আমরা ইতোপূর্বে প্রথম পরিচ্ছেদে শিরক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া তাকফীর পরিচ্ছেদে আমরা কুফর-এর অর্থ আলোচনা করেছি। ইসলাম গ্রহণের পর কোনো শিরক বা কুফরে লিপ্ত হওয়াকে ‘‘রিদ্দাহ’’ (الردة) বা ধর্মত্যাগ বলে। শিরক মানব জীবনের ভয়ঙ্করতম পাপ। তাওবা বা অনুতপ্ত হয়ে পাপ বর্জন করা সকল পাপের ক্ষমার পথ। তবে মহান আল্লাহ তাওবা ছাড়াও নেক কর্মের কারণে, শাস্তির মাধ্যমে, শাফাআতের মাধ্যমে বা তাঁর অপার করুণায় অন্য সকল পাপ ক্ষমা করতে পারেন। তবে শিরকের পাপ তিনি তাওবার মাধ্যমে শিরক বর্জন ছাড়া ক্ষমা করেন না। মহান আল্লাহ বলেন:


إِنَّ اللَّهَ لا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا


‘‘আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। তা ছাড়া অন্য কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে কেউ আল্লার সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।’’[1]

এছাড়া সকল পাপ বা মহাপাপে লিপ্ত ব্যক্তির জন্যও জাহান্নামের শাস্তির পর জান্নাত লাভের আশা থাকে। কিন্তু শিরক-কুফরে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলে তার আর কোনো আশা থাকে না। মহান আল্লাহ বলেন:


إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ


‘‘কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করেন ও তার আবাস জাহান্নাম; জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’’[2]

সর্বোপরি শিরক-কুফর মানুষের অন্যান্য নেক আমলও বিনষ্ট করে। ইমাম আযম এ বিষয়ক একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:


وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ


‘‘তোমার এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, ‘তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত’।’’[3]

আমরা দেখেছি যে, আরবের কাফিরগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অনেক ইবাদত করত। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ-উমরা, কুরবানী ইত্যাদি ইবাদত পালন করত। কিন্তু আল্লাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিরকযুক্ত নেক আমল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:


وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا


‘‘এবং আমি তাদের (কাফির-মুশরিকদের) আমলের প্রতি অগ্রসর হব এবং তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’’[4]

[1] সূরা (৪) নিসা: ৪৮ আয়াত।

[2] সূরা (৫) মায়িদা: ৭২ আয়াত।

[3] সূরা (৩৯) যুমার: ৬৫ আয়াত।

[4] সূরা (২৫) ফুরকান: ২৩ আয়াত।