তুচ্ছ বিষয়ে নিরুদ্বিগ্ন থেকে আপনি এমন এক গুণ প্রদর্শন করবেন যা আপনাকে সুখ বয়ে এনে দিবে; কেননা, যার উদ্দেশ্য মহৎ তিনি শুধু পরকাল নিয়েই বিভোর হয়ে থাকেন।

আমাদের একজন ধাৰ্মিক পূর্বসূরী তার এক ভাইকে নিচের কথাগুলো দ্বারা উপদেশ দিয়েছিলেন-

“শুধুমাত্র একটি বিষয়ে উদ্বিগ্ন হও– (আর তা হলো) আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে। তার সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়ে এবং পরকালের বিষয়ে।"

“সেদিন তোমাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করা হবে এবং সেদিন তোমাদের কোন গোপন বিষয় গোপন থাকবে না।" (৬৯. আল-হাক্কাহ: আয়াত-১৮)

পরকালের উদ্বিগ্নতার সাথে তুলনা করলে সব উদ্বিগ্নতাই দূর হয়ে যায়। এ জীবনের দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা ও উদ্ধিগ্নতাসমূহ কী? সেগুলো হলো মান-মর্যাদা, নাম-ডাক-যশ- খ্যাতি, আয়-রোজগার, ধন-সম্পদ, দালান-কোঠা ও সন্তান-সন্ততি। আল্লাহ তা'আলার সামনে জবাবদিহিতার সাথে তুলনা করা হলে এগুলো কিছুই না।

মহান আল্লাহ তার শক্র মুনাফিকদের বিবরণ এভাবে দিয়েছেন-

“আরেক দল (অন্যদেরকে ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাঁচানোর চিন্তা না করে নিজেদের কিভাবে বাঁচানো যায় সে বিষয়ে) নিজেদের চিন্তায় মগ্ন ছিল এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভুল ধারণা করেছিল এবং আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা ধারণা পোষণ করে নিজেরাই নিজেদেরকে উদ্বিগ্ন করেছিল।” (৩-সূরা আলে ইমরান: ১৫৪)

তাদের চিন্তা শুধু নিজেদের জন্যই– তাদের পেটপূজা নিয়ে এবং তাদের কাম চরিতার্থ নিয়ে; তারা উচ্চতর কোন অভিপ্রায়ের কথা জানে না।

সাহাবীগণ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গাছের নিচে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিল তখন একজন মুনাফিক তার লাল উটের জন্য তাড়াতাড়ি ছুটে গেল যেটা হারিয়ে গিয়েছিল। সে বলেছিল:

“তোমাদের বাইয়াতের অনুষ্ঠানের চেয়ে আমার উট খুঁজে বের করা আমার কাছে বেশি প্রিয়।”

একজন মুনাফিক যে নিজেকে নিয়েই উদ্বিগ্ন সে সঙ্গীদেরকে তাবুক অভিযান সম্বন্ধে বলেছিল, গরমে অভিযানে বের হয়ো না। মহান আল্লাহ বলেন-

قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا

“বলুন (এই তাপের চেয়ে) জাহান্নামের আগুনের তাপে অধিকতর প্রচণ্ড।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৮১)

আরেকজন মুনাফিক বলেছিল-

وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ

এবং তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে, “আমাকে (যুদ্ধ করা থেকে) অব্যাহতি দিন এবং আমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন না। সাবধান! তারাই ফিতনাতে পড়ে আছে। জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে বেষ্টন করেই আছে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৯)

এবং আল্লাহ তা'আলা বলেন-

“নিশ্চয়ই তারা অগ্নি পরীক্ষায় পড়েছে।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৪৯)

যখন অন্যরাও সমস্যায় পড়েছিল এবং শুধু নিজেদের ধন-সম্পদ ও পরিবার নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিল (তখন আল্লাহ তাদের কথা এভাবে বলেন)-

“আমাদের ধন-সম্পদ এবং আমাদের পরিবার-পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে সুতরাং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।”

যারা নিজেরাই তুচ্ছ ও নগণ্য তারা ছাড়া অন্য কারোই এসব তুচ্ছ ও নগণ্য বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। কেননা মহান সাহাবীগণ আল্লাহর রহমত কামনা করতেন এবং তার সন্তুষ্টির আকাঙ্ক্ষা করতেন।