ঈমানের আরেকটি শাখা হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুল। আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআলা বলেন,

وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

যারা মুমিন তাদের তো আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।”[১]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

‘তোমরা কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভরশীল হও, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।'[২]

যারা সত্যিই আল্লাহর উপর নির্ভর করতে পারে, আল্লাহ্ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেন,

وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তার জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তাঁর কাজ সমাপ্ত করবেনই।'[৩]

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে,

في سؤال أصحابه له عن السبعين ألفا الذين يدخلون الجنة يرزقون فيها بغير حساب. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم هم الذين لا يكتوون ولا يسترقون ولا يتطيرون - وعلى ربهم يتوكلون - فقام عكاشة بن محصن فقال أنا منهم یارسول الله فقال أنت منهم. ثم قام رجل أخر فقال أنا منهم يارسول الله فقال سبقك بها عكاشة

যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব লোক হচ্ছে তারা, যারা লৌহ পুড়িয়ে দাগ দেয় না, যাদুটোনা চর্চা করে না, গণক বা জ্যোতিষীদের কথায় বিশ্বাস করে না, এসবের বিপরীতে কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে। ওকাশা ইবনুল মুহাসান আসাদী দাঁড়িয়ে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যেন তাদের মধ্যে থাকতে পারি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। আরেক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমিও যেন তাদের সাথে থাকতে পারি। তিনি বললেন- এক্ষেত্রে ওকাশা তোমার চেয়ে এগিয়ে।[৪]

আল্লাহর উপর ভরসার সাথে সাথে সাধ্যানুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ানোর চেয়ে এক গাছি রশি নিয়ে পাহাড়ে চলে যাওয়া উচিত। তারপর লাকড়ি সংগ্রহ করে বোঝা বয়ে এনে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা ভিক্ষাবৃত্তির চেয়ে অনেক ভালো। মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ালে কেউ তাকে দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে।[৫]

সহীহ আল বুখারীতে মিকদাম ইবনু মাদী কার্‌ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন,

مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ، وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِرابط المادة

‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাদ্য কেউ খেতে পারে না। দাউদ (আঃ) নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্য খেতেন।'

আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলতেন- দীন হচ্ছে তোমার আখিরাতের সম্বল আর সম্পদ হচ্ছে দুনিয়ার সম্বল। আর টাকা পয়সা ছাড়া (পার্থিব জীবনে) কোনো মানুষের মূল্যায়ন হয় না।

[১]. সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২২, ১৬০; সূরা আল মায়িদা, আয়াত : ১১; সূরা আত তাওবা, আয়াত : ৫১; সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ১১; সূরা আল মুজাদালা, আয়াত : ১০; সূরা আত তাগাবুন, আয়াত : ১৩।

[২]. সূরা আল মায়িদা, আয়াত : ২৩।

[৩]. সূরা আত্ তালাক, আয়াত : ৩।

[৪]. সহীহ আল বুখারী, কিতাবুর রিকাক, সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে' শিরোনাম। সহীহ মুসলিম, ‘একদল মুসলিম বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে ’শিরোনামে।

[৫]. সহীহ্ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম ছাড়াও এ হাদীসটি নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে।