আল-ফিকহুল আকবর মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
১. ‘আল-ফিকহুল আকবার’ রচনার প্রেক্ষাপট

তাওহীদ ও শিরকের মূলনীতি উল্লেখ করার পর ইমাম আবূ হানীফা আকীদা বিষয়ক বিভ্রান্তিগুলো খন্ডন শুরু করলেন। বস্ত্তত বিভ্রান্তি দূর করে বিশুদ্ধ আকীদা প্রচারই ‘আল-ফিকহুল আকবার’ রচনার মূল উদ্দেশ্য। আমরা দেখেছি যে, ঈমানের ক্ষেত্রে মুমিনের দায়িত্ব কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা সহজ-সরল অর্থে বিশ্বাস করা ও সাহাবীগণের অনুসরণ করা। ঈমান-আকীদার বিষয়বস্ত্ত যেহেতু অপরিবর্তনীয় সেহেতু এ বিষয়ে ইজতিহাদ বা যুক্তি-কিয়াসের সুযোগ নেই। তবে উম্মাতের মধ্যে আকীদা বিষয়ক নতুন কোনো মত বা বিশ্বাসের উন্মেষ ঘটলে কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবী-তাবিয়ীগণের বিশ্বাস ও বক্তব্যের আলোকে সেগুলির পর্যালোচনা করা ও সঠিক বিশ্বাসের দিক নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব ইমাম, ফকীহ ও আলিমগণের উপর বর্তায়।

এ দায়িত্ব পালনের জন্যই কলম ধরেন ইমাম আযম আবূ হানীফা। তিনি ছিলেন উম্মাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ। তিনি তাঁর ফিকহী মাযহাব নিজে সংকলন করেন নি, কিন্তু আকীদার বিষয়ে তাঁর মাযহাব নিজের হাতে সংকলন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাওহীদ ও শিরক-এর মৌলিক বিষয়ে তেমন কোনো বিভ্রান্তি ইমাম আবূ হানীফার যুগে প্রকাশ পায় নি। এজন্য এ বিষয়টি তিনি সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। এরপর তাঁর যুগে প্রকাশিত বিভ্রান্তিগুলোর ক্ষেত্রে সঠিক আকীদা বর্ণনা শুরু করলেন।

ইমাম আবূ হানীফার যুগে, অর্থাৎ হিজরী প্রথম শতকের শেষ ভাগ থেকে দ্বিতীয় শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময়ে মুসলিম সমাজে ইসলামী আকীদা বিষয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তির উন্মেষ ঘটে। এ সময়ে বিদ্যমান আকীদা ভিত্তিক দল-উপদলের মধ্যে অন্যতম ছিল: (১) খারিজী, (২) শীয়া, (৩) জাহমিয়া, (৪) জাবারিয়া, (৫) কাদারিয়া, (৬) মুতাযিলা, (৬) মুশাবিবহা ও (৭) মুরজিয়া ফিরকা। ইসলামী বিশ্বাস বিষয়ক প্রথম বিভ্রান্তির উন্মেষ ঘটে আলী (রা)-এর সময়ে (৩৫-৪০ হি)। এ সময়ে খারিজী ও শীয়া দুটি দলের উৎপত্তি ঘটে। এ দুটি ফিরকা ছিল মূলত রাজনৈতিক। এরপর প্রথম হিজরী শতকের শেষভাগ ও দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রথমাংশে অবশিষ্ট বিভ্রান্ত ফিরকাগুলোর জন্ম হয়। এদের বিভ্রান্তি মূলত দার্শনিক মতবাদ নির্ভর এবং আল্লাহর বিশেষণাদি (attribute) কেন্দ্রিক। রাজনৈতিক ও দার্শনিক সকল ফিরকার বিভ্রান্তির মূল কারণ ‘‘আকীদার উৎস’’ নির্ধারণে বিভ্রান্তি। এজন্য এ সকল ফিরকার বিভ্রান্তি অপনোদনে ইমাম আবূ হানীফার বক্তব্য হৃদয়ঙ্গম করার পূর্বশর্ত হিসেবে আমরা ইসলামী আকীদার ভিত্তি ও উৎস বিষয়টি পর্যালোচনা করতে চাই।