কেউ কোনো সালাতের একটি রাকাত জামা‘আতের সাথে পেলেই সে পুরো জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে রুকু’ পেলেই কোনো রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। নতুবা নয়:

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنْ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».

“যে ব্যক্তি কোনো সালাতের একটি রাকাত (ইমামের সাথে) পেলো সে যেন পুরো সালাতই ইমামের সাথে পেলো”।[1]

আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকু অবস্থায় পেলে তিনি তখন সালাতের সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনেই রুকু’ করে ফেললেন। ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ».

“আল্লাহ তা‘আলা তোমার সালাতের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এ কাজ তুমি আর কখনো করবে না। তথা সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনে কখনো দ্রুত রুকু’ করবে না”।[2]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».

“যখন তোমরা আমাদেরকে সালাতের সেজদাহরত অবস্থায় পাও তখন তোমরাও সাজদাহ করো। তবে উহাকে রাকাত হিসেবে ধরবে না। আর যে ব্যক্তি রুকু’ তথা রাকাত পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”।[3]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا قَبْلَ أَنْ يُقِيمَ الإِمَامُ صُلْبَهُ».

“যে ব্যক্তি ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে নিজ পিঠ উঠানোর আগেই তাঁর সাথে রুকু’ পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”।[4]

তবে কোনো ব্যক্তি ওযরবশতঃ সালাতে হাজির হতে দেরি করে ফেললে এবং সে মসজিদে এসে সালাতের রুকু না পেয়ে তার কোনো একটি অংশ পেলে অথচ সে সর্বদা সালাতের পাবন্দ তবুও সে জামা‘আত পেলো না বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু তাকে নিয়্যাত ভালো ও ওযর থাকার দরুন জামা‘আতের সাওয়াব দেওয়া হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللهُ جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا».

“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”।[5]

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا».

“যখন কোনো বান্দা রোগাক্রান্ত অথবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার আমলনামায় মুক্বীম (নিজ এলাকা অথবা তেমন কোনো এলাকায় ইক্বামতের নিয়্যাতে অবস্থানরত অবস্থা) ও সুস্থ অবস্থার আমলের ন্যায় আমল লেখা হবে”।[6]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তিনি বললেন:

«إِنَّ أَقْوَامًا بِالـْمَدِينَةِ خَلْفَنَا مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».

“কিছু সংখ্যক লোক এমন রয়েছে যাদেরকে আমরা মদিনায় রেখে এসেছি অথচ আমরা যে কোনো গিরি পথ ও উপত্যকায় গিয়েছিলাম তারা সেখানে আমাদের সাথেই ছিলো। তাদেরকে মদিনায় একমাত্র ওযরই আটকে রেখেছে”।[7]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«إِنَّ بِالْـمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلَا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ؟ قَالَ: وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».

“মদিনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে; তোমরা যে পথ বা উপত্যকাই অতিক্রম করেছো তারা তোমাদের সাথেই ছিলো। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! তারা তো বস্তুতঃ মদিনায় রয়েছে অথচ তারা আমাদের সাথে থাকলো কি ভাবে? তিনি বললেন: তারা সত্যিই মদিনায়। একমাত্র ওযরই তাদেরকে সেখানে আটকে রেখেছে। তবে তারা মানসিকভাবে তথা আগ্রহ ও উৎসাহের দিক দিয়ে তোমাদের সাথেই রয়েছে”।[8]

উক্ত হাদীসগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, কেউ কোনো শর’য়ী ওযরের কারণে কোনো সৎকর্ম করতে না পারলে তাকে উক্ত কর্ম সম্পাদনের সমপরিমাণই সাওয়াব দেওয়া হয়।

>
[1] বুখারী, হাদীস নং ৫৮০ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭

[2] বুখারী, হাদীস নং ৭৮৩

[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৯৩।

[4] বায়হাক্বী, হাদীস নং ২৬৭৮; দারাক্বুত্ব্নী, হাদীস নং ১; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫৯৫।

[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৪।

[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৬।

[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩৮, ২৮৩৯।

[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২৩।