ব্যাংকের সুদ কি হালাল সূচি ও বিবরন শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী ১ টি

আমার প্রিয় মুসলিম ভাই! ব্যাংকের সূদ হারাম হওয়ার কথা এখান থেকেই শেষ হয়ে যায়নি। বরং মুসলিম বিশব তথা অন্যান্য বিভিন্ন দেশের রাজধানী শহরে এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন কনফারেন্স ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সে সব সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় যে, ব্যাংকের সূদ নিশ্চিতরূপে হারাম; যার হারাম হওয়াতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিং আব্দুল আযীয ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ইসলামী অর্থনীতির প্রথম সম্মেলনে বিশ্বের তিন শতাধিক ফিক্হ ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অংশ গ্রহণ করেন। এঁদের সকলেই একবাক্যে ব্যাংকের সূদকে হারাম বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং কোন এক জনও সে সূদকে হালাল বলে মতবিরোধ প্রকাশ করেননি। বরং অধিক খুশীর কথা এই ছিল যে, উলামায়ে ইসলামের তুলনায় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞগণই উক্ত সূদকে হারাম করার ব্যাপারে অধিকতর উৎসাহ ও আগ্রহ প্রকাশ করেন।[1]

আমার প্রিয় মুসলিম ভাই! পরিশেষে আমরা আপনার অবগতির জন্য এ কথা জানিয়ে দেওয়া উচিত মনে করি যে, বিভিন্ন ফিক্হী, ইসলামী ও অর্থনৈতিক কনফারেন্স, সংগঠন ও সেমিনারের মাধ্যমে ব্যাংকের সূদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে (গণ্যমান্য) উলামাগণের ইজমা’ (সর্ববাদিসম্মতি) সংঘটিত হয়ে গেছে। সকলের রায় মতে বলা হয়েছে যে, এটা হল সেই সূদ, যার হারাম হওয়াতে কোন প্রকার সন্দেহ ও দ্বিধা অবশিষ্ট নেই। উক্ত ইজমা ১৯৬৫ সাল থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। আমাদের জন্য তিনটি বিশ্বসম্মেলনে সংঘটিত ইজমা’ই যথেষ্টঃ-

(১) মুহার্রাম ১৩৮৫ হিঃ মুতাবেক মে ১৯৬৫ খ্রিঃ তে মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ‘ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর দ্বিতীয় সম্মেলনে সংঘটিত ইজমা’।

(২) ১২-১৯ রজব ১৪০৬ হিঃ তে মক্কা মুকার্রামায় অবস্থিত মুসলিম ওয়ালর্ড লীগের ইসলামিক ফিক্হ একাডেমীর ইজমা’।

(৩) ১০-১৬ রবীউসসানী ১৪০৬ হিঃ মুতাবেক ২২-২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৫ খ্রিঃ তে অনুষ্ঠিত অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্সের ইসলামিক ফিক্হ একাডেমীর ইজমা’।

যেহেতু উপরোল্লেখিত কনফারেন্সসমূহে প্রায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, সেহেতু আমরা কেবল কায়রোতে অনুষ্ঠিত ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর দ্বিতীয় কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্তাবলীর খসড়া এখানে নকল করাকে যথেষ্ট মনে করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত কনফারেন্সে ৩৫টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মুহর্রাম ১৩৮৫ হিঃ মুতাবেক মে ১৯৬৫ খ্রিঃ তে অনুষ্ঠিত ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর দ্বিতীয় কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্তাবলীঃ-

১ - যে কোন প্রকারের ঋণের উপর ইনটারেষ্ট নেওয়া হল হারাম সূদ নেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাতে সে ঋণ ব্যক্তিগত অভাবপূরণের উদ্দেশ্যে নেওয়া হোক অথবা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে নেওয়া হোক; কোন পার্থক্য নেই। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট উক্তিসমূহ উভয় প্রকারেরই ঋণভিত্তিক সূদকে হারাম নিরূপণ করেছে।

২- সূদ চাহে স্বল্প পরিমাণের হোক অথবা অধিক পরিমাণের; সর্বাবস্থায় তা হারাম। আয়াতে উল্লিখিত ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে (দ্বিগুণ-চতুর্গুণ) সূদ ভক্ষণ করো না’ এর সঠিক মর্মার্থ তাই।

৩- ঋণের উপর সূদ গ্রহণ করা হারাম। কোন প্রকারের প্রয়োজন এবং কোন প্রকারেরই অবস্থা ও পরিস্থিতিতে তা জায়েয হতে পারে না। অনুরূপ ঋণের উপর সূদ দেওয়াও হারাম। তবে সূদী ঋণ (বা লোন) গ্রহণের গোনাহ কেবল তখনই ক্ষমার্হ হবে, যখন কেউ সূদ বিনা ঋণ কোথাও না পাবে।

সেক্ষেত্রে কেবল নিরুপায় অবস্থায় বাধ্য হয়েই তা গ্রহণ করলে তা মাফযোগ্য। অবশ্য নিরুপায় অবস্থা নির্ধারণ করাটা প্রত্যেকের দ্বীনদারী অনুভব-সাপেক্ষ।

৪- কারেন্ট একাউন্ট ও এল সি খোলা, চেক ও ড্রাফ্ট ভাঙ্গানো এবং দেশের ভিতরে বিল অফ্ এক্সচেঞ্জ (হুন্ডি)র যে কারবার ব্যাংক বিভিনণ ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর সাথে করে থাকে---তা জায়েয। পরন্তু এসব সেবার উপর ব্যাংক যে ফী গ্রহণ করে---তা সূদ নয়।

৫- স্থায়ী আমানত (FIXED DEPOSIT) সূদবিশিষ্ট এল সি খোলা এবং সূদ ভিত্তিক ঋণ বা লোন দেওয়া ইত্যাদি কারবার সূদী ও হারাম কারবার।

১৯৬৫ সালের ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর সদস্যবৃনেদর নামের তালিকা ঃ-

নাম

সাং

পেশা

হাসান মামূন (বড় ইমাম)

মিসর

আযহার ইউনিভার্সিটির দ্বীনি শিক্ষক

ডক্টর ইব্রাহীম আব্দুল মাজীদ লাববান

মিসর

দারুল উলুমের ভূতপূর্ব সভাপতি

ডক্টর ইসহাক মূসা হুসাইনী

প্যালেষ্টাইন

আমেরিকান ইউনিভার্সিটি এবং এ্যারাবিক ইউনিভার্সিটির পি জি বিভাগের প্রফেসর

ডক্টর সুলাইমান হারীন

মিসর

অসয়ূত ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর

ডক্টর আব্দুল হালীম মাহমূদ

মিসর

অসূলুদ্দীন কলেজের সভাপতি

উস্তায আব্দুল হামীদ হাসান

মিসর

দারুল উলূম কলেজের ভূতপূর্ব প্রফেসর।

শায়েখ আব্দুর রহমান হাসান

মিসর

আযহার ইউনিভার্সিটির ভূতপূর্ব উপাচার্য

শায়খ আব্দুর রহমান কালহূদ

লিবিয়া

ভূতপূর্ব বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী

উস্তায আব্দুল্লাহ কানূন

মরক্কো

মরক্কো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং তানজার ভূতপূর্ব গভর্নর

১০

ডক্টর উসমান খলীল উসমান

মিসর

কায়রোর হুকুক কলেজের আইনবিষয়ক লেকচারার

১১

ডক্টর আলী হুসাইন আব্দুল কাদির

মিসর

শরীয়াহ কলেজের সভাপতি

১২

শায়খ আলী খাফীফ

মিসর

হুকূক কলেজের শরীয়ত বিষয়ক ভূতপূর্ব লেকচারার

১৩

শায়খ আলী আব্দুর রহমান

সুদান

ভূতপূর্ব স্বরাষট্র মন্ত্রী

১৪

শায়খ মুহাম্মদ আহমদ আবু যুহরাহ

মিসর

হুকূক কলেজের শরীয়ত বিষয়ক ভূতপূর্ব লেকচারার

১৫

শায়খ মুহাম্মদ আহমদ ফারাজ সিনহুরী

মিসর

ভূতপূর্ব ওয়াক্ফ মন্ত্রী

১৬

ডক্টর মুহাম্মদ বাহী

মিসর

ভূতপূর্ব ওয়াক্ফ মন্ত্রী

১৭

ডক্টর মাহমূদ হিববুল্লাহ

ইসলামিক স্টাডিজ একাডেমীর সেক্রেটারী জেনেরাল

১৮

উস্তাদ মুহাম্মদ খালফুল্লাহ আহমদ

মিসর

‘আইন শাম্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য

১৯

মিসর

২০

ডক্টর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরাবী

মিসর

ইন্ষ্টিটিউট অফ ইসলামিক ক্টটাডীর সভাপতি এবং হুকূক কলেজের ভূতপূর্ব লেকচারার

২১

ডক্টর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ মাযী

আযহার ইউনিভার্সিটির উপাচায

২২

শায়খ মুহাম্মদ আলী সায়েস

উসূলুদ্দীন কলেজের ভূতপূর্ব উপাচার্য শায়খ মুহাম্মদ ফাযেল বিন আশূর টুনিসিয়া যাইতুনাহ ইউনিভার্সিটির সভাপতি এবং টুনিসিয়ার মুফতী

২৩

ডক্টর মুহাম্মদ মাহদী আল্লাম ইউনাইটিড

মিনিস্ট্রী অফ আরব রিপাবলিক কালচার এ্যান্ড গাইডেন্স-এর (মিসর) টেকনিক্যাল কাউন্সিলার

২৪

শায়খ মুহাম্মদ নূরুল হাসান

আযহার ইউনিভার্সিটির ভূতপূর্ব উপাচার্য

২৫

শায়খ নাদীম জিস্র

লেবানন

ট্রিপোলী ও উত্তর লেবাননের মুফতী

২৬

উস্তায আফীক কাস্সার

লেবানন

হুকূক কলেজের ভূতপূর্ব সভাপতি

এছাড়া আরো বহুসংখ্যক উলামার নাম সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা সম্ভব হল না।

মিসরের (প্রধান) মূফতী ব্যাংকের সূদ হালাল হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এর প্রতিবাদে আযহার ইউনিভার্সিটির উলামাবৃন্দ মক্কা মুকার্রামায় সমবেত হয়ে একটি জ্ঞানগর্ভ বিবৃতি প্রচার করেন। উক্ত প্রতিবাদে সমর্থক উলামাবৃন্দের ৩৩টি নাম, পেশা ও স্বাক্ষর-সম্বলিত খসড়া মজুদ রয়েছে।

[1] (ফাওয়াএদুল বুনূক হিয়ার রিয়াল হারাম, ডক্টর ইউসুফ কারযাবী)