ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র ইসলামী আইন ও এর মূলনীতি শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১ টি
আমরা লাইলাতুল কদরে কী কী ইবাদত পালন করতে পারি এবং সেটি কোন রাত?

প্রশ্ন: লাইলাতুল কদর কিভাবে পালন করা উচিৎ? সেটা কি নামায, কুরআন তেলাওয়াত, সিরাত আলোচনা, ওয়াজ নসিহত, দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য এবং এর জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে উদযাপন করতে হবে?সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে নামায, কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মধ্যে এত বেশী সময় দিতেন যা অন্য সময়ে দিতেন না। আয়েশা (রাঃ) থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে, রমজানের শেষ দশরাত্রি শুরু হলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত জেগে ইবাদত করতেন তাঁর পরিবারবর্গকে জাগিয়ে তুলতেন এবং স্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত থাকতেন। ইমাম আহমাদ ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে: “তিনি রমজানের শেষ দশকে এত বেশী ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।”

দুই:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানের সাথে ও সওয়াব পাওয়ার আশায় রাত জেগে নামায আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে ভাগ্য রজনীতে জেগে নামায আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।”[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]এই হাদীস প্রমাণ করে যে, ভাগ্য রজনীতে জেগে নামায আদায় করা ইসলামি বিধান।

তিন:

ভাগ্য রজনীতে পঠিতব্য সবচেয়ে ভালো দোয়া হচ্ছে- যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। যেটি তিরমিযি আয়েশা (রাঃ) থেকে সংকলন করেছে এবং সহীহ আখ্যায়িত করেছে: তিনি বলেন: আমি বললাম,“হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি জানতে পারি কোন রাতটি ভাগ্য রজনী তবে সে রাতে আমি কী পড়ব? তিনি বললেন,তুমি বলবে:

(اللهمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي. )

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা ‘ফুউ ‘আন্নী (অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে আপনি ভালবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।)

চার:

রমজানের বিশেষ কোন একটি রাত্রিকে ভাগ্য রজনী হিসেবে সুনির্দিষ্ট করতে হলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন। কিন্তু শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ভাগ্য রজনী হওয়া অন্য রাতগুলোতে ভাগ্য রজনী হওয়ার চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় এবং রমজানের সাতাশতম রাত ভাগ্য রজনী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো আমরা যা উল্লেখ করেছি সেটাই প্রমাণ করে।

পঞ্চমত:

কস্মিনকালেও বিদ‘আত (দ্বীনের মধ্যে নতুন প্রবর্তিত বিষয়) করা জায়েয নেই। রমজানের মধ্যেও না, রমজানের বাইরেও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের এই শরিয়তে এমন কিছু প্রবর্তন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা আমাদের শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

রমজানের নির্দিষ্ট কিছু রাতে অনুষ্ঠান উদযাপনের কোন ভিত্তি আমাদের জানা নেই। উত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে- বিদআত (নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ)।

আল্লাহই তাওফিকদাতা।

ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ আদ্‌দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) (১০/৪১৩)

http://islamqa.info/bn/36832