প্রশ্ন-২ : গ্রীষ্মকালীন কেন্দ্রসমূহে অভিনয় ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়; এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

উত্তর : ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলিকে কেন্দ্রসমূহের পরিচালকদের কর্মসূচি থেকে বাদ দেয়া আবশ্যক। তাদেরকে কুরআন, সুন্নাহ/হাদীছ, ফিক্বহ এবং আরবী ভাষা শিক্ষা দিবেন। তাদের সময় ও মনোযোগ এগুলোর প্রতি নিবিষ্ট রাখবেন। এমনিভাবে দুনিয়াবী প্রয়োজনীয় বিদ্যাসমূহ যেমন গণিত, বিভিন্ন ব্যবহারিক যোগ্যতা শিক্ষা দিবেন। আর তারা যে সকল কাজকে বিনোদনমূলক কাজ বলে অভিহিত করে বস্ত্ততঃ সেগুলোকে তালিকায় রাখার কোন প্রয়োজন নেই।[1] কেননা এর দ্বারা কিছু সময় বিনা উপকারে কেটে যায়। বরং কখনো কখনো তাদেরকে এমন মত্ত রাখে যে তারা মূল উদ্দেশ্যই ভুলে যায়। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে সকল অভিনয় ও সংগীত শেখানো ও প্রচার করা  হয় তা খেল তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।

[1]. শায়খ সলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান (রহ.) তার ‘আল-খুতাবুল মিমবারিয়্যাহ’ (১৪১১ হিজরিতে প্রকাশিত) নামক গ্রন্থের ৩নং খণ্ড-র ১৮৪ ও ১৮৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘‘জ্ঞাতব্য : বর্তমানে অনেক দীনদার যুবকদের মাঝেও যৌথসংগীত বাজানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এ সংগীতগুলোকে ইসলামী সংগীত বলে থাকে। বস্ততঃ এ সংগীতগুলোও গানের অন্তর্ভুক্ত। কখনো কখনো এগুলো ফিতনা সৃষ্টি করে। আওয়াজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ক্যাসেটের দোকানে কুরআনুল কারীম ও দ্বীনী বক্তৃতার ক্যাসেটের সাথে বিক্রি করা হয়। এসকল সংগীতকে ইসলামী সংগীত বলা মারাত্মক ভুল। কেননা ইসলামী শরী‘আ হতে কোন সংগীতকে দীন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়নি। বরং আল্লাহর যিকর, কুরআন তিলাওয়াত এবং কল্যাণকর ইলম অর্জন করা ইত্যাদিকে দীন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে

সংগীত : সংগীত হলো বিদাতী সুফীদের ধর্ম; যারা দীনকে খেল-তামাশা মনে করে।

সংগীতকে দীনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য অর্জন করার নামান্তর। তারা সুরেলা কণ্ঠে যৌথ গান গাওয়াকে ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে। সুতরাং এসকল সংগীত থেকে সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক। সংগীতের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে যে সকল ফিতনা-ফাসাদ, হট্টগোল-বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য এর কেনাবেচা, বিনিময় ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে হবে।

সংগীত প্রচলনকারীরা দলিল হিসাবে বলে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটও তো কবিতা পাঠ করা হতো। তিনি নিজে শ্রবণ করতেন এবং সম্মতি প্রদান করতেন।

উত্তর: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আবৃতিকৃত সংগীতগুলো গানের মত যৌথ স্বরে আবৃতি করা হতো না এবং সেগুলোকে ইসলামে সংগীতও বলা হতো না। বরং সেগুলো ছিল বিজ্ঞবচন, প্রবাদ, বীরত্ব ও মর্যাদার গুণাবলী বর্ণনা সম্পন্ন। ছাহাবীগণ এর অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে একাকি আবৃতি করতেন।

কিছু কিছু কবিতা ক্লান্তিকর কাজ যেমন নির্মাণ কাজ, রাতে সফর সম্পাদনের সময় আবৃতি করতেন। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যে, বিশেষ কিছু সময়ে এধরণের কবিতা আবৃতি করা বৈধ; তবে তা শিক্ষা ও দাওয়ার বিষয় হতে পারে না। অথচ এটাই বর্তমানের নির্মম বাস্তবতা। এমনকি ইসলামি/দ্বীনী গান/সংগীত নাম দিয়ে ছাত্রদেরকে শিখানো হয়।

এটা দীনের মধ্যে বিদআত বা নতুন আবিষ্কারের অন্তর্ভুক্ত। এটা বিদাতী সুফীদের কাজ; যারা সংগীতকে ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে।

সুতরাং এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এসকল ক্যাসেট বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি অংকুরেই একে দূর না করা হয় তাহলে এর ক্ষতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে। ক্ষতি অল্প অল্প করেই শুরু হয় পরবর্তীতে সর্বগ্রাসী রূপ নেয়।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উসায়মিন (রহ.) কে সংগীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,

‘‘প্রশ্ন : পুরুষের জন্য কী ইসলামী সংগীত আবৃতি করা বৈধ? আবৃতির সাথে সাথে কি দাফ বাজানো যাবে? ঈদ এবং আনন্দ অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য সময় কি আবৃতি করা বৈধ?

উত্তর : ইসলামী সংগীত আবৃতি করা একটি বিদআত; যা সুফীরা আবিষ্কার করেছে। এজন্য এর থেকে বিরত থেকে কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা উচিত। জিহাদের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য সংগীত ব্যবহার করা বৈধ। তবে এর সাথে দফ যোগ করলে বৈধতা অবশিষ্ট থাকবে না। মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উসাইমিন (রহ.) ফাতওয়া, সংকলক, আশরাফ আব্দুল মাকছুদ ১/১৩৪-১৩৫, ২য় প্রকাশ, ১৪১২ হিজরী, মাকতাবা দারু আলামিল কুতুব।