কেউ ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম জামা‘আতে সালাত আদায় করতে না পারলে তার জন্য উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করা বৈধ:

একই মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত করার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যা নিম্নরূপ:

১. একই মসজিদে নিয়মিত দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। তথা প্রতি বেলায় কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। এমনটি করা বিদ‘আত।

২. কখনো কখনো কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। যা নিয়মিত নয়। তথা নিয়মিত ইমাম একটি জামা‘আত সম্পন্ন করে গেছেন। এ দিকে দু’ বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো ওযরবশতঃ উক্ত জামা‘আতে হাজির হতে পারেনি। তখন তারা কি উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করতে পারবে? না কি নয়। তা নিয়েই আমাদের উক্ত আলোচনা।

কেউ কেউ বলেন: উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত আর করা যাবে না। বরং তারা একাকী সালাত আদায় করবে। আর কেউ কেউ বলেন: তাদের জন্য দ্বিতীয় জামা‘আত করা জায়িয ও মুস্তাহাব। এটিই সঠিক মত। যা নিম্নে প্রমাণ সহ বর্ণিত হবে। ইনশাআল্লাহ।

৩. কোনো রাস্তা-ঘাটের মসজিদ। যেখানে কোনো নিয়মিত ইমাম নেই। সেখানে প্রতি বেলায় দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। আবার দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। এ জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত একেবারেই বৈধ। তাতে কোনো দ্বিমত নেই।

নিম্নে একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত বৈধ হওয়ার প্রমাণ উল্লিখিত হয়েছে। যা উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় পদ্ধতি।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করলেন। ইতিমধ্যে জনৈক সাহাবী মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি আমাদের সাথে জামা‘আতে উপস্থিত হলে না কেন? তখন তিনি কোনো একটি ওযর দেখিয়ে একাকী সালাত আদায় করতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ؟».

“এমন কি কেউ আছে যে এর ওপর সাদাকা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে”?[1]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«أَيُّكُمْ يَتَّجِرُ عَلَى هَذَا؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَصَلَّى مَعَهُ».

“এমন কি কেউ আছে যে এর সাথে ব্যবসা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে? তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে সালাত পড়লো”।[2]

ইমাম শাওকানী রহ. বলেন: যিনি তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন তিনি ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু।[3]

উক্ত হাদীস থেকে দু’টি জিনিস সুস্পষ্ট। যার একটি হচ্ছে, কাউকে কখনো একাকীভাবে ওয়াক্তিয়া তথা তখনকার ফরয সালাত আদায় করতে দেখলে উক্ত ফরয সালাত কিংবা নফল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তার সাথে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। যদিও সে ইতোপূর্বে নিয়মিত জামা‘আতের সাথে উক্ত ফরয সালাত আদায় করে থাকে। তেমনিভাবে হাদীসটি একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত জায়েয হওয়া প্রমাণ করে। জামা‘আতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোও দূর থেকে এর সমর্থন করে। কেউ যদি বলে, জামা‘আতের ফযীলতগুলো শুধু প্রথম জামা‘আতের সাথেই সীমাবদ্ধ তাহলে তাকে এ সংক্রান্ত অন্তত একটি বিশেষ প্রমাণ হলেও উল্লেখ করতে হবে।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা কিছু সংখ্যক লোককে সাথে নিয়ে একবার জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন মসজিদে আযান ও ইক্বামত দিয়ে দ্বিতীয় জামা‘আত আদায় করেন।[4]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আলকামা, মাসরূক, আসওয়াদ, হাসান, ক্বাতাদাহ ও আত্বা রহ. তার এক বর্ণনায় উক্ত মত পোষণ করেন।

এদিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا تُصَلُّوا صَلَاةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ».

“একই দিনে একই সালাত দু’ বার পড়া যাবে না”।[5]তা থেকে উদ্দেশ্য একই দিনে একই ফরয সালাত ফরযের নিয়্যাতে দু’ বার পড়া। একই ফরয সালাত দ্বিতীয়বার নফলের নিয়্যাতে পড়া কখনো এর বিরোধী নয়।

>
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৪; আহমদ, হাদীস নং ১০৯৮০, ১১৩৮০, ১১৮০৮; ইবন হিববান, হাদীস নং ২৩৯৭-২৩৯৯; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ১০৫৭।

[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২২০।

[3] নাইলুল-আওত্বার ২/৩৮০।

[4] সহীহ বুখারী/জামা‘আতে সালাত পড়ার ফযীলত অধ্যায়।

[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৬০।