প্রশ্ন-৪ : বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নানা ধরনের ইসলামী জামাত বা দলের নাম শুনতে পাই। এসব নামের ভিত্তি কী? তারা যদি কোন বিদআত না করে তাহলে তাদের সাথে অংশগ্রহণ করা কি বৈধ হবে?

উত্তর : আমরা কীভাবে কাজ করব তার দিক-নির্দেশনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলে দিয়েছেন। যে সকল কাজকর্ম দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায় তার সবই তিনি বর্ণনা করেছেন, কিছুই বাকি রাখেননি। এমনিভাবে যে সকল কাজকর্ম আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে তাও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।[1] এ মাসআলাটিও কিন্তু সেরকমই একটি বিষয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

فإنه من يعش منكم فسيرى اختلافاً كثيرًا

(আমার পরে) তোমাদের যে কেউ বেঁচে থাকবে সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে।[2]

এরূপ দলাদলি শুরু হলে সমাধান কী হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسَّكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور؛ فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة

‘‘সুতরাং তোমাদের কর্তব্য হবে আমার এবং আমার পরবর্তী হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, তোমরা তাকে মাড়ির দাঁত দ্বারা কামড়িয়ে ধরবে। আর তোমরা সকল প্রকার নব্য কাজ থেকে নিরাপদ দূরতেব অবস্থান করবে; কেননা প্রত্যেক নতুন কাজই বিদআ’ত; প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী’’।[3]

সুতরাং এসকল জামাতের[4] মধ্যে যে জামাতই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবায়ে কিরাম বিশেষত খুলাফায়ে রাশিদীনের ও ফযীলাত প্রাপ্ত যুগের মানহাজের (পথ ও পদ্ধতির) উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে আমরা তাদের সাথেই সম্পৃক্ত থাকব, তাদের সাথে কাজ করব।

আর যে দলই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ-নির্দেশনার বিরোধিতা করবে আমরা তাদের থেকে দূরে থাকব, যদিও তাদের নাম ইসলামী জামাত বা দল হয়। নাম কোনো ধর্তব্য ব্যাপার নয়। বাস্তবতাই মূল ধর্তব্যের বিষয়। অনেক সময় বড় বড় নাম থাকলেও দেখা যায় তা অন্তঃসারশূন্য, বাতিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة، وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة، وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة، كلها في النار إلا واحدة )) قلنا : من هي يا رسول ؟، قال : (( من كان على مثل ما أنا عليه اليوم وأصحابي ))

ইয়াহূদীরা ৭১ দলে এবং খ্রিষ্টানেরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল অচিরেই এই উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত  হবে। তাদের প্রত্যেক দলই জাহান্নামে যাবে; মাত্র একটি দল ছাড়া। আমরা (ছাহাবীগণ) বললাম হে আল্লাহর রসূল, সে দল কোনটি? তিনি বললেন: বর্তমানে আমি এবং আমার ছাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত আছি এ মতের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।[5]

চলার পথ সুস্পষ্ট; যে জামাতের মাঝে এই বৈশিষ্ট্য থাকবে আমরা তাদের সাথে থাকব। যারাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে কিরামের মানহাজের উপর থাকবে তারাই প্রকৃত ইসলামী জামাত।

আর যারা এই মানহাজের (কর্মপদ্ধতির) বিরোধিতা করে অন্য পথে চলবে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমরাও তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমরা সে পথের সাথে সম্পৃক্ত হব না। সে পথও আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হবে না। তাদেরকে জামাত বলা হবে না। বরং তাদেরকে অন্যতম একটি ভ্রষ্ট ফিরক্বা বলা হবে। কেননা জামাত একমাত্র হকের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে। যার উপর মানুষ একত্রিত হয়। আর ভ্রষ্টতা তো শুধু বিচ্ছিন্নই গড়ে, ঐক্য গড়ে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ

আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায় (সূরা আল বাক্বারা ২/১৩৭)।


[1]. এখানে শায়খ হাফিযাহুল্লাহ একটি সহীহ হাদীছের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে সকল কাজ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয় তার প্রত্যেকটিরই নির্দেশনা প্রদান করেছি’’। আব্দুর রাযযাক, মুছান্নাফ খ.১১ পৃ১২৫, বায়হাকী, মা‘রিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার খ.০১ পৃ ২০

[2]. আল মু‘জামুল কাবীর লিত ত্ববরানী  খ.১৮, পৃ.২৪৮, হা/৬২৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম খ.০১, পৃ. ১৭৪, হা/৩২৯।

[3]. সকল সূত্রে সহীহ, আবু দাউদ হা/৪৬০৭ তিরমিযী হা/২৬৭৬, ইবনু মাজাহ (মুকাদ্দামা-৩৪), আলবানী, ইরওয়া হা/২৪৫৫।

[4]. কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফে সালেহীনের মানহাজের বিরোধী এসকল দলকে ফিরকা বলাই উত্তম। এটাই ওদের শারঈ নাম। যেমনটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরাক সম্পর্কিত হাদীছে এ নামই বলেছেন। আর হাদীছে ইঙ্গিতকৃত জামাত হলো একমাত্র মুসলিমদের জামাত। আল্লাহই মহাজ্ঞানী।

[5]. হাসান: তিরমিযী হা/২৬৪১, হাকিম ১/১২৯, ইবনে মাজাহ হা/৩৯৯২, সুনানে আবূ দাউদ হা/৪৫৯৭।