প্রশ্ন-৪৫: কদর ও কাযা বা ভাগ্য ও ফায়সালার মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর:

  • কদর শব্দটি কাদারা থেকে উৎপত্তি, অতঃপর তাকদীর শব্দে ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ বিস্তারিত ও পরিস্কার বর্ণনা এবং ইহা পরবর্তীতে সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব আসার পূর্বেই আল্লাহর নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে।
  • আর কাযা হল: ভাগ্য নির্ধারণে প্রথম যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এর দ্বারা সংগঠিত হওয়ার হুকুমের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। কখনো ইহা কদর বা ভাগ্য অর্থে ব্যবহার হয় যা ব্যাপক ও পার্থক্য অর্থে হয়ে থাকে।
  • এমনিভাবে কদর শব্দটি কাযা অর্থে ব্যবহার হয় যা ভাগ্য সংগঠিত হওয়ার হুকুম হিসাবে ধরা হয় এবং কাযা দ্বীনি ও শরয়ী হুকুমের উপর প্রযোজ্য হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]

অর্থাৎ: অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে গ্রহন করে নেবে। [সূরা নিসা ৬৫]

  • তদ্রূপ কাযা অবসর এবং পূর্ণতা অর্থে আসে, যেমন:

﴿ فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ ﴾ [الجمعة: ١٠]

অতঃপর যখন নামায পূর্ণ হবে, [সূরা আল-জুম‘আহ: ১০]

  • এমনিভাবে কথার আসল অর্থেও আসে।

আল্লাহ বলেন:

﴿ فَٱقۡضِ مَآ أَنتَ قَاضٍۖ ﴾ [طه: ٧٢]

অর্থাৎ: আপনি যে ফয়সালা করতে চান তা করে ফেলুন।

  • এটি ঘোষনা ও কোনো সংবাদ দেয়ার অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ وَقَضَيۡنَآ إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ﴾ [الاسراء: ٤]

আমি বানী ইসরাঈলের নিকট সংবাদ পাঠালাম।

  • তদ্রূপ মৃত্যুর উপর প্রযোজ্য হয়। যেমন: কেউ বলল: قضى فلان অমুক মৃত্যুবরণ করেছে। অনুরূপ আল্লাহ বলেন:

﴿ وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ ﴾ [الزخرف: ٧٧]

তারা আহ্বান করবে: হে মালেক আপনি প্রভুর নিকট বলুন তিনি যেন আমাদের মৃত্যুদান করেন।

  • শাস্তি হওয়ার উপর প্রযোজ্য হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ﴾

অর্থাৎ: শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

  • এমনিভাবে কোনো জিনিসকে পরিপূর্ণ ভাবে পাওয়া অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

وَلَا تَعۡجَلۡ بِٱلۡقُرۡءَانِ مِن قَبۡلِ أَن يُقۡضَىٰٓ إِلَيۡكَ وَحۡيُهُۥۖ ﴾ [طه: ١١٤]

অর্থৎ: এবং আল্লাহর ওহী আপনার প্রতি সম্পূর্ণ হবার পূর্বে আপনি তাড়াতাড়ি করবেন না। [সূরা ত্বা-হা ১১৪]

  • অনুরূপ বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ وَقُضِيَ بَيۡنَهُم بِٱلۡحَقِّ﴾ [الزمر: ٦٩]

তাদের মাঝে সঠিক ফয়সালা করা হয়েছে।

  • তদ্রূপ সৃষ্টি অর্থেও ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ فَقَضَىٰهُنَّ سَبۡعَ سَمَٰوَاتٖ ﴾ [فصلت: ١٢]

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলকে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন।

  • তাছাড়া চুড়ান্ত ফয়সালার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ وَكَانَ أَمۡرٗا مَّقۡضِيّٗا ٢١ ﴾ [مريم: ٢١]

“এবং ইহা নির্ধারণ করা ছিল।”

  • অনুরূপ নির্দেশ অর্থেও আসে। যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ ﴾ [الاسراء: ٢٣]

এবং আপনার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত কর।

  • অনুরূপ উদ্দেশ্য পূরণ অর্থে ব্যবহার হয় যেমন: فقضيت وطري “আমি আমার উদ্দেশ্য পূরণ করলাম।”
  • তদ্রূপ দুই ব্যক্তির ঝগড়া মীমাংসা অর্থে ব্যবহৃত হয়।
  • কখনো আদায় অর্থে ব্যবহার হয়, যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ فَإِذَا قَضَيۡتُم مَّنَٰسِكَكُمۡ ﴾ [البقرة: ٢٠٠]

“যখন তোমরা তোমাদের হজ্জের কাজ আদায় করবে।”

আল কাযা القضاء শব্দটি মূলত: মাসদার, এর নির্দেশ ওয়াজিব হওয়ার চাহিদা রাখে এবং এর উপর প্রমাণ করে। আর আল ইকতেযা الاقتضاء হল শব্দানুযায়ী বিভিন্ন অর্থ সম্পর্কে ধারণা থাকা। তাদের কথা لا أقضي منه العجب তাকে দেখে আমি আশ্চর্য্য হব না।

আসমা‘য়ী বলেছেন: يبقى ولا ينقضي বাকী থাকবে কিন্তু শেষ হবে না।