আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পাঠের পর আজকের আলোচনা শুরু করছি।

ইবাদতের ব্যাপারে একটি মৌলিক নীতি হচ্ছে, প্রতিটি ইবাদতের জন্য শরী‘আতপ্রবর্তক আল্লাহ তা‘আলা একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা সে সময়েই আদায় করতে হয়, যদি না সেটাকে তার সময় থেকে বিশেষ আবশ্যকতা বা প্রয়োজনের কারণে বের করে অন্য সময়ে করার ব্যাপারে দলীল-প্রমাণাদি পাওয়া যায়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ ٥ ﴾ [الماعون: ٥]

“যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বেখবর” [সূরা আল-মা‘উন, ৫] অর্থাৎ তারা সালাতকে তার সময় থেকে পিছিয়ে দেয়।

অনুরূপভাবে বুখারী, মুসলিম, সুনান গ্রন্থকারগণ, মালেক এবং আহমাদ সহ অন্যান্যগণ আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : «‏ الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا »‏ .

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি সর্বোত্তম? রাসূল বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা”।

কিন্তু হাদীসের দলীল দ্বারাই আবার যে সব রুখসত বা ছাড় দেওয়া হয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দু’ সালাতকে জমা করে এক সালাতের সময়ে আদায় করা।

আর এ জমা করা যোহর ও আসরের মাঝে হয়ে থাকে। সুতরাং যোহরকে দেরী করে আসরের সময়ে নিয়ে যাওয়া অথবা আসরকে এগিয়ে নিয়ে এসে যোহরের সময়ে আদায় করার ছাড় শরী‘আত আমাদেরকে দিয়েছে।

অনুরূপভাবে এ জমা করার সুযোগ রয়েছে মাগরিব ও ইশার মাঝে, সুতরাং মাগরিবকে দেরী করে ইশার সময়ে নিয়ে গিয়ে দু’টোকে আদায় করা, অথবা ইশাকে এগিয়ে নিয়ে এসে মাগরিবের সময়ে মাগরিবের পরেই আদায় করে নেওয়ার সুযোগ ইসলামী শরী‘আত আমাদেরকে দিয়েছে।

কিন্তু ফজরের সালাত, আলেমগণের ঐকমত্যে তাকে এগিয়ে নেওয়া কিংবা পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বস্তুত: সফর অবস্থায় দু’সালাত জমা করে আদায় করার মাসআলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করে থাকে; অনেকেই আবার এর অনেক মাসআলা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে না, অথচ বিষয়টির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তাই এখানে এ বিষয়ে কিছু মাসআলার অবতারণা করার প্রয়াস পাবো।

প্রথমেই এটা জানা দরকার যে, মহান আল্লাহর রহমত, তিনি মুসাফিরের জন্য সালাত জমা তথা একত্র করা বিধিবদ্ধ করেছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও ছাড়। কারণ মুসাফির এমন কিছু অবস্থা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন যাতে প্রতিটি সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আলেমগণ এ ব্যাপারে ইজমা‘ বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে আরাফার দিন যোহর ও আসরকে এগিয়ে নিয়ে যোহরের সময়ে জমা করে আদায় করা শরী‘আতসম্মত। অনুরূপভাবে তারা এ ব্যাপারেও একমত পোষণ করেছেন যে, আরাফার দিন সূর্য ডুবার পর নাহরের রাতে মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্র করে ইশার সময়ে পড়া শরী‘আতসম্মত। [দেখুন, আল-ইজমা‘ ইবনুল মুনযির, পৃ. ৩৮; মারাতিবুল ইজমা‘ পৃ. ৪৫]

তবে এর বাইরে অন্য সময়ে সালাত একত্রে আদায় করার ব্যাপারে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।