প্রশ্ন-১৬ : বর্তমানে দাওয়াতী সংগঠন ও দাঈ ইলাল্লাহ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মানুষের পক্ষ থেকে সাড়া কমে গেছে। এর রহস্য কী?

উত্তর : প্রথমত আমরা দাওয়াতের জন্য বিভিন্ন সংগঠন তৈরির জন্য উদ্বুদ্ধ করি না। বরং আমরা দাওয়াতের জন্য এমন একটি একক প্রকৃত সংগঠনের আশা পোষণ করি যা বিচক্ষণতার সাথে আল্লাহর পথে আহবান করবে। দল ও মত বৃদ্ধি পাওয়া মূলত ব্যর্থতা ও বিরোধের কারণ। আল্লাহ তা আলা বলেন,  

{ وَلا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ }

পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। (সূরা আল আনফাল ৪৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

{ وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا }

আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে। (সূরা আলি ইমরান ১০৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

{ وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا }

আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আলি ইমরান ১০৩)

আমরা চাই বিশুদ্ধ কর্মপদ্ধতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বিশুদ্ধ দাওয়াতের এক অভিন্ন সংগঠন। এমনকি দেশ ভিন্ন হলেও। কেননা তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল তো এক ও অভিন্ন।[1] একে অপরকে সাহায্য করবে এবং একে অপরের সাহায্য গ্রহণ করবে। এটাই কাম্য। একক মানহাজ ছাড়া বিভিন্ন মানহাজের ভিত্তিতে দাওয়াতী জামাতসমূহ গড়ে উঠার কারণেই মতানৈক্য হয়ে থাকে।

দ্বিতীয়ত : নিঃসন্দেহে দাঈদের (আহবানকারীদের) ইখলাছের (একনিষ্ঠতার) ভিত্তিতে আহবানকৃত ব্যক্তি প্রভাবিত হন। যদি দাঈ একনিষ্ঠভাবে, মানহাজে ছহীহার ভিত্তিতে, বিশুদ্ধ পন্থায়, প্রবল জ্ঞান গরিমার আলোকে দাওয়াত প্রদান করেন তাহলে এই দাওয়াত আহবানকৃত ব্যক্তির উপর বেশি প্রভাব ফেলে। আর যদি দাঈ একনিষ্ঠ না হন তাহলে যেন সে নিজের দিকে অথবা নিজের দল, উপদল, গোত্র, বিভিন্ন জামাত ইত্যাদির প্রতি আহবান করে, যদি সে দাওয়াত ইসলামী দাওয়াত বলে প্রচারিত হোক না কেন, তা ফলপ্রসূ হয় না এবং তা ইসলামী দাওয়াত নয়।

এমনিভাবে দাঈ যদি মানুষকে কুরআন সুন্নাহর প্রতি আহবান করে কিন্তু নিজেই তদনুযায়ী আমল না করে, তাহলে এর কারণেও লোকজন তার নিকট থেকে দূরে চলে যায়। অন্তরের খবর তো আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ মানুষের সকল কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবগত। চাই তা ব্যক্তি যেখানেই সম্পাদন করুক না কেন। যখন সে আল্লাহদ্রোহিতায় চরম আকার ধারণ করে এবং মানুষের নিকট প্রকাশ পায় যে, সে সৎকাজের প্রতি আহবান করলেও নিজেই তার বিপরীত কাজ করে, তাহলে এ দাওয়াত কোনোই প্রভাব ফেলতে পারে না। তার থেকে মানুষ দাওয়াত গ্রহণ করে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তার দা‘ওআতে কোনোই বরকত রাখেননি।

একনিষ্ঠ দাঈদের প্রতি লক্ষ্য করুন, তাদের দাওয়াত কি ফলাফল বহন করেছে? তারা এককভাবে ছিলেন। তাদের কি কোনো বিরোধী ছিল না? যেমন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া, তার ছাত্রবৃন্দ, শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব ও অন্যান্য দাঈ (রহ.) এর দাওয়াত।

আর লক্ষ্য করুন বর্তমানের দাঈ ও দাওয়াতী জামাত সমূহের সংখ্যাধিক্য ও তাদের প্রভাব ও উপকার কম হওয়ার প্রতি। জেনে রাখুন, সংখ্যাধিক্য ধর্তব্যের বিষয় নয়। বরং গুণগত মানই হলো একমাত্র ধর্তব্যের বিষয়।


[1]. তাদের এক অভিন্ন উৎস হলো পবিত্র কুরআনুল কারীম ও সুন্নাতে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তারা অনুধাবন করবে সালাফে সালেহীনের বুঝ অনুযায়ী।