প্রশ্ন-৯৫ : আত্মহত্যামূলক আক্রমণ করা কি জায়েয? এ কাজ সহীহ হওয়ার জন্য কোন শর্ত বা পদ্ধতি আছে কি?

উত্তর : লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ আত্মহত্যা কেন?[1]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ وَلا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيماً * وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَاناً وَظُلْماً فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَاراً وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيراً }

হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।আর যে ঐ কাজ করবে সীমালঙ্ঘন ও অন্যায়ভাবে, আমি অচিরেই তাকে আগুনে প্রবেশ করাব। আর সেটি হবে আল্লাহর উপর সহজ। (সূরা আন- নিসা আয়াত নং ২৯-৩০)

সুতরাং কোন ব্যক্তির জন্য আত্মহত্যা করা জায়েয নয়। বরং নিজেকে যথা সম্ভব সংরক্ষিত রাখবে। তবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে তিনি আল্লাহর পথে জিহাদ-কিতাল থেকে বিরত থাকবেন। যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করবে তাকে শহীদ বলা যাবে না।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে কোন এক যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি খুব বীরবিক্রমে লড়াই করছিল। ছাহাবীগণ তার খুব প্রশংসা করছিল। তারা বলছিল ‘‘অমুক ব্যক্তি আজকে যত বালা-মুছীবতের সম্মুখীন হয়েছে আমরা কেউ তত বালা-মুছীবতের সম্মুখীন হইনি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সে জাহান্নামে যাবে। ছাহাবীদের নিকট বিষয়টি কষ্টদায়ক মনে হলো; ‘এটা কীভাবে সম্ভব যে ব্যক্তি কোন কাফিরকে দেখা মাত্রই তার পশ্চাদ্ধাবন করে তাকে হত্যা করলো অথচ সেই কিনা জাহান্নামে যাবে! অতঃপর জনৈক ছাহাবী তাকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেলেন  যে সে অত্যন্ত আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে আছে। পরিশেষে দেখতে পেলেন যে সে তার তরবারির ধারালো অংশ যমিনের উপর স্থাপন করে  নিজেই তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলো।

এহেন দৃষ্টে ছাহাবী (রা.) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যই বলেছেন। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাওয়া বা প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোন কথা বলেন না।[2] সে এত আমল থাকা সত্ত্বেও জাহান্নামে যাবে কেন? কারণ হলো সে ধৈর্য ধারণ না করে আত্মহত্যা করেছে।

সুতরাং কোন ব্যক্তির জন্য আত্মহত্যা করা জায়েয নয়। এমনিভাবে প্রাণহানীর ঝুঁকি রয়েছে এরকম কোন কাজে অগ্রসর হওয়াও জায়েয নয়। তবে জিহাদ চলাকালীন সময়ে অধিক কল্যাণের কথা ভেবে মুসলিম শাসক নির্দেশ প্রদান করলে তা জায়েয হবে।


[1]. মুহাদ্দিছ আলবানী (রহ.) বলেন, বর্তমান কালের আত্মহত্যামূলক আক্রমণকে শরী‘আহ আল ইসলামিয়্যাহ মোটেও সমর্থন করে না। এটা পুরোপুরি হারাম বা নিষিদ্ধ। ক্ষেত্র বিশেষে সে সকল পাপের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যে পাপ সম্পাদন করলে পাপীর জন্য চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকা অবধারিত হয়ে যায়। এসকল আত্মহত্যামূলক কাজ দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়্যাত করলেও তা কবুল হবে না।

আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উছায়মিন (রহ.) বলেন, বর্তমানে কিছু লোক আত্মহত্যামূলক যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে যেমন, বিষ্ফোরক যন্ত্র শরীরে বহন করে কাফিরদের মাঝে গমন করে বিষ্ফোরণ ঘটায়। এটা মূলতঃ আত্মহত্যা। আমরা আল্লাহর নিকট এ কাজ থেকে আশ্রয় চাই। ( দেখুন আল ফাতওয়া আল মুহিম্মাহ ফি তাবছিরীল উম্মাহ)।

[2]. সহীহ বুখারী হা/২৭৪২,৩৯৬৬ শায়খ (রহ.) হাদীছের মূলভাব উল্লেখ করেছেন। শব্দ উল্লেখ করেননি।