১৮। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস।

১৮। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস।

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، اللَّهُ الصَّمَدُ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

অর্থঃ “বলঃ তিনিই আল্লাহ একক (ও অদ্বিতীয়), আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, (সবাই তার মুখাপেক্ষী); তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন এবং তার সমতুল্য কেউই নেই।" (সূরা ইখলাস)

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ، وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

অর্থঃ “বলঃ আমি আশ্রয় চাচ্ছি উষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, অনিষ্ট হতে রাত্রির যখন তা অন্ধকারা ছন্ন হয়; এবং ঐ সব নারীর অনিষ্ট হতে যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়, (অর্থাৎ যাদু করার উদ্দেশ্যে) এবং অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।" (সূরা ফালাক)

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ، مَلِكِ النَّاسِ، إِلَٰهِ النَّاسِ، مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ، الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ، مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

অর্থঃ “বলঃ আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, যিনি মানবমন্ডলীর মালিক (বা অধিপতি;) যিনি মানবমন্ডলীর উপাস্য; আর গোপনকারী কুমন্ত্রনাদাতার অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য হতে অথবা মানুষের মধ্য হতে।” (সূরা নাস)

উপরোক্ত সমস্ত আয়াত ও সূরা রোগীর কর্ণপার্শ্বে উচু আওয়াজে এবং বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করবে। এরপর রোগীর তিনটি অবস্থার যে কোন একটি হতে পারে। প্রথমতঃ হয়ত রোগী বেহুশ হয়ে পড়ে যাবে এবং সে যেই জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত যে যাদুর দায়িত্বে সেই জ্বিন কথা বলতে থাকবে। এমতবাস্থায় চিকিৎসক জিনের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেয়া উচিত সে ব্যবস্থা নিবে, যা আমি আমার অন্য বইয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। এরপর সে জিনকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলি করবেঃ

১ । তোমার নাম কি? আর তোমার ধর্ম কি? ধর্মের উপর ভিত্তি করে কথা বলতে হবে। যদি সে অমুসলিম হয়ে থাকে তবে তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্যে আহবান করবে আর যদি সে মুসলমান হয়ে থাকে তবে তাকে বুঝাবে যে, তোমার জন্য এটা বৈধ নয় যে, তুমি যাদুকরের সেবায় নিয়োজিত থাক। আর না ইসলাম এর অনুমতি দেয়।

২ । তাকে জিজ্ঞাসা করবে যে, যাদু কোথায় রয়েছে? তাকে সত্য কথা বলতে বাধ্য করতে হবে। কেননা জ্বিন সব সময় মিথ্যা বলে। সে যদি কোন জায়গার খবর দেয় তবে লোক পাঠিয়ে তা বের করতে হবে।

৩। ওকে জিজ্ঞাসা করবে যে, সে কি একাই যাদুর সাথে জড়িত না কি আরও কেউ তার সাথে রয়েছে? যদি অন্য আরও জ্বিন থাকে তবে তার মধ্যে সেই জ্বিনকেও উপস্থিত হতে বাধ্য করবে। অতঃপর তার কথাও শোনবে।

৪ । কখনও জ্বিন বলবে যে, অমুক ব্যক্তি যাদুকরের কাছে গিয়ে যাদু করতে বলেছে। এমন সব কথাও বিশ্বাস করা যাবে না। কেননা জিনের উদ্দেশ্য হল দুই ব্যক্তি মাঝে শক্রতা বৃদ্ধি করা আর শরীয়তে এসব জ্বিনের সাক্ষ্য গ্রহণীয় নয়। কেননা যাদুকরের সেবায় নিয়োজিত ফাসেক সে ।

আর আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

অর্থঃ “হে মু’মিন ব্যক্তিবর্গ তোমাদের কাছে কোন ফাসেক কোন সংবাদ নিয়ে আসলে তা সূক্ষ্মভাবে তদন্ত কর যাতে করে তোমরা কোন সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার না কর অজ্ঞতাবশত। অতঃপর তোমরা কৃতকর্মে লজ্জিত হও।" (সূরা হুজুরাতঃ ৬)

জিনের তথ্যানুযায়ী যদি সেই যাদুর স্থান পাওয়া যায় আর তা বের করা হয়। তবে পানিতে নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ পড়বেঃ

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ، فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ، فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ، وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ، قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ، رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ

অর্থঃ আমি আল্লাহ তায়ালার আশায় প্রার্থনা করছি অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আর মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে ওহী প্রেরণ করেছি যে, আপনি আপনার লাঠি মাটিতে ফেলে দিন। দেখামাত্র সাপে পরিণত হয়ে) যাদুকরদের যাদুর সাপ গিলে ফেলছে। সত্যের বিজয় ও প্রতিষ্ঠিত হল, ধ্বংসপ্রাপ্ত হল তাদের কর্ম। সেখানে তারা পরাজিত হয়েছে এবং অপদস্ত ও পর্যুদস্ত হয়েছে। সকল যাদুকর সেজদারত হল। তারা বললঃ আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম সমস্ত জগতের প্রভুর উপর যিনি মূসা ও হারুণের প্রভু।” (সূরাঃ আরাফঃ ১১৭-১২২)

إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ

অর্থঃ “তারা কেবলমাত্র যাদুকরের ষড়যন্ত্র প্রস্তুত করেছে। আর যাদুকর সফলকাম হবে না তারা যাই করুক।” (সূরা ত্বাহাঃ ৬৯)

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ، وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

অর্থঃ “মূসা (আঃ) বললেন তোমরা যেই যাদু দেখাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তা ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কর্মের সংশোধন করেন না এবং আল্লাহ সত্যকে তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত করবেন যদিও অপরাধীগণ তা অপছন্দ করে।” (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২)

এসব আয়াতসমূহ এক পাত্র পানিতে পড়ে ফুক দিবে যাতে কুরআন পড়া ভাপ পানিতে যায়। এরপর যাদুকে সেই পানিতে ডুবিয়ে দিবে তা যে কোন ধরণের যাদুর বস্তুই হোক কাগজ বা সুগন্ধি ইত্যাদি। এরপর সেই পানিকে সাধারণ রাস্তা থেকে অনেক দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসবে। যদি জ্বিন বলে যে, যাদু আক্রান্ত রোগীকে যাদু পান করিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে রোগীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে তার পেটে ব্যাথা আছে কি না? যদি ব্যাথা থাকে তবে বুঝতে হবে যে, জ্বিন সত্য বলেছে আর ব্যাথ্য না থাকলে বুঝতে হবে যে, জ্বিন মিথ্যা বলেছে।

যদি জ্বিন থেকে সত্য তথ্য সংগ্রহ করা শেষ হয় তখন জ্বিনকে বলবে রোগী থেকে বের হয়ে যেতে এবং আর কখনও যেন ফিরে না আসে । এমনিভাবেই ইনশাআল্লাহ যাদু ধ্বংস করা যাবে। অতঃপর পানিতে ইতিপূর্বেই যে তিনটি আয়াত উল্লেখ হয়েছে তা পড়বে এবং সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁ দিবে। রোগীকে তা দ্বারা কিছুদিন গোসল ও পান করতে বলবে।

আর যদি জ্বিন বলে যে, রোগী যাদুর বস্তুর উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে অথবা তার কোন কিছু যেমন চুল, কাপড় দিয়ে যাদু করেছে তাহলে এমতাবাস্থায় ইতিপূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলি দ্বারা পানি পড়া থেকে কিছুদিন রোগী পান করবে এবং তা দিয়ে গোসল করে নিবে। গোসল বাথরুমে না করে বরং বাথরুমের বাইরে যে কোন জায়গায় করবে এভাবে ব্যাথা দূর না হওয়া পর্যন্ত করতে থাকবে।

এরপর জ্বিনকে বলবে যে, সে যেন এই ব্যক্তিকে ছেড়ে চলে যায় আর ফিরে না আসার অঙ্গীকার করে। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ পর রুগী দ্বিতীয়বার পড়বে। যদি অসুস্থ ব্যক্তি কোন কিছু অনুভব না করে। তবে বুঝতে হবে যে, যাদু ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি রোগী আবারও বেহুশ হয়ে পড়ে তবে বুঝতে হবে যে, জ্বিন মিথ্যাবাদী এবং এখনও সে রোগী থেকে বের হয়ে যায়নি। ওকে বের না হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করবে নম্রতার সাথে । আর যদি এরপরও কথা অমান্য করে তবে মারবে এবং কুরআনের আয়াতসমূহ পড়বে। যদি রোগী বেহুশ না হয় এবং তার শরীরে কাপন শুরু হয় এবং তার নিঃশ্বাস ফুলতে থাকে তবে আয়াতুল কুরসীর ক্যাসেট রোগী প্রতিদিন তিনবার প্রতিবার এক ঘণ্টাব্যাপী শোনবে। এভাবে একমাস শুনবে তারপর পুনরায় সাক্ষাতে আসলে তাকে ঝাড়-ফুঁক দিবে। এবার ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ করবে।

আর যদি আরোগ্য লাভ না হয় তবে সূরা সাফফাত, ইয়াসীন, দুখান, সূরা জ্বিন এসব সূরার রেকর্ডকৃত ক্যাসেট দিবে যাতে করে দিনে তিনবার তিন সপ্তাহ পর্যন্ত শুনবে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা তাকে সুস্থ করে দিবেন। আর না হয় সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।