প্রশ্ন: নিম্নোক্ত কাজগুলো যারা করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম কি?

তারা আযানের শব্দে বলে থাকে:

«أشهد أن عليا ولي الله، وحي على خيرالله وعلى عترة محمد وعلى خير العترة»

(আশহাদু আন্না ‘আলিয়্যান অলিয়্যুল্লাহ, হাই আলা খাইরিল্লাহ, অ-আলা ইতরাতি মুহাম্মদ, অ-আলা খাইরিল ইতরাহ)।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী হচ্ছে আল্লাহর অলী, তোমরা আল্লাহর ভালোর দিকে এসো, মুহাম্মদের পরিবারের দিকে এবং সবচেয়ে ভালো পড়শীর দিকে এসো।

আর যদি তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তবে তার আত্মীয় স্বজন একটি বকরী জবাই করে থাকে যার নাম দেয় আকীকা এবং কোনো হাড্ডি ভাঙ্গবে না, অতঃপর হাড্ডি ও গোবরগুলো কবর দিয়ে দেয়। তারা ধারণা করে যে, এটিই ভালো কাজ, তা করা অবশ্যই জরুরী। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সুন্নাতে মুহাম্মাদীয়ার উপর আছে এবং তাদের সাথে বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে তার ভূমিকা কি? তাদেরকে ভালোবাসা, তাদেরকে সম্মান করা, তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা এবং তাদের সাথে বিবাহ সম্পর্ক গড়া কি জায়েয? প্রকাশ থাকে যে, তারা তাদের এ আকীদা প্রকাশ্যে বাস্তবায়ন করে এবং তারা বলে তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল, তারা হক্বের উপর আছে আর আমরা বাতিলের উপর আছি।

উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা তার নবীর জবান দিয়ে আযান এবং ইকামাতের শব্দগুলো বলে দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ ইবন আব্দু রব্বিহ আল আনসারী স্বপ্নে আযানের শব্দগুলো দেখলে রাসূলের নিকট গিয়ে জানালেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: (এ স্বপ্নটি সত্য)।[1] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, বেলালকে যেন তা জানিয়ে দেন এর দ্বারা আযান দেওয়ার জন্য, কারণ তার আওয়াজ উঁচু। অতঃপর বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ শব্দ দ্বারাই আযান দিতেন। তার আযানে প্রশ্নে উল্লেখিত শব্দগুলো ছিল না।

এমনিভাবে আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মাঝে মধ্যে রাসূলের সামনে আযান দিতেন, তার আযানেও এ ধরনের শব্দ ছিল না। রাসূলের সামনে বেলালের আযানের হাদীসগুলো বুখারী ও মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসে এসেছে, তদ্রূপ আবু মাহযুরার আযান যা তিনি মক্কায় দিতেন, তাতেও এ শব্দগুলো ছিল না। তার আযানের শব্দগুলোও সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসে এসেছে। এতে বুঝা যায় যে, আযানে এ শব্দগুলো বলা বিদ‘আত, অবশ্যই তা ত্যাগ করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

অন্য বর্ণনায় :

“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”

এবং জুম‘আর খুৎবায় তিনি বলেছিলেন :

“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।” [দেখুন: সহীহ মুসলিম] এ অর্থে বহু হাদীস ও বাণী রয়েছে।

অথচ সকল খলীফা তাদের মধ্যে আলী এবং সকল সাহাবী আযানের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পথে চলেছেন তারাও সে পথেই চলেছেন, এ ধরনের কোনো শব্দ তারা ব্যবহার করেননি।

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কূফায় প্রায় পাঁচ বছর খলিফা হিসাবে ছিলেন তখন তার সম্মুখে বেলালের আযান দেওয়া হতো, প্রশ্নে উল্লেখিত শব্দগুলো যদি আযানে থাকত তবে আযানের মধ্যে বলতে তিনি কোনো ভয় করতেন না, কেননা তিনি সকল সাহাবী থেকে রাসূলের সুন্নাত ও জীবন সম্পর্কে অধিক জানতেন।

আর কিছু কিছু লোক আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে যা বলে যে, তিনি আযানের মধ্যে (হাইয়া আলা খাইরিল্লাহ) বলতেন, এর সত্যতার কোনো ভিত্তি নেই।

ইবনে উমর এবং আলী ইবন হুসাইন যয়নুল আবেদীন তার পিতা থেকে, তাদের নিকট যে বর্ণনা এসেছে যে, তারা আযানের মধ্যে (হাই ‘আলা খাইরিল্লাহ) বলতেন, তাদের থেকে এর সত্যতা সাব্যস্তের ব্যাপারে সন্দেহ আছে, যদিও কোনো কোনো আলেম তা সহীহ বলেছেন, কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে তাদের জ্ঞান সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তাতে এ কথার সত্যতা ঠিক করা যায় না। কারণ বেলাল ও আবু মাহযুরার আযান তাদের অজানা নয়। আর ইবনে উমর তা শুনেছেন এবং আযানের সময় উপস্থিত ছিলেন। আর আলী ইবন হুসাইন অন্যান্য লোকদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী ছিলেন, কাজেই জেনে শুনে তারা আযানের ক্ষেত্রে রাসূলের বিরোধিতা করবেন এ ধারণা করা কারো পক্ষে উচিৎ নয়।

যদিও তা মেনে নেওয়া যায় যে, তাদের থেকে যা এসেছে তা সহীহ, আমরা বলব এটি তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ অর্থাৎ মাউকুফ, আর তাদের বা অন্য কারো কথা দ্বারা সহীহ হাদীসের মোকাবিলা করা জায়েয নেই, কেননা হাদীস এবং কুরআনই মানুষের মধ্যে ফায়সালাকারী, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]

“হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন কর, নির্দেশ পালন কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতাসীন তাদের। অতঃপর তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর; যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিকে দিয়ে উত্তম। [সূরা নিসা/৫৯]

আযানের ব্যাপারে তাদের থেকে বর্ণিত এ শব্দ (হাইয়া ‘আলা খাইরিল আমাল) রাসূল থেকে সাব্যস্ত সহীহ হাদীসে আযানের শব্দে খুঁজে দেখলাম তাতে এ শব্দগুলো নেই।

আর আলী ইবন হুসাইনের নিকট থেকে যে বর্ণনা এসেছে যে, রাসূলের সামনে এ শব্দে আযান দেওয়া হতো, এর উত্তর হচ্ছে যে, তিনি হয়তো প্রথম অবস্থায় যে আযান দেওয়া হতো তা উদ্দেশ্য করেছেন, যদি তিনি তা-ই উদ্দেশ্য করেন, তবে আমি বলব, রাসূলের জীবনে এবং তাঁর পরবর্তীতে বেলাল, ইবনে উম্মে মাকতুম এবং আবু মাহযুরার আযানে যে শব্দে স্থায়ীভাবে আযান দেওয়া হতো তা দ্বারা পূর্বের শব্দ রহিত হয়ে গেছে। আর তাদের আযানের মধ্যে প্রশ্নে উল্লেখিত শব্দগুলো নেই।

তারপর আরও বলা যায়, যদি ধরে নেওয়া হয় যে উল্লেখিত শব্দগুলো প্রাথমিক অবস্থায় রাসূলের সম্মুখে যে আযান দেওয়া হতো তার মধ্যে ছিল, তবে তাও এখন মেনে নেওয়া যায় না, কারণ যে শব্দে প্রথম থেকেই আযান দেওয়া হতো সে শব্দগুলো সহীহ হাদীসে রয়েছে, এ হাদীসগুলোতে উল্লেখিত শব্দগুলো নেই, বিধায় বুঝা গেল যে, তা বাতিল এবং বিদ‘আত।

তারপর আরও বলা যায়, আলী ইবন হুসাইন একজন তাবে‘ঈ, তিনি যদিও মারফূ হিসাবে অর্থাৎ রাসূল থেকে বর্ণনা করেন তাহলেও বলব এটি মুরসাল, আর মুরসালে তাবে‘ঈ অধিকাংশ আলেমের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন ইমাম আবু উমর ইবন আব্দুল বা’র কিতাবুত তামহীদে তুলে ধরেছেন। মুরসাল হাদীসের পরিপন্থী কোনো বিষয় যদি সহীহ হাদীসে না পাওয়া যায় তাহলেও এ মুরসাল গ্রহণযোগ্য নয়, তাহলে যেখানে এ মুরসাল হাদীসে সহীহ হাদীসের বিরোধী কথা পাওয়া যায় সেখানে কিভাবে এ মুরসাল গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

আর উল্লেখিত দলটি যা করে থাকে যে, যদি তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তবে তার আত্মীয় স্বজন একটি বকরী জবাই করে থাকে যার নাম দেয় আকীকা এবং কোনো হাড্ডি ভাঙ্গবে না, অতঃপর হাড্ডি ও গোবরগুলো কবর দিয়ে দেয়। তারা ধারণা করে যে, এটিই ভালো কাজ, তা করা অবশ্যই জরুরী।

উত্তর হলো: এটি হলো বিদ‘আত, ইসলামী শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই, কাজেই সকল প্রকার বিদ‘আত ও অপরাধের ন্যায় তা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তাওবা করা উচিৎ; কেননা আল্লাহর নিকট তাওবা করায় পূর্বের সকল অপরাধ ক্ষমা হয়ে যায়। সুতরাং সকল প্রকার বিদ‘আত এবং পাপ পঙ্কিলতা থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١]

“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। [সূরা নূর, ৩১]

তিনি আরও বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ﴾ [التحريم: ٨]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা নাসুহ্ (খাটি তাওবা) কর। [সূরা তাহরীম/৮]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল সহীহ হাদীস এসেছে, তাতে শর‘ঈ আকীকা হলো: কোনো সন্তান জন্মগ্রহণের সপ্তম দিনে যা জবাই করা হয়, ছেলের পক্ষে দু’টি খাসী আর মেয়ের পক্ষে একটি খাসী জবাই করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইনের পক্ষে আকীকা করেছেন। আকীকাদাতা ইচ্ছা করলে এর মাংস ফকীর মিসকীন, পাড়া প্রতিবেশী এবং বন্ধুবান্ধবের মাঝে বন্টন করে দিতে পারে অথবা পাক করে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে। আর এটিই শর‘ঈ আকীকা, তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তবে কেউ তা না করলে তার পাপ হবে না।

আর প্রশ্নকারীর প্রশ্ন, যে ব্যক্তি সুন্নাতে মুহাম্মাদিয়ার উপর আছে এবং তাদের (বিদ‘আতীদের) সাথে বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে তার ভূমিকা কি? তাদেরকে ভালোবাসা, তাদেরকে সম্মান করা, তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা এবং তাদের সাথে বিবাহ সম্পর্ক গড়া কি জায়েয? প্রকাশ থাকে যে, তারা তাদের এ আকীদা প্রকাশ্যে বাস্তবায়ন করে এবং তারা বলে তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল, তারা হক্বের উপর আছে আর আমরা বাতিলের উপর আছি।

উত্তর: প্রশ্নে বর্ণিত আকীদাই যদি তাদের আকীদা হয়, তাওহীদ ও ইখলাসের ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের অনুরূপ হয় এবং আল্লাহর সাথে, আহলে বাইত ও অন্যদের সাথে শির্ক না করে তবে তাদের সাথে বিবাহ দেওয়া এবং বিবাহ করানো কোনো অসুবিধা নেই। এমনিভাবে তাদের জবাইকৃত পশু খাওয়া, তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এবং তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী তাদেরকে ভালোবাসা ও তাদের সাথে যে পরিমাণ বাতিল রয়েছে সে পরিমাণ বিদ্বেষ রাখা জায়েয। কেননা তারা মুসলিম, কিছু কিছু বিদ‘আত ও অপরাধে জড়িয়ে গেছে যা তাদেরকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়নি। এমতাবস্থায় তাদেরকে নসিহত করে সুন্নাহ ও হক্বের দিকে দাওয়াত দেওয়া এবং বিদ‘আত ও অন্যায় থেকে তাদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব। অতঃপর তারা যদি তা গ্রহণ করে ঠিক হয়ে যায় তাহলে এটিই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। আর যদি তারা প্রশ্নে উল্লেখিত বিদ‘আত করেই যায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে বয়কট করতে হবে এবং তাদের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া যাবেনা যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নিকট তাওবা করে বিদ‘আত ও অন্যায়গুলো ত্যাগ করবে। যেমন কোনো শর‘ঈ কারণ ব্যতীত তাবুকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘ব ইবনে মালেক আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং তার সাথীদেরকে বয়কট করেছিলেন। কিন্তু যদি তাদের কোনো প্রতিবেশী অথবা নিকটাত্মীয় তাদেরকে বয়কট না করে তাদের সাথে উঠাবসার মাধ্যমে নসিহত করায় অধিক উপকার মনে করে এবং তা গ্রহণ করার সম্ভাবনা থাকে; তবে তাদেরকে বয়কট না করায় কোনো অসুবিধা নেই। কারণ তাদেরকে বয়কটের উদ্দেশ্য হলো হক্বের দিক নির্দেশনা দেওয়া এবং তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া যে, তারা যে অপরাধ করছে তা সন্তোষজনক নয়, যেন তারা এ থেকে ফিরে আসে। কিন্তু তাদেরকে বয়কটের কারণে যদি ইসলামি কল্যাণের ক্ষতি হয় এবং যারা হক্বের উপর আছে তাদেরকে পরিহার করে বাতিলকে অধিক গ্রহণ করে তাহলে তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াই ভালো। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেড়ে দিয়েছিলেন মুনাফেকদের সরদার আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালূলকে, কেননা তাকে ছেড়ে দেওয়া মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর ছিল।

আর যদি এ ফেরকাটি আহলে বাইত যেমন ‘আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইন এবং অন্যান্য আহলে বাইতগণের নিকট দো‘আ বা কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের ইবাদত করা, অথবা এ বিশ্বাস করা যে, তারা গায়েবী ইত্যাদি জানেন, যে বিশ্বাসের মাধ্যমে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে তাদের সাথে বিবাহের আদান প্রদান, তাদেরকে ভালোবাসা এবং তাদের জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েয নেই, বরং তাদেরকে ঘৃণা করা এবং পরিহার করা ওয়াজিব যতক্ষণ না এক আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

﴿ قَدۡ كَانَتۡ لَكُمۡ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ فِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ إِذۡ قَالُواْ لِقَوۡمِهِمۡ إِنَّا بُرَءَٰٓؤُاْ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ وَبَدَا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَآءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَحۡدَهُۥٓ إِلَّا قَوۡلَ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسۡتَغۡفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمۡلِكُ لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۖ رَّبَّنَا عَلَيۡكَ تَوَكَّلۡنَا وَإِلَيۡكَ أَنَبۡنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٤ ﴾ [الممتحنة: ٤]

“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চির কালের জন্য সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ, যদি না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে ব্যতিক্রম তার পিতার প্রতি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর উক্তি: আমি নিশ্চয়ই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো এবং তোমার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট কোনো অধিকার রাখি না। (ইবরাহীম ও তার অনুসারীগণ বলেছিল:) হে আমাদের রব! আমরা তো আপনারই উপর নির্ভর করেছি, আপনারই অভিমুখী হয়েছি এবং আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন।” [সূরা মুমতাহিনা /৪]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧ ﴾ [المؤمنون: ١١٧]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, যে বিষয়ে তার নিকট কোনো প্রমাণ নেই; তার হিসাব তার রবের নিকট আছে, নিশ্চয় কাফিরগণ সফলকাম হবে না।” [সূরা মু’মিনূন /১১৭]

তিনি আরও বলেন:

﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ إِن تَدۡعُوهُمۡ لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣، ١٤]

“তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক, সার্বভৌমত্ব তারই। আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা তো খেজুরের আঁটির আবরনেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে আহ্বান করলে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দিবে না। তোমরা তাদেরকে যে শরীক করেছ তা তারা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞের ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করবে না।” [সূরা ফাতির/১৩-১৪]

তিনি আরও বলেন:

﴿قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ ٦٥ ﴾ [النمل: ٦٥]

“বলুন: আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না কখন তারা পুনরুত্থিত হবে।” [সূরা নামল/৬৫]

তিনি আরও বলেন:

﴿ ۞وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ ﴾ [الانعام: ٥٩]

“আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত আর কেউ তা জানে না।” [সূরা আল-আন‘আম/৫৯]

আরও বলেন:

﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨ ﴾ [الاعراف: ١٨٨]

“আপনি বলুন: আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি আমার নিজের ভালো মন্দ, মঙ্গল- অমঙ্গল বিষয়ে কোনো অধিকার রাখি না, আমি যদি অদৃশ্য বিষয়ের তত্ত্ব এবং খবর রাখতাম তাহলে আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করতে পারতাম আর কোনো অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। আমি শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্যে একজন ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতা।” [সূরা আ’রাফ/১৮৮

এ অর্থে আরও বহু আয়াত রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: গায়েবের চাবি হলো পাঁচটি, আল্লাহ ব্যতীত এগুলো কেউ জানে না, অতঃপর তিনি পাঠ করলেন:

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]

“কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে যা রয়েছে তিনি তা জানেন, কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোনো স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত।” [সূরা লোকমান/৩৪]

তাঁর নিকট থেকে সহীহ সনদে আরও এসেছে যে, তিনি বলেছেন,

«من مات وهو يدعو لله ندا دخل النار»

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করার পর তওবা না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”[2]

বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেন, তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্ক করা।”[3]

সহীহ মুসলিমে আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবাই করবে তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ হবে।”[4]

এক আল্লাহর জন্য ইবাদতে ইখলাস ওয়াজিব হওয়া, তার সাথে শির্ক করা হারাম হওয়া এবং মহান আল্লাহ একমাত্র তিনিই যে গায়েবের খবর জানেন, এর উপর প্রমাণিত বহু হাদীস রয়েছে।

আমি পূর্বে যা উল্লেখ করেছি হক্ব তালাশকারীর জন্য ইনশাআল্লাহ তাই যথেষ্ট, আর আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা, তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দেন।

আর তারা যেটা বলছে যে, তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল, তারা হক্বের উপর রয়েছে এবং অন্যরা বাতিলের উপর আছে। এর উত্তরে বলা যায় যে, কেউ কোনো কিছু দাবী করলেই তার দাবী মেনে নেওয়া যায়না, বরং তার দাবীর সত্যতার প্রমাণাদিরও প্রয়োজন হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমাদের প্রমাণাদি পেশ কর।” [সূরা নামল/৬৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মানুষের দাবী অনুযায়ী যদি তাদেরকে দেওয়া হতো তাহলে কিছু লোক অবশ্যই মানুষের জান ও মাল দাবী করে নিয়ে যেত।” হাদীসটি ইবনে আব্বাস থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত।[5]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বেশ কয়েকটি হাদীস এসেছে যে, তিনি বলেছেন:

«افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة كلها في النار إلا واحدة. قيل من هي يا رسول الله؟ قال:من كان على مثل ما أن عليه وأصحابي»

“ইয়াহূদীগণ একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, খৃষ্টানগণ বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে এবং আমার এ উম্মত তেয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। সবগুলো দলই জাহান্নামে যাবে কিন্তু একটি দল (বাদ দিয়ে) বলা হলো: হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেন: যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণের পথে আছে তারা।”

এ হাদীস এবং এ অর্থে আরও যে সকল হাদীস রয়েছে যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

«كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى»

“আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে (সে নয়)। বলা হলো: হে আল্লাহর রাসূল কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করবে সেই অস্বীকার করল।”[6]

এ হাদীসগুলোই প্রমাণ করে যে, এ উম্মতের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হচ্ছে: যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাগণের আমল, কথা এবং বিশ্বাসের উপর দৃঢ় ও অটল আছেন তারা।

কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত প্রমাণ করে যে, মুক্তিপ্রাপ্ত দল হচ্ছে, যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে এবং সাহাবীগণের পথে চলবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]

“হে নবী বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসার দাবী কর, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” [সূরা আলে ইমরান/৩১]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]

“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]

এ দু’টি আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহকে ভালোবাসার প্রমাণ হলো: আমল, কথা এবং আকীদার ক্ষেত্রে তার রাসূলের অনুসরণ করা এবং তাঁর সাহাবাদের মধ্যে যারা মুহাজের, আনসার এবং তাদের অনুসারীদেরকে যারা আমল, কথা এবং আকীদার ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছে তারা সকলেই জান্নাতবাসী এবং তারাই সফলকাম, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, তিনি তাদেরকে চির দিনের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

আশা করি তা সে ব্যক্তির জন্য স্পষ্ট হয়ে গেছে যার সামান্যতম দ্বীনের জ্ঞান রয়েছে। আল্লাহর নিকট আকুল আবেন: তিনি যেন আমাদেরকে এবং সকল মুসলিম ভাইকে সঠিক রাস্তা দেখান, যে রাস্তা নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং নেক্কারদেরকে দেখিয়েছেন। তিনি যেন আমাদেরকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণের অনুসারী বানিয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি তা করতে সক্ষম। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার বান্দা, রাসূল, বন্ধু এবং ওহীর সংরক্ষক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সকল সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অনুসারীদের উপর।

>
[1] দেখুন: মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৬০৪৩, আবু দাউদ ৪৯৯, তিরমিযী ১৮৯ এবং ইবনে মাজাহ ৭০৬।

[2] বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৪৪৯৭।

[3] বুখারী শরীফ হাদীস নং ৪৪৭৭, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৮৬।

[4] মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৮।

[5] বুখারী শরীফ; হাদীস নং ৪৫৫২, মুসলিম শরীফ; হাদীস নং ১৭১১।

[6] বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৭২৮০।