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার এই চারটি নামের মধ্যে দু’টি নাম তাঁর চিরস্থায়িত্ব ও অবিনশ্বরতার প্রমাণ করে। এই দু’টি নাম হচ্ছে الأَوَّل (প্রথম এবং الآخر (সর্বশেষ)। আর বাকী দু’টি নাম আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির উপরে সমুন্নত হওয়া এবং সৃষ্টির একদম নিকটে হওয়ার প্রমাণ করে। এই নাম দু’টি হচ্ছে الظَاهِر (প্রকাশ্যমান) এবং البَاطِن (অতি নিকটে)। হাদীছের মধ্যে এই শেষ দু’টি নামই হচ্ছে মহল্লে শাহেদ। অর্থাৎ এখান থেকেই শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) দলীল গ্রহণ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা সকল মাখলুকের উপরে এবং তিনি নিকটেও। কেননা আল্লাহ তাআলার এই নাম দু’টিতে আল্লাহর জন্য علو (মাখলুকের উপরে সমুন্নত হওয়া) এবং قرب (সৃষ্টির নিকটে হওয়া) সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহর এ দু’টি সিফাত পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক নয়। আল্লাহ তাআলা উপরে সমুন্নত হয়েও মাখলুকের নিকটে এবং মাখলুকের নিকটবর্তী হয়েও সকল মাখলুকের উপরে সমুন্নত।

اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ তুমি আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করোঃ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর থেকে তোমার হকসমূহ এবং মাখলুকের হকসমূহ আদায়ের ব্যবস্থা করো। বান্দা নিজের শক্তিতে অসৎকাজ করতে অক্ষম এবং নিজের শক্তিতে কোন সৎকাজই করতে পারেনা, -এখানে তাই বলা হয়েছে।

وَأَغْنِنِي مِنَ الْفَقْرِ এবং আমাকে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত করোঃ الفقر অর্থ হচ্ছে প্রয়োজন, অভাব। ফকীর বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যার কিছুই নেই অথবা যার কাছে প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বস্ত্ত রয়েছে। এই হাদীছ থেকে আরো জানা গেল যে, প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এবং দুআ কবুলের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নাম ও সিফাতের উসীলা দেয়া বৈধ।

সাহাবীগণ যখন আল্লাহর যিকির করার সময় তাদের আওয়াজ উঁচু করলেনঃ এটি ছিল খায়বারের যুদ্ধের ঘটনা। যেমন এই হাদীছের কোন কোন সনদে সুস্পষ্ট করেই তা বলা হয়েছে। সাহাবীগণ যেই যিকিরের মধ্যে আওয়াজ উঁচু করেছিল, তা ছিল তাকবীর। অর্থাৎ তারা উঁচু আওয়াজে ألله أكبر ألله أكبر لاإله إلا الله বলছিল। اربعوا অর্থ হচ্ছে ارفقوا অর্থাৎ নিজেদের জন্য সহজ করো।

فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا কেননা তোমরা তো বধির বা দূরে অবস্থানকারী কাউকে আহবান করছো নাঃ এটি হচ্ছে আওয়াজ অতিরিক্ত উুঁচ না করার এবং নিজেদের উপর সহজ করার আদেশ দেয়ার কারণ। অর্থাৎ তোমরা তো এমন কাউকে ডাকছো না, যিনি তোমাদের ডাক শুনেন না এবং তোমাদেরকে দেখেন না। সুতরাং এখানে আল্লাহ তাআলার পবিত্র সত্তা থেকে এমন আপদ ও ত্রুটি নাকোচ করা হয়েছে, যা শ্রবণ করার প্রতিবন্ধক এবং তাঁর পবিত্র সত্তা হতে এমন দোষ-ত্রুটি নাকোচ করা হয়েছে, যা আল্লাহ তাআলার জন্য শ্রবণ করার প্রতিবন্ধক। সেই সাথে হাদীছে উক্ত দোষ দু’টির বিপরীত গুণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ إِنَّمَا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا قَرِيبًا যাকে তোমরা আহবান করছো তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা এবং তোমাদের অতি নিকটে। সুতরাং আওয়াজ উঁচু করার কোন দরকার নেই।

إِنَّ الَّذي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ তোমাদের কেউ বাহনে আরোহন করা অবস্থায় তার বাহনের ঘাড়ের যত নিকটবর্তী থাকে, তোমরা যাকে আহবান করছো, তিনি তার চেয়েও আহবানকারীর অধিক নিকটেঃ সুতরাং যারা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করে এবং যারা তাঁর যিকির করে তিনি তাদের অতি নিকটে। তাই আওয়াজ উঁচু করে দুআ করার প্রয়োজন নেই। তিনি এত নিকটে যে, আওয়াজ নীচু করে দুআ করলে যেভাবে শুনেন, উঁচু আওয়াজে দুআ করলেও ঠিক সেভাবেই শুনেন।

হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে দুআ করে, আল্লাহ তাআলা তাদের নিকটবর্তী হন। হাদীছে ইহা সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি উঁচু আওয়াজগুলো যেমন শুনেন, নীচু ও অস্পষ্ট আওয়াজগুলো সেভাবেই শুনেন।

উপরের সবগুলো হাদীছ প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ মাখলুকের সাথে, তাদের নিকটে, তিনি মাখলুকের সব আওয়াজ শুনেন এবং তিনি তাদের সমস্ত নড়াচড়া (আমলসমূহ) দেখেন। আর তিনি যে সৃষ্টির উপরে এবং আরশের উপর সমুন্নত এটি তার বিরোধী নয়।আল্লাহর মাঈয়াত তথা সৃষ্টির সাথে থাকার ব্যাখ্যা এবং উহার প্রকারভেদ কুরআনুল কারীমের দলীল-প্রমাণসহ পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।

[1] - এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সত্তাসহ আরশের উপর সমুন্নত হয়েও মাখলুকের সাথে ও নিকটে। মাখলুকের নিকটে থাকা আরশের উপর সমুন্নত হওয়ার পরিপন্থী নয়। তিনি ইলম ও ক্ষমতার মাধ্যমে মাখলুকের অতি নিকটে। আলেমদের থেকে এই ব্যাখ্যাও বর্ণিত হয়েছে। সুফীদের যেসব লোক আরশের উপরে আল্লাহ তাআলার সমুন্নত হওয়াকে অস্বীকার করে এবং বলে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সত্তাসহ মাখলুকের সাথে, তাদের কথা সম্পূর্ণ বাতিল।

[2] - আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল বান্দার নিকবর্তী হলেও তিনি বিশেষভাবে নামাযীর নিকটবর্তী হন। আরশের উপর সমুন্নত হওয়া এবং একই সময় নামাযীর সামনে হওয়া আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

[3] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র ওয়াদ্ দু’আ।

[4] - আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরশের উপর সমুন্নত। কেউ যদি প্রশ্ন করে আরশের উপর থেকে নামাযীর সামনে তাঁর দৃষ্টি রাখেন কিভাবে? এর জবাব হচ্ছে, আল্লাহই ভাল জানেন, তিনি কিভাবে নামাযীর সামনে তাঁর দৃষ্টি রাখেন। ঠিক এই প্রশ্ন করাও ভুল যে, আল্লাহ তাআলা আরশের উপর থাকা সত্ত্বেও শেষ রাতে কীভাবে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। কেননা আল্লাহর সুমহান গুণাবলীর কোনোটির ব্যাপারেই এই প্রশ্ন করা যাবেনা যে, তার ধরণ কী? আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীছগুলো সাহাবীগণ শুনেছেন। তাদের কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন নি। সুতরাং তিনি কিভাবে নামাযীর নিকটবর্তী হন বা সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখেন? এই প্রশ্ন করা বিদআত। এ বিষয়ে ইমাম মালেক (রঃ)এর উক্তি পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। বান্দার জন্য একই সময় একাধিক স্থানে থাকা অসম্ভব, আল্লাহর জন্য আরশের উপর থেকেও দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করা নামাযীর নিকটবর্তী হওয়া বা নামাযীর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা মোটেই অসম্ভব নয় এবং বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে বুঝার বহির্ভূতও নয়।

পূর্বাকাশে সকাল বেলা যখন সূর্য উদিত হয়, তখন যদি আমরা পূর্ব দিকে ফিরে দাঁড়াই এবং বিকাল বেলা যখন পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত যায়, তখন আমরা যদি পশ্চিম দিকে ফিরি তখন সূর্য আমাদের সমানে থাকে। অথচ তা থাকে আকাশে এবং আমাদের বহু উপরে। সূর্য আমাদের সামনে প্রকাশিত হওয়ার জন্য আকাশ থেকে নেমে আসেনা। আল্লাহর সৃষ্টি যদি একই সাথে উপরে এবং আমাদের সামনে থাকতে পারে, তাহলে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তাআলার জন্য আরশের উপরে এবং নামাযীর সামনে থাকা কি করে অসম্ভব হতে পারে!!!

[5] - বিজ্ঞ আলেম ও কালাম শাস্ত্রবিদগণ আল্লাহ তাআলার এই নামগুলোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। মুসলিম শরীফে বর্ণিত উপরোক্ত সহীহ হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেহেতু এগুলোর ব্যাখ্যা এসে গেছে, তাই এসব ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন ছিলনা। আল্লাহ তাআলার এই চারটি নাম তথা الأَوَّل (সর্বপ্রথম) ও الآخر (সর্বশেষ) এবং الظَاهِر (সবকিছুর উপরে) ও البَاطِن (অতি নিকটে) প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টিকেই সকল দিক থেকে পরিবেষ্টন করে আছেন। الأَوَّل (সর্বপ্রথম) ও الآخر (সর্বশেষ) -এই দু’টি নাম প্রমাণ করে যে, তিনি সমস্ত কাল ও যামানাকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। অর্থাৎ স্থান, কাল এবং তাতে যত মাখলুক সৃষ্টি করা হয়েছে, তা সৃষ্টি করার পূর্বেও তিনি ছিলেন। স্থান, কাল ও সমস্ত মাখলুক ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও তিনি অবশিষ্ট থাকবেন। অর্থাৎ যখন কিছুই ছিল না তখনো তিনি ছিলেন এবং যখন কিছুই থাকবেনা তখনো তিনি থাকবেন।

আর আল্লাহ তাআলার الظَاهِر (সবকিছুর উপরে) ও البَاطِن (অতি নিকটে) এই নাম দু’টি প্রমাণ করে যে, তিনি উর্ধ্বজগৎ এবং নিম্নজগতের সকল স্থান এবং সেসব স্থানের সবকিছুকেই (তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দ্বারা) ঘেরাও করে আছেন।

আল্লাহর যাহের নামটি প্রমাণ করে যে, তিনি সকল মাখলুকের উপরে। আরবী ভাষায় প্রত্যেক বস্ত্তর উপরের অংশকে যাহের বলা হয়। সকল মাখলুক তাঁর নীচে। তাঁর উপরে কোন মাখলুক নেই।

কেউ কেউ যাহের অর্থ করেছেন যে, তিনি প্রকাশ্য। তাদের মতে الظهور থেকে الظاهر নামটি এসেছে। ظهور অর্থ প্রকাশিত হওয়া। সুতরাং তিনি তাঁর নিদর্শন, দলীল-প্রমাণ এবং কার্যাবলীর মাধ্যমে মানুষের বিবেকের নিকট অত্যন্ত প্রকাশিত। আর তিনি الباطن অপ্রকাশ্য এই হিসাবে যে, দুনিয়ার অন্যান্য দৃশ্যমান জিনিষের মত তাঁকে দেখা যায়না।

সুতরাং এই চারটি নামের মূল অর্থই হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টিকে সকল দিক থেকেই ঘেরাও করে আছেন। সৃষ্টির সূচনার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা বিদ্যমান থাকা এবং সব সৃষ্টির শেষেও অনন্তকাল তিনি অবশিষ্ট থাকা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যে সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এবং সবশেষে যে সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করবেন, তার সবই তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি যাহের তথা সবকিছুর উপরে হওয়া এবং বাতেন তথা সবকিছুর নিকটে হওয়ার দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্তকেই (তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দ্বারা) ঘেরাও করে আছেন।

সেই হিসাবে আল্লাহ তাআলার الأول নামটি তাঁর সর্বপ্রথম হওয়ার প্রমাণ করে। তাঁর الآخر নামটি তার চিরস্থায়িত্বের প্রমাণ করে। তাঁর الظاهر নামটি প্রমাণ করে যে, তিনি সবকিছুরে উপরে এবং তিনি সর্বাধিক মহান। আর আল্লাহ তাআলার الباطن নামটি প্রমাণ করে যে, তিনি সৃষ্টির অতি নিকটে এবং তাদের সাথে।

আল্লাহ তাআলার الباطن নামটির ব্যাখ্যায় আলেমদের থেকে বিভিন্ন উক্তি পাওয়া যায়। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ অর্থাৎ তুমি অতি নিকটে, তোমার চেয়ে অধিক নিকটে আর কিছুই নেই। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, الباطن অর্থ নিকটে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা মাখলুকের নিকটবর্তী এবং তিনি স্বীয় ইলমের মাধ্যমে তাদেরকে বেষ্টন করে আছেন। তিনি তাদের সকল গোপন এবং অস্পষ্ট বিষয় ও অবস্থা সম্পর্কে জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنكُمْ وَلَٰكِن لَّا تُبْصِرُونَ আমি তোমাদের চেয়ে সেই মুমূর্ষ ব্যক্তির অধিক নিকটবর্তী, কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা। (সূরা ওয়াকিয়াঃ ৮৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ﴾

‘‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি। আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি৷ আমি তার ঘাড়ের শাহ রগের চেয়েও অধিক নিকটে আছি’’। (সূরা কাফঃ ১৬)

এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান ভিতর ও বাহির থেকে এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছে যে, আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান তার যতটা নিকটে ততটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও নয় । তার কথা শোনার জন্য আমাকে কোথাও থেকে আসতে হয়না । তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আমি সরাসরি জানি । অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় পাকড়াও করতে হয় তখনো আমাকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয়না। সে যেখানেই থাকুক, সর্বদা আমার আয়ত্বাধীনেই আছে যখন ইচ্ছা আমি তাকে পাকড়াও করবো।

কেউ কেউ বলেছেনঃ الباطن অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির দৃষ্টিসীমা ও ধারণার অন্তরালে এবং অপ্রকাশ্য। যারা এই কথা বলেছেন, তাদের কেউ কেউ একটু বাড়িয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা যেহেতু অপ্রকাশ্য, তাই পৃথিবীর কোথাও তাঁকে খুঁজে বের করা বা তাঁর দেখা পাওয়া যাবেনা। তিনি সব গুপ্ত জিনিসের চেয়ে অধিক গুপ্ত। কারণ, ইন্দ্রীয়সমূহ দ্বারা তাঁর সত্তাকে অনুভব ও উপলব্ধি করা তো দূরের কথা বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তাভাবনা ও কল্পনা পর্যন্ত তাঁর গভীর রহস্য ও বাস্তবতাকে স্পর্শ করতে পারেনা।

যারা আল্লাহ তাআলার الباطن নামের উপরোক্ত অর্থ বর্ণনা করেছেন, তারা তাঁর الظاهر নামের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, যাহের অর্থ প্রকাশ্য। তারা উভয় নামের অর্থ এভাবে করেছেন যে, তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই অপ্রকাশ্য। তিনি সব প্রকাশ্যের চেয়ে অধিক প্রকাশ্য। কারণ পৃথিবীতে যেসব জিনিষের প্রকাশ দেখা যায় তা তাঁরই গুণাবলী, তাঁরই কার্যাবলী এবং তাঁরই নূরের প্রকাশ।

কেউ কেউ বলেছেনঃ الباطن অর্থ হচ্ছে هو العالم بما بطن يقال بطنت الأمر اذا عرفت باطنهতিনি সকল গুপ্ত বস্ত্ত সম্পর্কে অবগত। যেমন বলা হয়, بطنت الأمر আমি বিষয়টির গোপন অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই কথা আপনি ঠিক তখনই বলেন, যখন ঐ বিষয়ের গুপ্ত ব্যাপার সম্পর্কে জানতে পারেন। দেখুনঃ শাইখ সিন্দী (রঃ)এর টিকাসহ ইবনে মাজাহ, (৮/২১৭)

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, হাদীছে যেহেতু বলা হয়েছে الظاهر অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সবকিছুর উপরে, তাঁর উপরে আর কিছু নেই, তাই যাহেরের মোকাবেলায় الباطن এর অর্থ এ রকম বলা যাবেনা যে, তিনি সবকিছুর নীচে, তাঁর নীচে আর কিছুই নেই, নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং আল্লাহ আমাদের নীচে, -এটি বলা অবৈধ। কেননা কোন কিছুর নীচে হওয়া ত্রুটিপূর্ণ সিফাত বা বিশেষণ। আল্লাহ তাআলার সত্তা উপরে হওয়ার বিশেষণে বিশেষিত, নীচে হওয়ার বিশেষণে নয়। উপরে হওয়া আল্লাহর সিফাতে যাতীয়া বা সত্তাগত গুণ।

মোটকথা আল্লাহ তাআলার উপরোক্ত চারটি নামের ব্যাখ্যায় উপরে বর্ণিত অর্থগুলোর সবগুলোই বা অধিকাংশই সঠিক। তবে ঐ নামগুলোর ব্যাখ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন, তাই আমাদের বিশ্বাস করা ও মেনে নেওয়া আবশ্যক। যেই অর্থ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তার বিপরীত ব্যাখ্যা সাহাবী, তাবেঈ এবং সালাফে সালেহীন থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি। সুতরাং তা গ্রহণ করাই অধিক নিরাপদ।