ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র ইসলামী আইন ও এর মূলনীতি শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১ টি
প্রায় দেড় বছর ধরে আমার দাদী/নানী অসুস্থ। তাঁর হুঁশ নেই, তিনি কথা বলতে পারেন না এবং খাবারদাবারও চান না। যদি আমরা তাঁকে কোন খাবার দেই তবে তিনি খান। তাঁর সাথে কেউ কথা বললে তিনি কদাচিৎ তাকে চিনতে পারেন। তাঁর যা প্রয়োজন সেটাও তিনি আমাদেরকে বলেন না।[যেমন ধরুন তিনি বলেন না যে, আমি টয়লেটে যাব। আল্লাহ আপনাদেরকে সম্মানিত করুন**] তাঁর অবস্থা হলো- তিনি কোন নড়াচড়া ছাড়া বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকেন। তাঁর ছেলেরা তাঁকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। আমি তাঁর সিয়াম ও সালাতের ব্যাপারে জানতে চাই। আমরা কি তাঁর পক্ষ থেকে ফিদিয়া আদায় করব এবং ইতিপূর্বে গত অবস্থার জন্য আমাদের কোন করণীয় আছে কী?
[** আরবী ভাষাভাষীরা অপবিত্র জিনিস যেমন জুতো, টয়লেট ইত্যাদির কথা উল্লেখের পর সাধারণত “আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করুন” এই দু‘আটি উল্লেখ করে থাকে।]

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

যিনি বয়সের ভারে দেহ ও মনের চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন, তাঁর বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে, হুঁশ থাকে না এমন ব্যক্তি নামায-রোযার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান। তাঁর উপর কোন কাফ্‌ফারা আদায় করাও আবশ্যক নয়। কারণ মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :“তিন ব্যক্তির উপর থেকে (দায়িত্বের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত (২) শিশু বালিগ হওয়া পর্যন্ত এবং (৩) পাগল বিবেকবুদ্ধি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত ।”[আবু দাউদ (৪৪০৩), তিরমিযী ( ১৪২৩), নাসা’ঈ (৩৪৩২), ইবনে মাজাহ (২০৪১)] আবু দাউদ বলেছেন: “এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে জুরাইজ ক্বাসিম ইবনে ইয়াজিদ হতে, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এবং এ বর্ণনাতে তিনি وَالْخَرِفِ (বয়োবৃদ্ধ) শব্দটি যোগ করেছেন। শাইখ আলবানী এই হাদিসটিকে ‘সহীহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে সহীহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলেছেন:

“আলখারিফ” শব্দটি “আলখারাফ” শব্দ হতে উদ্ভূত। এর অর্থ হলো বার্ধক্যের কারণে বুদ্ধি লোপ পাওয়া। হাদিসে এ শব্দটির অর্থ হলো অতিশয় বৃদ্ধব্যক্তি, বার্ধক্যের কারণে যার বুদ্ধি-বৈকল্য ঘটেছে। অতি বৃদ্ধ ব্যক্তির কখনো কখনো বুদ্ধিভ্রম হতে পারে। যার ফলে তিনি ভালমন্দ বিচার করতে পারেন না। এমতাবস্থায় তিনি আর মুকাল্লাফ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলে বিবেচিত হন না। এ অবস্থাকে পাগলামিও বলা যায় না। সমাপ্ত

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
“নিম্নোক্ত শর্ত ব্যতিরেকে কারো উপর রোযা পালন করা ওয়াজিব হয় না:
১. বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া
২. সাবালগ হওয়া
৩. ইসলাম
৪. সক্ষমতা থাকা

৫. সংসারী (মুকিম) হওয়া, সফরে না থাকা
৬. নারীদের ক্ষেত্রে হায়েয ও নিফাস মুক্ত হওয়া

প্রথম শর্ত:

বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। এর বিপরীত হল বুদ্ধি-বৈকল্য হওয়া। তা পাগলামির কারণে হোক বা বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার কারণে হোক অথবা কোন দুর্ঘটনার কারণে বোধশক্তি ও অনুভুতিশক্তি লোপ পেয়ে যাক। বিবেকবুদ্ধি লোপ পাওয়ার কারণে এ ব্যক্তির উপর কোন শরয়ি দায়িত্ব বর্তায় না। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, বৃদ্ধ ব্যক্তি যদি বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে তবে তাঁর উপর রোযা বা ফিদিয়া প্রদান করার দায়িত্ব বর্তায় না। কারণ তাঁর বিবেকবুদ্ধি অনুপস্থিত।” সমাপ্ত [লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ( ৪/২২০)]

পক্ষান্তরে ইতিপূর্বে যা গত হয়েছে সে সময়ের ক্ষেত্রে উনার অবস্থা যদি এমনই হয়ে থাকে যে উনার কোন জ্ঞান বা উপলব্ধি ছিল না তবে তাঁর উপর কোন সিয়াম বা কাফ্‌ফারা নেই। আর যদি তাঁর জ্ঞান ও বোধশক্তি থেকে থাকে কিন্তু রোগের কারণে সিয়াম ত্যাগ করে থাকেন সেক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে :

(১) যদি সে সময় তাঁর রোগমুক্তির আশা ছিল। কিন্তু তিনি সুস্থ না হয়ে রোগ আরো দীর্ঘায়িত হয়। তবে তার উপর কোন কিছু বর্তায় না। কারণ তাঁর ওয়াজিব ছিল সুস্থ হওয়ার পর কাযা আদায় করা। কিন্তু তিনি তো আর সুস্থ হননি।

(২) আর যদি অবস্থা এমন হয় যে, সে সময়েও তার সুস্থ হওয়ার কোন আশা ছিল না তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের পরিবর্তে কাফ্‌ফারা আদায় করা ওয়াজিব। কাফফরা হচ্ছে একজন মিসকীনকে অর্ধ সা‘ পরিমাণ স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা। আপনারা যদি এ কাফফারা আদায় না করে থাকেন তবে তাঁর সম্পদ থেকে তা আদায় করুন। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর সুস্থতা ও রোগ নিরাময়ের দোয়া করছি এবং আপনাদের জন্য তাওফিক ও দৃঢ়তার প্রার্থনা করছি।

আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

http://islamqa.info/bn/106965