নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি
الدعاء قبل السلام وأنواعه সালাম ফিরার পূৰ্বে দুআ পাঠ এবং এর প্রকারভেদ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছলাতের ভিতর[1] বিভিন্ন দুআ পাঠ করতেন। কখনো এটি, কখনো ওটি, কখনো অন্যটি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুছল্লী ব্যক্তিকে তার নির্বাচিত দুআ পাঠের নির্দেশও দিয়েছেন।[2] এই সেই দু'আগুলোঃ

১।

للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মাসীহুদ দাজ্জালের ফিৎনাহ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। জীবন মরণের ফিৎনাহ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ! মা'ছাম[3] (যার কারণে মানুষ পাপে লিপ্ত হয়) ও মাগরাম অর্থাৎ ঋণ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।[4]

২।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَشَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি তার অনিষ্ট থেকে যা করেছি[5] এবং যা [এখনো] করিনি তার অনিষ্ট থেকেও।[6]

৩।

اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابَاً يَسِيرَاً

হে আল্লাহ্‌! অতি সহজভাবে আমার হিসাব নিও।[7]

৪।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ أَحْيِنِي مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَأَسْأَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ (وَفِىْ رِوَيَةٍ اَلْحَكَمُ) وَاَلْعَدْلِ فِي الْغَضَبِ وَالرِّضَا وَأَسْأَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى وَأَسْأَلُكَ نَعِيمًا لا يَبِيْدُ وَأَسْأَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ (لاَ تَنْفَدُ وَ) لا تَنْقَطِعُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضىٰ بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ وَ(أَسْأَلُكَ) الشَّوْقَ إِلَى لِقَائِكَ فِي غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ وَلا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ اللَّهُمَّ زَيِّنَّا بِزِينَةِ الإِيمَانِ وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُهْتَدِينَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার গায়েব জানা ও মাখলুকের উপর ক্ষমতা থাকার অসীলায়, যে পর্যন্ত আমার জীবিত থাকা আমার জন্য ভাল মনে কর সে পর্যন্ত আমাকে হায়াত দান কর। আর আমার জন্য যখন মরণ ভাল মনে করা তখন আমাকে মৃত্যুদান কর। হে আল্লাহ! দৃশ্যমান ও অদৃশ্যের বিষয়ে তোমার ভীতি (আল্লাহভীরুতা) চাই। আরো চাই তোমার নিকট উচিত (সত্য) কথা (অন্য বর্ণনা মতে ফায়সালার কথা) এবং ক্রোধ ও সন্তুষ্টাবস্থায় ন্যায়পরায়ণতা। চাই ধনাঢ্যতা ও দারিদ্রের মধ্যমাবস্থা। আর তোমার নিকটস্থায়ী নিআমত চাই, তোমার নিকট চক্ষুশীতলকারী এমন জিনিস চাই যা নিঃশেষ নিবৃত্ত হবার নয়, তোমার ফায়সালা করার পর তাতে তোমার সন্তুষ্টি চাই। মৃত্যুর পর আরামদায়ক স্থায়ী জীবন চাই। তোমার চেহারা মুবারক দর্শনের স্বাদ আস্বাদন করতে চাই। তোমার সাক্ষাতের প্রতি আকর্ষণ চাই কোনরূপ ক্ষতিকর রোগ-ব্যাধি ও ভ্ৰষ্টকারী ফিৎনাহ ব্যতীত। হে আমাদের রব! ঈমানের অলঙ্কার দ্বারা আমাদেরকে অলংকৃত কর এবং আমাদেরকে হিদায়াতপ্রাপ্ত হিদায়াত দানকারী বানাও।[8]

৫। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুবকর (রাযিঃ)-কে এই দুআ বলতে শিখিয়েছিলেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ. فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি, আর কেউ পাপরাশি মোচন করতে পারবে না একমাত্ৰ তুমি ছাড়া। অতএব আমাকে ক্ষমা কর, ক্ষমা তোমার নিকটেই রয়েছে। আর আমাকে রহম কর, নিশ্চয় তুমি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।[9]

৬।

اللهم إني أسألك من الخير كله [عاجله وآجله] ما علمت منه وما لم أعلم وأعوذ بك من الشر كله [عاجله وآجله] ما علمت منه وما لم أعلم وأسألك (وفي رواية: اللهم إني أسألك) الجنة وما قرب إليها من قول أو عمل وأعوذ بك من النار وما قرب إليها من قول أو عمل وأسألك (وفي رواية: اللهم إني أسألك) من [ال] خير ما سألك عبدك ورسولك [محمد وأعوذ بك من شر ما استعاذك منه عبدك ورسولك محمد صلى الله عليه وسلم] [وأسألك] ما قضيت لي من أمر أن تجعل عاقبته [لي] رشدا

অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সকল প্রকার কল্যাণ চাই-ইহকাল ও পরকালের এবং যার সম্পর্কে আমি জানি ও যার সম্পর্কে আমি জানি না। আর তোমার নিকট সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই ইহকাল ও পরকালের এবং যার সম্পর্কে আমি জানি ও যার সম্পর্কে জানিনা। আর তোমার নিকট (অপর বর্ণনায় এসেছে- হে আল্লাহ! তোমার নিকট) জান্নাত চাই এবং যে সব কথা ও কাজ তার নিকটবর্তী করে তা করার তাওফীক চাই। আর জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ চাই এবং যেসব কথা ও কাজ এর নিকটবর্তী করে তা থেকেও আশ্রয় চাই। আর তোমার নিকট (অপর বর্ণনাতে— হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট) ঐ কল্যাণ চাই যা চেয়েছিলেন তাোমার বান্দা ও রাসূল। [মুহাম্মাদ, আর ঐ অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই যার থেকে আশ্রয় চেয়েছিলেন তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আর তোমার নিকট এও চাই-আমার জন্য যাই তুমি ফয়সালা কর না কেন তার পরিণতি যেন আমার জন্য সঠিক হয়।[10]

৭।

قال لرجل ما تقول في الصلاة قال أتشهد ثم أسأل الله الجنة وأعوذ به من النار أما والله ما أحسن دندنتك ولا دندنة معاذ فقال صلى الله عليه وسلم حولها ندندن

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন- তুমি ছলতের ভিতর কী (দু আ) বল? তিনি বললেন- আমি তাশাহহুদ পাঠ করি, অতঃপর আল্লাহর নিকট জান্নাত চাই এবং তাঁর নিকট জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড থেকে পরিত্রাণ চাই। কিন্তু আল্লাহর কসম! আপনার ও মুআযের চুপিসারে পাঠকৃত দু'আ[11] আমি ভালভাবে বুঝি না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যা বল তারই পাশাপাশি (সমাৰ্থবোধক দু'আ) আমরাও আওড়াই।[12]

৮।

اللهم إني أسألك يا الله (وفي رواية: بالله) [الواحد] الأحد الصمد الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد أن تغفر لي ذنوبي إنك أنت الغفور الرحيم. فقال صلى الله عليه وسلم: قد غفر له قد غفر له

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে তাশাহহুদের ভিতর বলতে শুনেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট চাচ্ছি, ওগো সেই আল্লাহ (অন্য বর্ণনা মতে, সেই আল্লাহর দোহাই দিয়ে) যিনি [এক] একক অমুখাপেক্ষী যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো জাতও নন। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই- তুমি আমার পাপরাশি ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি অতি দয়ালু ক্ষমাশীল- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ ব্যক্তির উক্ত দুআ শুনে) বললেনঃ “এ ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত, এ ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত।”[13]

৯।

اللهم إني أسألك بأن لك الحمد لا إله إلا أنت [وحدك لا شريك لك] [المنان] [يا] بديع السماوات والأرض يا ذا الجلال والإكرام يا حي يا قيوم [إني أسألك] [الجنة وأعوذ بك من النار] . [فقال النبي صلى الله عليه وسلم لأصحابه: (تدرون بما دعا) قالوا الله ورسوله أعلم. قال: (والذي نفسي بيد) لقد دعا الله باسمه العظيم (وفي رواية: الأعظم) الذي إذا دعي به أجاب وإذا سئل به أعطى)

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক ব্যক্তিকে তাশাহহুদের ভিতর পড়তে শুনলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এই অসীলায় চাই যে, (আমি বলি) কেবল তোমারই প্ৰশংসা, তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তুমি এক, তোমার কোন শরীক নেই, অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী হে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে মর্যাদা ও সম্মান দানের অধিকারী। হে চিরঞ্জাব ও সর্বনিয়ন্তা, আমি তোমার নিকট জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড থেকে পরিত্রাণ চাই। (এ দুআ শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছাহাবাদেরকে বললেন- “তোমরা কি জানো কিসের দ্বারা সে দুআ করেছে?” তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ-নিশ্চয় এ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাঁর মহান নামের (অন্য বর্ণনায় সুমহান নামের অর্থাৎ ইসমে আযমের) অসীলায়[14] দু'আ করেছে যার অসীলায় দুআ করা হলে কবুল করেন এবং

কিছু চাওয়া হলে প্ৰদান করে থাকেন।[15]

১০।

وكان من آخر ما يقول بين التشهد والتسليم: اللهم اغفر ما قدمت وما أخرت وما أسررت وما أعلنت وما أسرفت وما أنت أعلم به مني أنت المقدم وأنت المؤخر لا إله إلا أنت

তাশাহহুদ ও সালামের মাঝে শেষের পঠিতব্য দু'আগুলোর মধ্যে রয়েছে এ দু'আটি “হে আল্লাহ! আমি যে সব পাপ আগে করেছি, পরে করেছি, গোপনে করেছি, প্রকাশ্যে করেছিও যা অতি মাত্রায় করেছি, আর যার সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে বেশী জানো, তুমি অগ্রগামীকারী এবং পশ্চাৎগামীকারী, তুমি ছাড়া কেউ প্রকৃত উপাস্য নেই।[16]

[1] ছলাতের ভিতর বলেছি- “তাশাহহুদে” বলিনি কারণ মূল হাদীছে। এরূপই আছে- “তার ছলাতে” যা তাশাহহুদ ও অন্য কোন অবস্থাকে নির্দিষ্ট করছেনা। বরং এটা দুআ যোগ্য সকল অবস্থাকেই আওতাভুক্ত করছে যেমন সাজদাহ ও তাশাহহুদ, এ দু’অবস্থায় দু'আর নির্দেশ এসেছে যেমন ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

[2] বুখারী ও মুসলিম। আছরাম বলেছেনঃ আমি আহমাদ (রহঃ)-কে বললাম, তাশাহহুদের পর কিসের মাধ্যমে দুআ করবো? তিনি বললেন, যেভাবে হাদীছে এসেছে। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি কি বলেননি? ثم ليتخير من الدعاء ماشاء অতঃপর দু’আ থেকে যা ইচ্ছা নির্বাচন করে পাঠ করবে! তিনি বললেন, খবরে (হাদীছে) যে সব দুআ এসেছে সেগুলো থেকে পছন্দ মত পাঠ করবে। পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলেছিলেন, “যা হাদীছে এসেছে” একথা সংকলন করেছেন ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ)। আমি তার হস্তলিখা থেকে সংকলন করেছি “মাজমুফাতাওয়া” (৬৯/২১৮/১)। আর তিনি এটাকে শ্ৰেয় বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে, উপরোক্ত হাদীছে الدعاء শব্দের لام অব্যয়টির নির্দেশ এই যে, ঐ সকল দুআ যা আল্লাহ পছন্দ করেন, সব জাতীয় দুআ নয়। তার বক্তব্যের শেষ পর্যন্ত। অতঃপর তিনি বলেছেনঃ শরীয়ত ও সুন্নত সম্মত ছাড়া অন্য দুআ না বলাই অধিক শ্ৰেয়। অর্থাৎ ওগুলো বলা যা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে ও যা উপকারী। আমার (আলাবানীর) কথা তাই যা তিনি (আহমাদ) বলেছেন। তবে উপকারী দু’আ কোনটি তা জানা নির্ভর করে ছহীহ ইলমের উপর, আর এর অধিকারী তো অল্পই। অতএব সবচেয়ে উত্তম হলো-বর্ণিত দু'আর প্রতি ক্ষান্ত থাকা। বিশেষভাবে ঐ দু'আগুলো যেগুলো দু'আকারীর উদ্দেশ্যসম্বলিত। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।

[3] এমন বিষয় যার কারণে মানুষ পাপী হয়। অথবা স্বয়ং পাপকৰ্ম, এ ক্ষেত্রে “মাসদার” কে “ইসম” এর স্থলাভিষিক্ত ধরা হবে। অনুরূপভাবে “আল-মাগরাম” শব্দটিও, এর মাধ্যমে ঋণ উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এর দলীল হাদীছের পূর্ণাঙ্গ অংশ, আইশাহ (রাযিঃ) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কত বেশী পরিমাণ আপনি মাগরাম (ঋণ) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। তিনি বললেনঃ লোক যখন ঋণী হয় তখন কথা বললে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে।

[4] বুখারী ও মুসলিম।

[5] অর্থাৎ যা পাপ কাজ করেছি তার অনিষ্টতা থেকে এবং সৎকাজ না করার অনিষ্টতা থেকে ও সব সৎকাজ পরিত্যাগের অনিষ্টতা থেকে।

[6] নাসাঈ— ছহীহ সনদে ও ইবনু আবী আছিম “আসসুন্নাহ” কিতাবে, ৩৭০ আমার তাহকীক, বর্ধিত (ব্রাকেটের) অংশ তারই বর্ণনা থেকে।

[7] আহমাদ ও হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন ও যাহাবী তার সমর্থন করেছেন।

[8] নাসাঈ, হাকিম বর্ণনা করে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন এবং যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

[9] বুখারী ও মুসলিম। [দু’আ মাছূর সম্বন্ধে দু’টি তথ্য] (ক) এ দু'আটিকে আমাদের দেশের আলিম ও জনসাধারণ দু'আয়ে মাছুর বলে থাকে। ‘মাছুর’ অর্থ বর্ণিত বা বর্ণনাকৃত। এ অর্থেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যত দুআ বর্ণনা করা হয়েছে সবই মাছূর। নির্দিষ্টভাবে শুধু আল্লাহুম্মাইনী যলামতু নাফসী... দু'আকে মাছুর বলা ভুল। বরং এ দু'আটি “দু'আয়ে সিদ্দীকী” নামে নামকরণ করা হলে সঙ্গত হতো। (খ) লোকেরা এ দু'আটিকে মাছুর নাম দিয়ে ১নং দু'আর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অথচ প্রথমটি ওয়াজিব এবং এটি মুস্তাহাব। অতএব তাশাহহুদ ও দরুদের পর চার বিষয় থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার দু'আটি পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। এরপর যদি সুযোগ ও অবকাশ পাওয়া যায় তবে সেটি ও আরো অন্যান্য দুআ পাঠ করবে। (অনুবাদক)

[10] আহমাদ, তয়ালিসী, বুখারী “আল-আদাবুল মুফরাদ” গ্রন্থে, ইবনু মাজাহ, হাকিম বর্ণনা করে ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন ও যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন, আর আমি এটিকে ছহীহাহতে সংকলন করেছি। হাঃ নং ১৫৪২৷

[11] আপনার গোপন প্রার্থনা অথবা আপনার গোপন কথা। الدندنة অর্থঃ একজন মানুষের এমন কথা যার স্বর শুনা যায় কিন্তু বুঝা যায় না। حولها শব্দের ভিতর যমীর المقالة (নবী ও মুআযের অনুপলুব্ধ বচন)-এর দিকে প্রত্যাবর্তিত। অর্থাৎ আমাদের কথা তোমার কথার কাছাকাছি।

[12] আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ ও ইবনু খুযাইমাহ (১/৮৭/১) ছহীহ সনদে।

[13] আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ, হাকিম বর্ণনা করে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

[14] এ দু'আর ভিতর আল্লাহর সুন্দরতম নাম ও গুণাবলীর অসীলাহ গ্ৰহণ করার বিষয়টি রয়েছে। এ অসীলাহগ্ৰহণ করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাঁর এই বাণীতে নির্দেশ দিয়েছেন। وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا আর আল্লাহ্‌র অনেক সুন্দরতম নাম রয়েছে। অতএব সেগুলোর অসীলায় তাঁর নিকট দু'আ করা। (সূরা আ'রাফ ১৮০ আয়াত) এটা (এবং নিজস্ব আমল ও সৎ ব্যক্তির দু'আ) ব্যতীত অন্য কিছুর অসীলাহ যেমন কারো সম্মান, অধিকার ও মর্যাদার অসীলাহ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ও তাঁর সাথীবর্গ এটাকে স্পষ্ট ভাষায় মাকরুহ (ঘৃণিত) বলেছেন। আর সাধারণভাবে মাকরুহ বললে তার দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য হয়। বড় পরিতাপের বিষয় এই যে, অধিকাংশ লোককে (যাদের মধ্যে অনেক মাশায়েখবৰ্গও রয়েছেন) দেখবেন এই শরীয়ত সম্মত অসীলাটি থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিমুখ হয়েছেন। কদাচও আপনি তাদেরকে এ অসীলাটি ব্যবহার করতে শুনবেন না। অথচ তারা বিদআতী অসীলার সযন্ত ধারক বাহক। যার ব্যাপারে সর্বনিম্ন যে কথা বলা যায় তা হলো এই যে, এটি মতভেদপূর্ণ অসীলাহ। অথচ সচরাচর তারা এটিই ব্যবহার করেন, যেন এটি ছাড়া অন্য কোন অসীলা তাদের নিকট জায়েয নেই। এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ্ (রহঃ)-এর একটি ভাল কিতাব রয়েছে যার নাম “আততাওয়াসসুল অল-অসীলাহ” আপনি অবশ্যই এটা পড়বেন, কারণ এ বিষয়ে এটি একটি নযীরববিহীন অতি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। অতঃপর আমার “আততাওয়াসসুল” বইটিও পড়বেন। এটিও দু’বার মুদ্রিত হয়েছে। বিষয় ও উপস্থাপনা ভঙ্গিতে এ বইটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সমসাময়িক কতিপয় ডক্টরের নতুন নতুন কিছু সংশয়ের জবাবও এতে দিয়েছি। আল্লাহ আমাদের ও তাদের সকলকে হিদায়াত দান করুন।

[15] আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, বুখারী আল-আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে, ত্বাবারানী ও ইবনু মান্দাহ “আত্তাওহীদ” গ্রন্থে (৪৪/২, ৬৭/১, ৭০/১-২) একাধিক ছহীহ সনদে।

[16] মুসলিম ও আবু আওয়ানাহ।