অপ্রয়োজনীয় কথা, মিথ্যা কথা, পরনিন্দা, পরচর্চা, অশ্লীল কথাবার্তা পরিহার করা একান্ত কর্তব্য। আল কুরআন ও সুন্নাতে রাসূলে এ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। যারা সর্বদা সত্য কথা বলেন তাদের প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেন,

وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ

সত্যবাদী পুরুষ এবং সত্যবাদী মহিলাগণ ...।[১]

আরেক জায়গায় বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ সম্পর্কে সতর্ক হও এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।”[২]

সূরা ইসরা বা বানী ইসরাঈলে বলা হয়েছে,

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ

‘যে সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই, তার পেছনে ছুটো না।[৩]

সূরা আয যুমারে বলা হয়েছে,

فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَذَبَ عَلَى اللَّهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ إِذْ جَاءَهُ ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِينَ * وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

তার চেয়ে বড়ো যালিম আর কে আছে, যে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলে এবং সত্য আসার পর তা মিথ্যা মনে করে? অবিশ্বাসীদের আবাসস্থল জাহান্নাম নয় কি? যারা সত্য নিয়ে এসেছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই মূলত মুত্তাকী।[৪]

অন্যত্র আরও বলা হয়েছে,

إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ

যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তারা কখনও কল্যাণ পেতে পারে না।[৫]

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,

إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى البِرِّ، وَإِنَّ البِرَّ يَهْدِي إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا. وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا

সত্য নেকীর দিকে পথ দেখায়, নেকী জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোনো মানুষ সত্যের অনুশীলন করলে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে তার নাম লিখা হয়। আর মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে, পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। কোনো ব্যক্তি মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর কাছে তার নাম মিথ্যাবাদী হিসেবেই লিখিত হয়।[৬]

সহীহ্ মুসলিমে সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) বলেছেন,

من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة

‘কেউ যদি তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী এবং দুই রানের মধ্যবর্তী জিনিসের গ্যারান্টি দিতে পারে আমি তাকে জান্নাতের গ্যারান্টি দিতে পারি।[৭]

শুরাইহ্ আল কুযায়ী (রাঃ) থেকে সহীহ্ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ

‘যে আল্লাহ এবং পরকালের বিশ্বাস করে তার উচিত ভালো কথা বলা কিংবা চুপ থাকা।[৮]

[১]. সূরা আল আহযাব, আয়াত : ৩৫।

[২]. সূরা আত তাওবা, আয়াত : ১১৯।

[৩]. সূরা ই (বানী ইসরাঈল), আয়াত : ৩৬।

[৪]. সূরা আয যুমার, আয়াত : ৩২, ৩৩।

[৫]. সূরা ইউনুস, আয়াত : ৬৯।

[৬]. সহীহ আল বুখারী, আদাব অধ্যায়; সহীহ মুসলিম, সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক ও শিষ্টাচার অধ্যায়, মিথ্যার কদর্য ও সত্যের সৌন্দর্য ও তার ফযীলত' শিরোনাম (হাদীস-৬৩৩৯)।

[৭]. দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস বলতে মুখ এবং দুই রানের মধ্যবর্তী জিনিস বলতে লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। কারণ বেশীর ভাগ পাপ মানুষ মুখ ও লজ্জাস্থানের মাধ্যমেই করে থাকে।– অনুবাদক।

[৮]. সহীহ আল বুখারী, আদাব বা শিষ্টাচার অধ্যায়; সহীহ মুসলিম, সুকতা বা হারানো বস্তু প্রাপ্তি অধ্যায় (হাদীস-৪৩৬৪)।