ইসলামে জিহাদ আছে। তবে জিহাদ ও সন্ত্রাস এক নয়। যেখানে সেখানে ২/১টি ঢিল মেরে দিয়ে কয়েকটা মশা-মাছি মারার নাম জিহাদ নয়। এখানে-ওখানে ২/১ টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কিছু সংখ্যক নিরপরাধ মানুষকে খুন করার নামও জিহাদ নয়। যেমন ব্যক্তিগত, গ্রামগত, পাটিগত, মাঠগত বা খেলাগত কোন বিবাদকে সাম্প্রদায়িকতার রূপ দিয়ে দাঙ্গা করার নামও জিহাদ নয়। জিহাদ হল তা-ই, যা একমাত্র ইসলামের কলেমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। ধন ও নেতৃত্ব লোভ ও লাভের উদ্দেশ্যে যা করা হয়, তা জিহাদ নয়। জিহাদের জন্য মুসলিম ইমাম (নেতা, ফাসেক হলেও) জরুরী। ইমাম ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন লড়াই লড়া ঐ জিহাদ নয়। মহানবী ১৪ বলেন, “ইমাম তো ঢাল স্বরূপ; তারই আড়ালে থেকে লড়াই লড়া হয়।” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, সহীহুল জামে’ ২৩২১, ২৩২২ নং)

জিহাদ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে ফরয করা হয়েছে ইসলামে। জিহাদ জিহাদের ময়দানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বেসামরিক লোকদেরকে হত্যা করা যাবে না জিহাদে। কোন দূত হত্যা করা যাবে না তাতে। বৃদ্ধ, নারী ও শিশু হত্যা করা যাবে না। শত্রু পক্ষের ফসল নষ্ট করা যাবে না। অপ্রয়োজনে বাড়ি-ঘর জ্বালানো যাবে না এবং উপাসনালয় নষ্ট করা যাবে না। সুতরাং যে মার-দাঙ্গাতে ইসলামী উদার-নীতির লংঘন হয়, তা জিহাদ নয়। পক্ষান্তরে আত্মরক্ষার নাম সন্ত্রাস নয়। ইসলামী রাষ্ট্রকে যালেমদের যুলুম থেকে রক্ষাকল্পে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক তৎপরতার নাম সন্ত্রাস নয়। শির্ক, অরাজকতা, স্বৈরাচার, অনাচার এবং অনধিকার বিদ্রোহ দমন করার নাম সন্ত্রাস নয়। সন্ত্রাসবাদ, আগ্রাসনবাদ, আল্লাহ-দ্রোহিতা দমন ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে এবং মুসলিম জাতির সম্মান ও সম্পদ

রক্ষার্থে কৃত সংগ্রামের নাম সন্ত্রাস নয়। স্বাধীনতার স্বাধিকার আদায় করার পথে কৃত সংগ্রামের নাম সন্ত্রাস নয়। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস-ঝড় সৃষ্টি করে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিলে তার জন্য দায়ী মুসলিমরা নয়। বিপ্লবী যুবক বন্ধু আমার! তবে আবারো জেনে রাখ যে, এই শ্রেণীর জিহাদ মুসলিম নেতৃত্ব ছাড়া হয় না। ব্যক্তিগতভাবে পাৰ্টিৰ্গত দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা করার নাম জিহাদ নয় এবং রাজনৈতিক গদি-দখলের লড়াই-এ হত ব্যক্তি আল্লাহর নিকট শহীদ’ নয়।

হয়তো বলবে, ইসলামে কি রাজনীতি নেই? হ্যা, ইসলামে রাজনীতি অবশ্যই আছে। তবে ইসলামে আছে ইসলামী রাজনীতি; কোন অনৈসলামী রাজনীতি নয়।

ইসলামে নবী-রসুলগণও রাজ্য-শাসন করে গেছেন। রাজ-কার্য পরিচালনা করে গেছেন বেহেস্তের সুসংবাদ-প্রাপ্ত খলীফা ও সাহাবাগণ। আর সে রাজনীতির নীতি-রচয়িতা ও আইনপ্রণেতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। এর নীতি-শাস্ত্র হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। কারণ, আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম ও বিধান চলতে পারে না। তার আইন ছাড়া আর কারো আইন -কোন মানব-রচিত আইন- নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। “সকল কর্তৃত্ব আল্লাহরই।” (সূরা আনআম ৫৭ আয়াত) “সতর্ক হও! সুবিচার তারই এবং তিনি সত্বর হিসাব গ্রহণকারী।” (ঐ ৬৩ আয়াত) “বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই।” (সূরা ইউসুফ ৪০ আয়াত)

ইয়াকূব (আঃ) তাঁর পুত্রদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আমি তোমাদের জন্য কিছু করতে পারি না। বিধান আল্লাহরই। আমি তারই উপর। নির্ভর করি এবং যারা নির্ভর করতে চায় তাদেরও উচিত, তাঁরই উপর নির্ভর করা।”

মহান আল্লাহ বলেন, “তবে কি ওরা অজ্ঞ (জাহেলী) যুগের বিচার-ব্যবস্থা কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী (মু'মিন) সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিকতর উত্তম মীমাংসাদাতা আছে?” (সূরা মাইদাহ ৫০ আয়াত)

মহানবী (সা.) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহই হলেন মীমাংসাদাতা (বিধানকর্তা) এবং যাবতীয় নির্দেশ ও বিধান তারই।” (আবু দাউদ ৪৯৫৫, নাসাঈ ৫৪০২, হাকেম, সহীহুল জামে ১৮৪৫ নং)

ইসলামে মুনাফেকীর রাজনীতির অস্তিত্ব নেই৷ সাম, দান, ভেদ ও দন্ড -এই চার প্রকার নীতি নিয়ে অন্যায়ভাবে অসঙ্গত সমতা সাধন, অন্যায় ও অসৎভাবে অর্থ দান বা ব্যয়করণ, অন্যায় ও অবৈধভাবে একটি সংহতিপূর্ণ গোষ্ঠীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করে ভেদ আনয়ন এবং অন্যায় ও স্বৈরাচারিতার সাথে কোন সম্প্রদায়কে দন্ড প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে গদি টিকাবার রাজনীতি ইসলামে নেই।

আমেরিকান, ইউরোপীয় বা কোন মানব-রচিত নীতির রাজনীতি ইসলামে নেই। ইসলামে কোন দলাদলি নেই, নেই কোন জাতীয়তাবাদ। এক দল অপর দল বা বিরোধী দলের উপর খামাখা দোষ চাপিয়ে নিজের ফায়দা লুটার রাজনীতি, কাদা হুঁড়াছুঁড়ির রাজনীতি, আত্মহত্যা, খুন ও ভাঙচুরের রাজনীতি, বিক্ষোভ প্রদর্শনে ধ্বংসলীলা ও ধর্মঘট বা হরতালে জন-জীবন ব্যাহত ও অচল করার রাজনীতি ইসলামে নেই, কোন সভ্য সমাজে নেই। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পার্টাপাটি করে অন্তর্দ্বন্দ্বে ও আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে মুসলিম জাতি নিজেকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে না। ভোটাভোটির সাথে লাঠালাঠি করে দেশ ও দশের তথা স্বজাতির ক্ষতি করতে কোন মুসলিম পারে না। এমনিতে রাজনীতির ধারাই এমন যে, কেউ দেশের স্বার্থে পাটি করে মাটি হয়। আর কেউ নিজের স্বার্থে পার্টি করে প্রপাটি বানিয়ে হয়ে যায় খাঁটি সোনা! কেউ নেচে মরে, আর কেউ ঝুলি ভরে। রাজনীতির এই ব্যাপক প্রভাবে আজকের যুবকরা খুব বেশী প্রভাবান্বিত।

হকপন্থী তারা, যাদের নিকট হক আছে; যদিও তারা সংখ্যালঘু। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার পূজারী নয়। কারণ, এ পূজা কুরআনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথা মত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে। তারা কেবল কল্পনারই অনুসরণ করে এবং কেবলমাত্র অনুমানই করে থাকে।” (সূরা আনআম ১১৬ আয়াত)

“তুমি বল, মন্দ ও ভালো এক বস্তু নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। সুতরাং হে জ্ঞানবান সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা মাইদাহ ১০০ আয়াত)

একটি চিরবাস্তব এই যে, এ সংসারে ভালোর সংখ্যা কম, মন্দের সংখ্যা বেশী। এ বাস্তব পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ লোকই ঈমান আনবে না।” (সূরা ইউসুফ ১০৩ আয়াত) এ মর্মে আরো দেখ, (২/১০০, ১১/১৭, ১২/১০৬, ১৩/১, ১৬/৮৩, ১৭/৮৯, ২৫/৫০, ৩৬/৭, ৪০/৫৯)

“অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৪৩ আয়াত) এ মর্মে আরো দেখ, {/১৭, ১০/৬০, ১২/৩৮, ২৪/৭৩, ৪০/৬১) “আমার বান্দাগণের মধ্যে কম সংখ্যক লোকই কৃতজ্ঞ।” (সূরা সাবা ১৩ আয়াত) এ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই হকের ব্যাপারে অবুঝ ও অজ্ঞ। এ প্রসঙ্গ কুরআন মাজীদে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ দেখ, (৫/১০৩, ৬/৩৭, ৬/১১১, ৭/১৩১, ৭/ ১৮৭, ৮/৩৪, ১০/৫৫, ১২/২১, ১২/৪০, ১২/৬৮, ১৬/ ১৮, ১৬/৭৫, ১৬/১০১, ২১/২৪, ২৫/৪৪ ২৭/৬১, ২৮/ ১৩, ২৮/৫৪, ২৯/৬৩, ৩০/৬, ৩০/৩০, ৩১২৫, ৩৪/২৮, ৩৪/৩৬, ৩৯/২৯, ৩৯/৪৯, ৪০/৫৭, ৪৪৩৯, ৪৫/২৬, ৫২/৪৭)। (আগামী হযরত ঈসার যুগ ছাড়া) প্রত্যেক যুগে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সত্যত্যাগী ফাসেক। এ মর্মে দেখ, (৫/৫৯, ৪/৭৮, ৩/১১০, ৭/১০২, ৯৮, ২৩/৭০)। সুতরাং বুঝতেই তো পারছ বন্ধু! অধিকাংশ মানুষকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী, কৃতজ্ঞ না করা পর্যন্ত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝদার ও জ্ঞানী না হওয়া পর্যন্ত এবং বেশীরভাগ মানুষ সত্যানুসারী না হওয়া পর্যন্ত বর্তমানের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা সহজ নয়।

মহানবী (সা.) বলেন, “মুষ্টিমেয় লোক নিয়ে পৃথিবীতে ইসলামের সূচনা হয়েছিল। তার সমাপ্তিও হবে অনুরূপ। সুতরাং সুসংবাদ সেই মুষ্টিমেয় লোকদের জন্য।” (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে' ১৫৮০ নং)

যুবক বন্ধু আমার! দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের মন রক্ষা করে চলার রাজনীতি ইসলামে নেই। ইসলামের যাবতীয় নীতি হল কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যম। অতএব অধিকাংশ

মানুষ বাতিলপন্থী হলে তাদের মন যোগিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার মত দুঃসাহসিকতাপূর্ণ রাজনীতি মুসলিম করতে পারে না। মহানবী মুক্তি বলেন, “যে ব্যক্তি লোকেদেরকে অসন্তুষ্ট করেও আল্লাহর সন্তুষ্ট অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তির জন্য লোকেদের কষ্টদানে আল্লাহই যথেষ্ট হন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে লোকেদের সন্তুষ্টি খোজে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ লোকেদের প্রতিই সোপর্দ করে দেন।” (তিরমিযী, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৩১ ১নং)

যুবক ভাই আমার! যুবকের জীবন হওয়া উচিত তিনটি নৈতিকতার সমষ্টি। অর্থাৎ, তার জীবনে থাকবে রাব্বানী, সালাফী ও হারাকী কৰ্মসুচীর ভারসাম্যপূর্ণ তৎপরতা। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দ্বীনী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো, যথাসাধ্য দ্বীনের খিদমত করা এবং সলফে সালেহীনদের তরীকা অনুযায়ী দ্বীন প্রতিষ্ঠাকল্পে আমরণ সংগ্রাম করার স্পৃহা ও আন্দোলন থাকবে তার হৃদয়-মনে। পক্ষান্তরে কেবল রাব্বানিয়াত ও রূহানিয়াত থাকলে সে নিছক সুফীবাদী হয়ে পড়বে। কেবল হারাকী হলে নিছক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে উঠবে। অন্যথা সালাফিয়াত ছাড়া উভয়ের কোন মুল্যই নেই। আবার রাব্বানিয়াত ও সালাফিয়াত ছাড়া কোন রাজনীতি, কোন আন্দোলন সঠিক ইসলামী আন্দোলন নয়। বরং তা হয়তো ব্যক্তিপূজা ও গদিপূজার আন্দোলন।

বলা বাহুল্য উক্ত তিন উপাদান-সমষ্টির ব্যক্তিত্ব হল ‘কামেল’ ব্যক্তিত্ব। এমন ব্যক্তিত্বই ছিল সলফে সালেহীনদের।

তবে বন্ধু একটি কথা এখানে অবশ্যই মনে রেখো যে, রাজনীতি ত্যাগ করাও এক রাজনীতি। বরং রাজনীতি দিয়ে ইসলামী দাওয়াতের কাজ শুরু করা হিকমতের কাজ নয়; আম্বিয়াগণের তরীকাও তা নয়। মহানবী # মক্কাতে রাজা হননি। কুরাইশরা তাঁকে রাজা করতে চাইলেও তিনি জানতেন যে, তা আল্লাহর দ্বীন প্রচারে সহায়ক নয়। রাজ্য হাতে পেয়ে প্রজার উপরে জোরপূর্বক ইসলাম চাপিয়ে দিবেন -তাও সম্ভব ছিল না। আশঙ্কা ছিল বিদ্রোহ সৃষ্টির। অতএব তখন প্রয়োজন ছিল তরবিয়ত ও মানুষ তৈরীর। নও মুসলিম ডক্টর জন পার্কস তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসলাম সম্বন্ধে কাউকে বোঝাতে চাইলে ধৈর্য ধরুন, ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ইনফরমেশন দিন। রাজনীতিকে দূরে ঠেলে রাখবেন এ সময়ে। তাহলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে রক্ষা পাবেন। (মাসিক দারুস সালাম, ফেব্রুয়ারী ২০০০, ২৪পৃঃ)।

যুবক বন্ধু আমার! সীরাতের আলোকে মুসলিমদের বিভিন্ন সমাজ আছে। মক্কী, হাবশী, মাদানী প্রভৃতি। মক্কী সমাজে বসবাস করে মাদানী সমাজের কার্যকলাপ চালাবে -তা তো হিকমতের কাজ নয় বন্ধু ইসলামের জন্য মাথা দেওয়ার মত তোমার স্পৃহা আছে, তুমি ইসলামের জন্য মাথা দাও। কিন্তু তার আগে খতিয়ে অবশ্যই দেখে নাও যে, আসলে তোমার মাথা দেওয়াতে সত্যপক্ষে ইসলামের কোন লাভ আছে, নাকি ক্ষতি।

হ্যাঁ, আর কাফেরদের অপপ্রচারে তুমি নিরাশ হয়ো না ভাই! তাদের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের বদনাম করার জন্য যে সব শব্দ ব্যবহার করে থাকে, তাতে তোমার বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। দুশমন তো। তারা নখে পারলে কোদাল চায় না। তোমার মঙ্গল কোন দিন চাইবে কি তারা? ‘মৌলবাদ’ ‘মোল্লাতন্ত্র প্রভৃতি শব্দ তাদের তুণের এক একটি দিব্যাস্ত্র। মানুষের মাঝে আল্লাহর বিধান সম্পর্কে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মুসলিম বুদ্ধিজীবীরাও এই ধরনের শব্দ বেছে নিয়ে প্রচার করে থাকে।

আল্লাহর বিধানকে এরা চিরাচরিত প্রথা মনে করে। মনে করে, এ হল অশিক্ষিত মানুষের আনা কুসংস্কার। ভাবে, এ হল সামাজিক রক্ষণশীলতা!! অহীর আলোহীন তাদের ঐ পাশ্চাত্য দেমাগে মনে করে তাদের পথটাই সঠিক। মহান আল্লাহ ঐ ধরনের এক শ্রেণীর লোকের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “তুমি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যাদেরকে গ্রন্থের এক অংশ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রতিমা ও শয়তানকে মান্য করে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, মুমিনদের তুলনায় তারাই অধিকতর সুপথগামী। এদেরই প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। আর আল্লাহ যাকে অভিসম্পাত করেন, তুমি তার জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।” (সূরা নিসা ৫১-৫২ আয়াত)

আর মৌলবাদ’-এর দু'টো দিক। প্রথম হল সব কিছুতে অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি এবং তার সঙ্গে উগ্রতা ও সহিংসতাও। এমন মৌলবাদের সাথে ইসলামের নিকট অথবা দূরের কোন সম্পর্ক নেই। অবশ্য দ্বিতীয় দিকটা হল, মৌলনীতির অনুসরণ (ঈমানসহ আমল) করা। আর এ অর্থে প্রত্যেক মুসলিমকে মৌলবাদী’ হওয়া জরুরী। নচেৎ সে মুসলিমই থাকবে না।

যুবক বন্ধু আমার! মৌলবাদী খেতাব নিয়ে তুমি গর্বিত হও। তোমার মুল আছে বলেই তুমি মৌলবাদী। আর যার মূল নেই, কেবল কান্ড ও ডাল-পাতা আছে, তার বাহ্যিক রূপ ক’দিনের? মূলহীন কান্ড ও ডাল-পাতা হল প্রাণহীন। আর প্রাণহীন হল শুষ্ক ইন্ধন। এরা দোযখের ইন্ধন। পক্ষান্তরে যার মূল আছে, তার সজীব কান্ডও আছে, তরোতাজা ডালপাতা, ফুল-ফলও আছে।

“তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে কালেমা ত্বাইয়েবা (পবিত্র বাক্যে)র উপমা দেন, যেমন উৎকৃষ্ট (পবিত্র) বৃক্ষ; যার মূল সুদৃঢ়, যার শাখা-প্রশাখা গগনস্পর্শী। তার প্রতিপালকের ইঙ্গিতে সে অহরহ ফলদান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

পক্ষান্তরে অপবিত্র বাক্যের উপমা অপবিত্র বৃক্ষ; যার মূল মাটি থেকে উপড়ে নেওয়া হয়েছে, যার কোন স্থিতি নেই। আল্লাহ মুমিনদেরকে সুদৃঢ় বাক্য দ্বারা সুদৃঢ় করেন, ইহকালে এবং পরকালে। আর আল্লাহ যালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।” (সূরা ইবরাহীম ২৪-২৭ আয়াত)

অতএব তুমি কার প্রশংসা পছন্দ কর? বেদ্বীন কাফেরদের, নাকি তোমার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর?