যে ব্যক্তি শরঈ কোনো অজুহাত ছাড়াই ঘরে সালাত পড়লো সে মুনাফিক। আর শরী‘আতের দৃষ্টিতে সাধারণত কোনো সুন্নাত বা মুস্তাহাব কাজ ছাড়া কিংবা কোনো মাকরূহ কাজ করার দরুন কাউকে মুনাফিক বলা হয় না। বরং তা বলা হয় কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়লে অথবা কোনো হারাম কাজ করলে। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلاَةُ إِلاَّ مُنَافِقٌ عُلِمَ نِفَاقُهُ أَوْ مَرِيْضٌ، إِنْ كَاْنَ الْـمَرِيْضُ لَيَمْشِىْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلاَةَ، وَقَاْلَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْـهُدَى وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلاَةُ فِي الْـمَسْجِدِ الَّذِيْ يُؤَذَّنُ فِيْهِ».

“আমাদের মধ্যে নিশ্চিত মুনাফিক ও রুগ্ন ব্যক্তি ছাড়া কেউই জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনকি আমরা দেখতাম রুগ্ন ব্যক্তি ও দু’ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে জামা‘আতে উপস্থিত হতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর জামা‘আতে সালাত আদায়ের নির্দেশ সঠিক পথের দিশা বৈ কি”?

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন:

«حُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُوْمُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَاْنَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَي بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ».

“যার ইচ্ছে হয় পরকালে আল্লাহর সাথে মুসলিম রূপে সাক্ষাৎ দিতে সে যেন জামা‘আতে সালাত আদায় করতে সযত্ন হয়। আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর জামা‘আতে সালাত পড়া তারই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা যদি ঘরে সালাত পড়ুয়া অলসের ন্যায় ঘরে সালাত পড়ো তা হলে নিশ্চিতভাবে তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রদর্শিত সঠিক পথ থেকে সরে পড়লে। আর তখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে। যে কেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে গুনাহ মুছে দিবেন। তিনি বলেন: আমাদের মধ্যে নিশ্চিত মুনাফিক ছাড়া কেউ জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনকি কেউ কেউ দু’জনের কাঁধে ভর দিয়েও জামা‘আতে উপস্থিত হতো”।[11]

উক্ত হাদীসে কেউ পরকালে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুসলিম রূপে সাক্ষাৎ দিতে হলে তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সযত্ন হতে বলা হয়েছে এবং তাতে ঘরে সালাত আদায়কারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও তাঁর আনীত শরী‘আত বিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উক্ত আদর্শ বলতে এমন আদর্শকে বুঝানো হয় নি যা ইচ্ছে করলে ছাড়াও যায়; বরং এমন আদর্শকে বুঝানো হয়েছে যা ছাড়লে পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক রূপে আখ্যায়িত হতে হয়। অতএব বুঝা গেলো জামা‘আতে সালাত পড়া প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব ও ফরয।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:

«إِنَّ لِلْمُنَافِقِيْنَ عَلاَمَاتٍ يُعْرَفُوْنَ بِهَا، تَحِيَّتُهُمْ لَعْنَةٌ، وَطَعَامُهُمْ نُهْبَةٌ، وَغَنِيْمَتُهُمْ غُلُوْلٌ، وَلاَ يَقْرَبُوْنَ الْـمَسَاجِدَ إِلاَّ هَجْراً، وَلاَ يَأْتُوْنَ الصَّلاَةَ إِلاَّ دَبْــراً مُسْتَكْبِرِيْنَ، لاَ يَأْلَفُوْنَ وَلاَ يُؤْلَفُوْنَ، خُشُبٌ بِاللَّيْلِ، صُخُبٌ بِالنَّهَارِ ».

“মুনাফিকদের এমন কিছু আলামত রয়েছে যা দিয়ে তাদেরকে সহজেই চেনা যায়। সেগুলো হলো: তাদের সম্ভাষণই হচ্ছে অভিসম্পাত। তাদের খাবারই হচ্ছে কোথাও থেকে লুট করা বস্তু। তাদের যুদ্ধলব্ধ সম্পদই হচ্ছে তা বন্টনের পূবেই চুরি করা বস্তু। তারা মসজিদের ধারেকাছেও যায় না। সালাতে কখনো আসলেও তারা অহঙ্কারী ভাব নিয়ে দেরিতে আসে। তারা কারোর সাথে গভীরভাবে মিশতে চায় না এবং তাদের সাথেও গভীরভাবে মিশা যায় না। রাতে তারা কাষ্ঠখন্ড স্বরূপ নিঃসাড় নিঃশব্দ। দিনে সরব”।[12]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا إِذَا فَقَدْنَا الرَّجُلَ فِيْ صَلاَةِ الْعِشَاءِ وَصَلاَةِ الْفَجْرِ أَسَأْنَا بِهِ الظَّنَّ».

“আমরা যখন কাউকে ইশা ও ফজরের সালাতে মসজিদে না দেখতাম তখন তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করতাম তথা তাকে মুনাফিক ভাবতাম”।[13]

এমনকি লাগাতার জামা‘আতে সালাত না পড়া ব্যক্তির অন্তরকে সীল-গালা করা তথা তার অন্তরের ওপর মোহর মেরে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আর শরী‘আতে সাধারণত কোনো ফরয-ওয়াজিব ছাড়া ব্যতীত কাউকে এ ধরণের হুমকি দেওয়া হয় না।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বারের উপর বসে বলেন:

«لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجَمَاعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوْبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُوْنَنَّ مِنَ الْغَافِلِيْنَ».

“কয়েকটি সম্প্রদায় যেন জামা‘আতে সালাত পরিত্যাগ করা থেকে অবশ্যই ফিরে আসে তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের হৃদয়ের ওপর মোহর মেরে দিবেন। অতঃপর তারা নিশ্চিত গাফিল তথা ধর্ম বিমুখ হয়েই জীবন যাপন করতে বাধ্য হবে”।[14]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সাহাবাগণের খবরদারি করতেন। আর কোনো ব্যাপারে কারোর খবরদারি করা সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা অবশ্য করণীয় ওয়াজিব হওয়াকেই বুঝায়।

উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তখন তিনি বললেন:

«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْـمُنَافِقِينَ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ وَإِنَّ صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى».

“এ দু’টি সালাত তথা ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা সত্যিই মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। তোমরা যদি জানতে তা জামা‘আতের সাথে আদায়ে কী পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তাহলে তোমরা তা আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতে। সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাগণের সারির ন্যায়। তোমরা যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কি ফযীলত রয়েছে তা হলে তোমরা খুব দ্রুত সেখানে অবস্থান করতে। একা সালাত আদায়ের চাইতে দু’জন মিলে জামা‘আতে পড়া অনেক ভালো। আবার একজনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের চাইতে দু’জনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করা আরো অনেক ভালো। জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা যতোই বেশি হবে ততোই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।[15]

জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের ঐকমত্য রয়েছে যা নিম্নের বাণীগুলো থেকে বুঝা যায়।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাণী যা উপরে উল্লিখিত হয়েছে।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».

“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।[16]

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ بِغَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».

“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।[17]

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لاَ صَلاَةَ لِجَارِ الْـمَسْجِدِ إِلاَّ فِـيْ الْـمَسْجِدِ، قِيْلَ : وَمَنْ جَارُ الـْمَسْجِدِ؟ قَالَ : مَنْ سَمِعَ الـْمُنَادِيَ».

“মসজিদের প্রতিবেশীর সালাত মসজিদ ছাড়া আর কোথাও হবে না। তাঁকে বলা হলো: মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনে”।

তিনি আরো বলেন:

«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ مِنْ جِيْرَانِ الْـمَسْجِدِ فَلَمْ يُجِبْ وَهُوَ صَحِيْحٌ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».

“মসজিদের কোনো প্রতিবেশী আযান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় না করলে অথচ সে সুস্থ-সবল এবং তার কোনো ওযর নেই তা হলে তার সালাতই হবে না”।

তিনি আরো বলেন:

«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ لَمْ تُجَاوِزْ صَلاَتُهُ رَأْسَهُ إِلاَّ مِنْ عُذْرٍ».

“যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে আসেনি তার সালাতটুকু তার নিজ মাথাই অতিক্রম করবে না। আকাশ পর্যন্ত পৌঁছা তো অনেক দূরের কথা। তবে এ ব্যাপারে তার কোনো ওযর থাকলে তা ভিন্ন”।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

«لأَنْ تَمْتَلِئَ أُذُنا ابْنِ آدَمَ رَصَاصاً مُذَاباً خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْمَعَ الْـمُنَادِيَ ثُمَّ لاَ يُجِيْبُهُ».

“আদম সন্তানের উভয় কান গলানো সিসা দিয়ে ভর্তি থাকা তার জন্য অনেক ভালো মুআয্যিনের আযান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে সালাত না পড়ার চাইতে”।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ سَمِعَ الـُمنَادِىَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ، لَمْ يَجِدْ خَيْراً وَلَمْ يُرَدْ بِهِ».

“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে সে কল্যাণপ্রাপ্ত নয় অথবা তার সাথে কোনো কল্যাণ করার ইচ্ছেই করা হয় নি”।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ سَمِعَ الْـمُنَادِيَ فَلَمْ يُجِبْ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ».

“যে ব্যক্তি মুআয্যিনের আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয় নি অথচ তার কোনো ওযরই ছিলো না তা হলে তার সালাতই হবে না”।[18]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিযুক্ত মক্কার গভর্ণর আত্তাব ইবন আসীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি একদা মক্কাবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«وَاللهِ لاَ يَبْلُغُنِيْ أَنَّ أَحَداً مِنْكُمْ تَخَلَّفَ عَنِ الصَّلاَةِ فِيْ الْـمَسْجِدِ مَعَ الْـجَمَاعَةِ إِلاَّ ضَرَبْتُ عُنُقَهُ».

“আল্লাহর কসম! কোনো ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত পড়ছে না এমন খবর আমার কানে আসলে আমি তাকে হত্যা করবো”।[19]

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَتَخَلَّفُوْنَ عَنِ الصَّلاَةِ فَيَتَخَلَّفُ لِتَخَلُّفِهِمْ آخَرُوْنَ لأَنْ يَحْضُرُوْا الصَّلاَةَ أَوْ لأَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ مَنْ يُجَافِيْ رِقَابَهُمْ».

“তাদের কী হলো! যারা জামা‘আতে সালাত পড়ছে না এবং তাদেরকে দেখে অন্যরাও জামা‘আতে উপস্থিত হচ্ছে না। তারা যেন জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য উপস্থিত হয় তা না হলে আমি তাদের নিকট এমন লোক পাঠাবো যারা তাদের গর্দান উড়িয়ে দিবে”।[20]

এ ছাড়া অন্য কোনো সাহাবী এদের বিপরীত মত পোষণ করেন নি। অতএব, বুঝা গেলো এ ব্যাপারে তাদের সবার ঐকমত্য রয়েছে।

হাসান বাসরী রহ. বলেন:

«إِنْ مَنَعَتْهُ أُمُّهُ عَنِ الْعِشَاءِ فِيْ الْـجَمَاعَةِ شَفَقَةً لَمْ يُطِعْهَا».

“কারোর মা যদি সন্তানের ওপর দয়া করে তাকে ইশার সালাত জামা‘আতে পড়তে নিষেধ করে তা হলে সে তাঁর আনুগত্য করবে না। কারণ, গুনাহ’র কাজে মাতা-পিতার আনুগত্য করতে হয় না”।[21]

আরো যাঁরা জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব বলেছেন তারা হলেন, আত্বা ইবন আবী রাবাহ, ইমাম আহমদ, ইমাম শাফেঈ, আওযাঈ, খাত্ত্বাবী, ইবন খুযাইমাহ, ইমাম বুখারী, ইবন হিব্বান, আবু সাউর, ইবন হাযম, ইমাম দাউদ আয-যাহেরী, ইবন ক্বুদামাহ, আল্লামা আলাউদ্দীন আস-সামারক্বান্দী, আবু বাকার আল-কাসানী, ইবনুল্-মুনযির, ইবরাহীম আন-নাখা‘য়ী ও ইমাম ইবন আব্দিল-বার প্রমুখ।

আর একটি ব্যাপার হচ্ছে, যে জামা‘আতে সালাত আদায় করা থেকে পিছিয়ে থাকে সে পরবর্তীতে সম্পূর্ণরূপে সালাতই ছেড়ে দেয়। তাই প্রতিটি মুসলিমের একান্ত কর্তব্য হবে, জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আরো বেশী যত্নবান হওয়া এবং নিজ ছেলে-সন্তান, পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি সকল মুসলিম ভাইদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা। আর তখনই আমরা মুনাফিকী থেকে মুক্তি পাবো।

[11] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫০।

[12] আহমদ, হাদীস নং ৭৯১৩।

[13] ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস নং ১৩০৮৫; ইবন আবী শাইবাহ: ১/৩৩২।

[14] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮০১।

[15] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৩।

[16] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ৩৪৮৬।

[17] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ৩৪৮২।

[18] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ৩৪৮৩।

[19] কিতাবুস-সালাহ/ইবনুল-কাইয়্যেম ৫৯৫।

[20] মিফ্তাহুল-আফকারর/আব্দুল আযীয আল-সালমান ২/১০২।

[21] সহীহ বুখারী: অধ্যায় ১০, অনুচ্ছেদ: ২৯।