ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র ইসলামী রাজনীতি শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১ টি
সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাইআত করেছেন, খুলাফায়ে রাশেদীন এর হাতে বাইআত করেছেন সেভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে কী অন্য কোন ব্যক্তির হাতে বাইআত করতে হবে?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

বাইআত করতে হয় শুধুমাত্র মুসলিম শাসকের হাতে। আহলে হিল্ল ও আকদ তাঁর হাতে বাইআত করবেন। আহলে হিল্ল ও আকদ হচ্ছে- আলেম সমাজ, সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। এ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করার মাধ্যমে তাঁর কর্তৃত্ব সাব্যস্ত হবে। সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করতে হবে না। বরং তারা তার আনুগত্য করবে যতক্ষণ না সেটা গুনাহর আওতায় না পড়ে।

আল-মাজেরি বলেন: “যারা আহলে হিল্ল ওয়াল আকদ শুধু তারা ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করলে যথেষ্ট; সর্বসাধারণের বাইআত করা ওয়াজিব নয়। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সশরীরে তার কাছে হাযির হয়ে হাতে হাত রাখতে হবে এটা জরুরী নয়। বরং প্রত্যেকে তার আনুগত্য করবে, তার কথা মেনে চলবে, তার বিরোধিতা করবে না, তার বিপক্ষে যাবে না।”[ফাতহুল বারী থেকে সংকলিত]

ইমাম নববী ‘শরহে সহিহ মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন: বাইআতের ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে, বাইআত শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাইআত করতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। আহলে হিল্ল ওয়াল আকদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাইআত করতে হবে সেটাও শর্ত নয়। বরং শর্ত হচ্ছে- আলেমসমাজ, নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালী লোকদের মধ্যে যাদেরকে একত্রিত করা সম্ভব হয় তাদের বাইআত করা...। প্রত্যেক ব্যক্তিকে ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে এসে হাতে হাত রেখে বাইআত করতে হবে এমনটি ওয়াজিব নয়। বরং সকলের উপর ওয়াজিব হচ্ছে- রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশ মেনে চলা, তার বিরোধিতা না করা, বিদ্রোহী না হওয়া।” সমাপ্ত

যেসব হাদিসে বাইআতের কথা এসেছে সেখানে বাইআত দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা উদ্দেশ্য। যেমন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল কিন্তু তার গর্দানে বাইআত নেই সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।” [সহিহ মুসলিম (১৮৫১)]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করেছে, হাত দিয়ে ও অন্তর থেকে তার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে সে যেন যথাসম্ভব সে রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য করে। যদি কোন লোক এ রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে টানাটানি করতে আসে তখন তোমরা সে লোকের গর্দান ফেলে দাও।” [সহিহ মুসলিম (১৮৪৪)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যদি দুইজন খলিফার হাতে বাইআত করা হয় তখন শেষের জনকে হত্যা কর” [সহিহ মুসলিম (১৮৫৩)] এ হাদিসগুলো প্রত্যেকটি রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা সংক্রান্ত; এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

বিভিন্ন দলের হাতে বাইআত করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শাইখ সালেহ আল-ফাওযান বলেন: বাইআত শুধুমাত্র মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে করতে হবে। এ ছাড়া যত বাইআত আছে এগুলো বিদআত। এ বাইআতগুলো অনৈক্যের কারণ। একই দেশের একই রাজ্যের মুসলমানদের উপর আবশ্যকীয় হলো একজন রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা। একাধিক বাইআত করা নাজায়েয।[আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ১/৩৬৭]

রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করার পদ্ধতি: পুরুষের বাইআত করার পদ্ধতি হবে মৌখিকভাবে ও কর্মের মাধ্যমে অর্থাৎ মুসাফাহা করে। আর নারীদের ক্ষেত্রে শুধু মৌখিকভাবে। এ পদ্ধতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে সাহাবায়ে কেরামের বাইআতের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আয়েশা (রাঃ) এর উক্তি হচ্ছে- “না, আল্লাহর শপথ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত কখনো কোন নারীর হাতকে স্পর্শ করেনি। তিনি তাদেরকে মৌখিকভাবে বাইআত করাতেন।”[সহিহ বুখারী (৫২৮৮) সহিহ মুসলিম (১৮৬৬)]

ইমমা নববী (রহঃ) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন: এ হাদিসে মহিলাদের হাত না ধরে মৌখিকভাবে বাইআত করানোর দলিল রয়েছে এবং পুরুষের হাত ধরে ও মৌখিকভাবে বাইআত করানোর দলিল রয়েছে।” সমাপ্ত

আল্লাহই ভাল জানেন।

http://islamqa.info/bn/23320