ব্যাংকের সুদ কি হালাল সূচি ও বিবরন শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী ১ টি

যে সমাজের সদস্যরা পরস্পর স্বার্থপরতাপূর্ণ ব্যবহার করে; নিজ নিজ স্বার্থ ও লাভ ছাড়া কেউ কারো কাজে না আসে এবং একজনের অভাব ও অর্থ প্রয়োজন দেখা দিলে অপর জনের মুনাফা অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ লাভ হয়, এমন নির্মম সমাজ কোনদিন সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বরং সে সমাজ চিরকালের জন্য বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্যের দিকে ঝুঁকে যায়। ঠিক এর বিপরীত যে সমাজের সমাজ-ব্যবস্থা আপোসে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহারের ভিত্তিতে পরিচালিত, যার সদস্যগণ পরস্পর দানশীলতার সহিত সদ্ব্যবহার করে, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি অপরের অভাব-অনটনের সময় উদারচিত্ত ও মন নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে থাকে সেই সমাজে বৃদ্ধি পায় সম্প্রীতি ও হিতাকাঙক্ষা। আর এমন সমাজে পরস্পর সহযোগিতা এবং পরহিতৈষার ফলে উন্নয়নের গতি প্রথম সমাজের তুলনায় অধিক দ্রুততর হয়।

অনুরূপ এই কথা এক জাতির সহিত অপর জাতির (আন্তর্জাতিক) সম্পর্ক ও সম্বন্ধ রাখার ক্ষেত্রেও বলা যায়; অর্থাৎ এক জাতি যদি অপর জাতির সাথে বদান্যতা ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার প্রদর্শন করে এবং তার বিপদ-আপদের সময় উন্মুক্ত হৃদয় নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়, তাহলে এ সম্ভবই নয় যে, দ্বিতীয় তরফ হতে এর প্রতিদানে সম্প্রীতি, কৃতজ্ঞতা এবং হিতাকাঙক্ষা ব্যতীত অন্য দুর্ব্যবহার প্রদর্শিত হবে। পক্ষান্তরে এ একই জাতি যদি নিজের প্রতিবেশী আর এক জাতির সাথে স্বার্থপরতা ও সংকীর্ণমনতা-পূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করে এবং তার বিপদ সমস্যার সময়কে নিজের স্বার্থলাভের সুবর্ণ সুযোগরূপে ব্যবহার করে, তাহলে এ কোন প্রকারেই সম্ভব নয় যে, সেই স্বার্থপর জাতির জন্য এ জাতির হৃদয়ে কোন প্রকার সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং পরহিতৈষণা অবশিষ্ট থাকবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা, বৃটেন আমেরিকার নিকট একটা মোটা অঙ্কের অর্থ-ঋণ নেওয়ার চুক্তি করেছিল। আমেরিকা এ যুদ্ধে বৃটেনের মৈত্রীবদ্ধ ছিল; তাই বৃটেন আশা করল যে, আমেরিকা তাদেরকে বিনা সূদে ঋণ প্রদান করবে। কিন্তু আমেরিকা সূদ ছাড়তে রাজী হলো না। ফলে বৃটেন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে সূদ দিতে চুক্তিবদ্ধ হল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া ইংরেজ জাতির উপর রেখাপাত করেছিল সে কথা তদানিন্তন অর্থমন্ত্রী ডক্টর ডালটনের কথায় এইরূপ ছিল,

‘এই ভারী বোঝা যা বহন করা অবস্থায় আমরা যুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসছি এটি আমাদের অসাধারণ ত্যাগ ও কষ্টের বড় চমৎকার প্রতিদান যা আমরা এক যৌথ উদ্দেশ্য সাধনের পথে স্বীকার করে এসেছি।’

এই হল সূদের স্বাভাবিক প্রভাব এবং তার অনিবার্য মানসিক প্রতিক্রিয়া যা সর্বদা পরিস্ফুট হতে থাকবে; তাতে এক জাতি অপর জাতির সাথে এরূপ আচরণ করুক অথবা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে সেই ব্যবহার প্রদর্শন করুক; সর্বাবস্থায় প্রতিক্রিয়া একই শ্রেণীর।