নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি
جواز الاقتصار على الفاتحة শুধু সূরা ফাতিহা পড়ার উপর ক্ষান্ত হওয়া বৈধ

মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে এশার ছালাত পড়তেন অতঃপর ফিরে গিয়ে স্বীয় সাথীদেরকে নিয়ে ছালাত আদায় করতেন। তিনি এক রাত্রে ফিরে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে ছালাত পড়ছিলেন। তাঁর গোত্ৰ বনু সালামার “সুলাইম” নামক একটি যুবকও (তার পিছনে) ছালাত পড়ছিল। যখন তার পক্ষে ছালাত দীর্ঘ বিবেচিত হল তখন সে স্বীয় উটের লাগাম ধরে চলে যায়। ছালাত শেষে মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে এ সংবাদ দেয়া হল। তিনি বলে ফেললেনঃ এর মধ্যে মুনাফিকী রয়েছে। অবশ্যই আমি এই আচরণ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অবহিত করব। যুবকটি বললঃ আমিও মুয়াযের কৃতকর্মের কথা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানাব। পরদিন সকাল বেলা দুজনই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলেন। মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যুবকটির ঘটনা তাঁকে জানালেন। যুবক বললঃ হে আল্লাহর রাসূল, মুয়ায আপনার নিকট অনেকক্ষণ অবস্থান করে অতঃপর আমাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে আবার আমাদের প্রতি (ছালাত) দীর্ঘ করে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে মুয়ায তুমি কি ফিৎনাবাজ?

এই বলে তিনি যুবকটিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে ভাতিজা! তুমি কিভাবে ছালাত আদায় করা? সে বললঃ আমি সূরা ফাতিহা পড়ি এবং আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। তবে আমি আপনার ও মুয়াযের মৃদু শব্দের কথা (দুআ কালাম) পরিষ্কারভাবে বুঝি না[1] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি ও মুয়াযও এই দুই এর (জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার দু'আর) আশে পাশেই আছি অথবা এ ধরনের অন্য কোন কথা বললেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ যুবকটি বললঃ তবে শীঘ্রই মুয়ায তখন বুঝবে যখন শক্ৰ সম্প্রদায় আসবে। আর ইতিমধ্যে তাদেরকে শক্ৰ আগমনের সংবাদ জানানো হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন- অতঃপর তাঁরা এসে পড়ল এবং যুবকটি (যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে) শহীদ হয়ে গেল। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসুল্লাম) মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আমার ও তোমার প্রতিপক্ষটির (যুবকটির) কী খবর?” তিনি বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! সে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারকে সত্য প্রতিপন্ন করেছে, আমিই বরং মিথ্যা সেজেছি, সে শাহাদৎ বরণ করেছে।[2]

[1] এখানে دندنة শব্দের অর্থঃ কোন ব্যক্তির এমনভাবে কথা বলা যে, তার গুণগুণ শব্দ শুনা যায়। কিন্তু কথা বুঝা যায় না। ইহা هيمنة শব্দ অপেক্ষা একটু উচু স্বর বুঝায়।

[2] ইবনু খুযাইমাহ স্বীয় ‘ছহীহ’ গ্রন্থে (১৬৩৪) এবং বাইহাকী, উত্তম সনদে, প্রমাণযোগ্য অংশটুকু আবু দাউদে (৭৫৮ ছহীহ আবু দাউদ) ঘটনার মূল অংশটুকু বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। প্রথম বর্ধিত অংশটুকু মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, দ্বিতীয় বর্ধিত অংশটুকু মুসনাদে আহমদে (৫/৭৪) তৃতীয় ও চতুৰ্থ বর্ধিত অংশটুকু বুখারীতে রয়েছে। এই অধ্যায়ে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’রাকা’আত ছালাত আদায় করলেন তাতে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্যকিছু পাঠ করেন নি। (আহমাদ (১/২৮২) হারিছ বিন আবী উসামা স্বীয় মুসনাদে (পৃষ্ঠা ৩৮ যাওয়াইদ) ও বাইহাকী (২/৬২) বর্ণনা করেছেন দুর্বল সনদে।
আমি মুদ্রণগুলোতে এ হাদীছটিকে হাসান বলেছিলাম। অতঃপর আমার নিকট পরিস্ফুটিত হয়েছে যে, আমি ধারণা প্রসূতভাবে তা করেছি, কেননা এর ভিত্তি তুচ্ছে হানযালা আদদাউসীর উপর, আর সে হচ্ছে দুর্বল। আমি বুঝতে পারছিনা, কিভাবে এ ব্যাপারটি আমার নিকট গোপন থেকে গেল! সম্ভবতঃ আমি তাকে অন্য লোক মনে করেছিলাম। মোট কথা আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা যে, তিনি আমাকে নিজের ভুল ধরতে পারার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এজন্যই আমি তাড়াতাড়ি করে কিতাব থেকে এটি বাদ দিয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আমাকে উত্তম বিকল্প বের করে দেন যা হলো মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর হাদীছ। এটি ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) এর হাদীছের সমাৰ্থবোধক। সুতরাং সেই আল্লাহর প্রশংসা করছি। যার নিয়ামতে পুণ্য কার্যাদি সম্পন্ন হয়।