বিবাহে প্রচলিত কুপ্রথা ও বিদআত যেমন, কন্যাপক্ষের নিকট হতে বরপক্ষের সেলামী, ঘুষ বা পণ গ্রহণ। কোর্টশিপ (ইউরোপীয় প্রথায় বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে হৃদয়ের আদান প্রদান)। বর, (মাহরাম অথবা কোন মহিলা) ছাড়া অন্য কারো বউ দেখা। বর কর্তৃক কনেকে পয়গামের অঙ্গুরী পরানো এবং ভবিষ্যতে তা তাদের দাম্পত্য-সুখের কারণ ভাবা ও খুলে ফেললে অমঙ্গলের আশঙ্কা করা, কোন নির্দিষ্ট দিনে বা মাসে বিয়ে শুভ বা অশুভ মনে করা। বিয়ের কথা (সম্বন্ধ) চলাকালীন কনে ডিম ভাঙ্গলে বিয়ে যাবে ভাবা। লগন ধরানো, গায়ে হলুদ। (অবশ্য এই সময়ে দেহের রঙ্গ উজ্জল করার উদ্দেশ্যে গায়ে হলুদ মাখলে ভিন্ন কথা।) হাতে সুতো রাখা। সাথে যাতি, কাজললতা বা কোন লোহা রাখা। কনের মাথায় শিবতেল ঢালা। টিকি মঙ্গলা। আলমতলায় লাতা ও সিন্দুর দেওয়া। বর-কনেকে আইবুড়ো বা থুবড়ো ভাত খাওয়ানো। (বিশেষ করে গম্য পুরুষের হাতে গম্যা নারীর এবং গম্য নারীর হাতে গম্য পুরুষের ভাত ও ক্ষীর খাওয়া অবৈধ।)

বরযাত্রী বা কনেযাত্রী দর-কষাকষি করে প্রয়োজনের অধিক গিয়ে অপরপক্ষের অসম্মতি সত্ত্বেও জবরদস্তি তার খেয়ে খরচ বৃদ্ধি করা। ছেলে বিয়ে করতে যাবার সময় গাড়িতে চড়লে পর্দা করে ছেলের পায়ে মায়ের তেল দিয়ে জিজ্ঞাসা করা, বাবা! কোথায় চললে?’ ছেলে বলে, ‘মা! তোমার জন্য দাসী আনতে চললাম। (এটি খুবই ধ্রুব সত্য কথা। ঘরে ঘরে বধু নির্যাতনই এর সাক্ষি।) ঐ বিদায়ের সময় মুখে দুধ ভাত দেওয়া। বর আগমন করে মহল্লার মসজিদে গিয়ে বিশিষ্ট কোন নামায আদায় করা। (অবশ্য বিয়ে মসজিদে পড়ানো হলে মসজিদে প্রবেশ করে বসার পুর্বে ২ রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সকলকেই পড়তে হয়। মসজিদে বেনামাযী, অপবিত্র ও ধুমপায়ী ইত্যাদি বর বা কন্যোত্রী রেখে মসজিদের মান নষ্ট করা কোনক্রমেই বৈধ নয়।)

পীর তলায় (!) বরের সালাম করা। আলমতলায় (যেখানে বর-কনেকে বসানো হয় সেখানে) ঝুকে মাটি বা বিছানা ছুঁয়ে সালাম করা। দর্শককে বা উপস্থিত মজলিসকে ঐরূপ সালাম করা। (আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম করাই সুন্নত। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মিলামিশা ও গান-বাজনার কথা তো বলাই বাহুল্য। যাতে মুসলিম রুচিশীল গৃহকর্তার লজ্জা ও আল্লাহ-ভীতি হওয়া উচিত।) পানভোজনে অপচয় করা।

নামমাত্র মোহর বাঁধা ও আদায় না করা বা করার নিয়ত না রাখা। বিজোড় টাকার দেনমোহর বাঁধা। দেনমোহরের কিছু টাকা বাকি রাখতে হয়, (আর পণের টাকা কড়ায় কড়ায় আদায় করে দিতে হয়। মনে করা। দেনমোহরের গয়না ও কাপড়াদি কাঁসের থালায় আনা। বিয়ে পড়ানোর সময় ঐ থালায় দেন মোহরের জেওরাদির সাথে পান-সুপারি রাখা। কে কেবলা মুখে বসানো। কনের নিকট ইন বা বিবাহের অনুমতি নেওয়ার অনুষ্ঠান এবং অলী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও অন্য কারো ইন। তলব। এই অনুষ্ঠানে কনেকে উল্টো করে সায়া-ব্লাউজ পরানো। বর্তমান প্রচলিত উকিল-সাক্ষী বানানোর প্রথা। (অথচ পাত্রীর মৌখিক অনুমতির উপর কোন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। এর জন্য তার তরফ থেকে (অনুমতি পেয়ে) অভিভাবকের অনুমতিই যথেষ্ট।

বরের স্বীকারোক্তির সময় কমপক্ষে দুই জন পুরুষ সাক্ষী জরুরী।) আকদের শেষে সকলের হাত তুলে জামাআতী দুআ। বরকে অর্ধ গ্লাস শরবত ও অর্ধ পান খেতে দেওয়া এবং অবশিষ্ট উচ্ছিষ্ট অর্ধ শরবত ও পান কনেকে খেতে দেওয়া। জামাই দেখতে নানা মাতামাতি ও ‘চিনি’ খেলা। বর-কনে একত্রিত করে সকলের সামনে গাঁটছড়া বাঁধা প্রভৃতি বিভিন্ন কীর্তি। বিয়ে বিদায় না হওয়া পর্যন্ত ঝাড়ু না দেওয়া। বধু ব্রণের সময় তেল-ফুল বা মিষ্টি ব্যবহার। নববধুকে প্রথম দিনেই শ্বশুর বাড়িতে খেতে নেই মনে করা। বাসর ঘরে একই প্লেটে স্বামী-স্ত্রী ভাত খেতে স্ত্রীর প্লেট ধরে থাকা। বধুর বিদায়কালে বড়দের পা ছুয়ে সালাম এবং মিষ্টান্ন বিতরণ। দুধ ইত্যাদি দিয়ে বাসর ঠান্ডা। বিবাহের পর হানিমুন’ ও বিবাহ বার্ষিকী পালন।

তালাকের বিদআত যেমন, স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় তালাক, যে পবিত্রতায় সহবাস করা হয়েছে সেই পবিত্রতায় তালাক। তালাকের উপর কসম খাওয়া। এক মজলিসে তিন তালাক।