সর্বাপেক্ষা সৌভাগ্যবান ব্যক্তি তিনি, যিনি পরকাল চান এবং আল্লাহ মানুষদেরকে যা দান করেছেন তার জন্য তিনি তাদেরকে হিংসা করেন না। তিনি হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি উচ্চতর মূলনীতির বাণী বহন করেন এবং অন্যদেরকে এ বাণী জানাতে চান। তিনি যদি তাদের কোন উপকার করতে না পারেন তবে তিনি কমপক্ষে তাদের কোন ক্ষতি করেন না। উদাহরণস্বরূপ বিদ্যাসাগর ও মুফাচ্ছিরে কুরআন ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কথা ধরুন। [এখানে বিদ্যাসাগর বলতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নয়-বরং ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বিদ্যাসাগর বলা হয়েছে-বঙ্গানুবাদক] তিনি তার উন্নত আচরণ এবং উদার ও মহানুভব আত্মার মাধ্যমে শক্র উমাইয়া গোত্র, মারওয়ান গোত্র ও তাদের সমর্থদেরকে বন্ধুতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে বেশি লোক তাঁর জ্ঞান ও বুঝ থেকে উপকৃত হতে পেরেছিল। তিনি জনসমাবেশকে জ্ঞান ও আল্লাহর জিকির দ্বারা পূর্ণ করে দিয়েছিলেন। তিনি জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধ ভুলে গিয়েছিলেন এবং সেসব যুদ্ধের আগে পরে যা ঘটেছিল তা তিনি পিছনে ফেলে রেখেছিলেন। গঠন করতে, একত্রিত করতে এবং বৈষম্যকে সংশোধন করতে তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই তাকে ভালবাসত এবং তিনি উম্মতে মুহাম্মদী তথা মুসলিম জাতির “বিখ্যাত পণ্ডিত” হয়েছিলেন।

অপরপক্ষে, ইবনে যুবাইর (রাঃ) মাহাত্ম্য, উদারতা ও একনিষ্ঠ ইবাদতের পরম পরাকাষ্ঠা ছিলেন। যা হোক, তিনি ব্যক্তিগত অধিকারকে ত্যাগ করার চেয়ে বরং এর জন্য মোকাবেলা করাটাকে এতটাই পছন্দ করতেন যে, তিনি একাজে মনকে সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলেন। ফলে অনেক মুসলমান প্রাণ হারিয়েছিল। তখন সর্বাপেক্ষা মন্দ ঘটনা ঘটে। কাবা ঘর যুদ্ধের স্থান হয়ে যায়; কারণ, তার শক্ররা তাকে কাবা চত্বরে পেয়ে যায় এবং অনেকেই নিহত হয়। অবশেষে তিনি নিজেই নিহত হন এবং পরে তাঁকে শূলে চড়ানো হয়।

“আর আল্লাহর আদেশ পূর্ণ হবেই।” (৩৩-সূরা আল আহযাবঃ আয়াত-৩৮)

আমি কারো অবজ্ঞা করতে বা কারো প্রশংসা করতে চাই না। আমি শুধুমাত্র নৈতিকতা ও শিক্ষা অন্বেষণ করার দৃষ্টিসহকারে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি মাত্র। কোমলতা, ত্যাগ স্বীকার ও ক্ষমা প্রদর্শন -এসব গুণ খুব কম মানুষের মাঝেই বিরাজমান। কারণ, এসব গুণ অর্জন করা ও এসব গুণকে নিজের চরিত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বড় বড় আশাকে ভুলে গিয়ে অবশ্যই নিজকে দমন করতে হয় এমনকি নিজকে অবশ্যই বশে আনতে হয়।