ই‘তিকাফের সর্বনিম্ন সময় কত? আমি কি অল্প কিছু সময়ের জন্য ই‘তিকাফ করতে পারি নাকি একসাথে কিছু দিনের জন্য ই‘তিকাফ করতে হবে?

ফাত্‌ওয়া নং - 49002

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ই‘তিকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমার ব্যাপারে ‘আলিমগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

অধিকাংশ ‘আলিমগণের মতে ই‘তিকাফের সর্বনিম্ন সময় এক মুহূর্তের জন্যও হতে পারে। আর এটি ইমাম আবূ হানীফাহ, ইমাম আশ-শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদের মত।

দেখুন: আদ-দুরর আল-মুখতার(১/৪৪৫), আল-মাজমূ‘(৬/৪৮৯), আল-ইনসাফ (৭/৫৬৬)।

ইমাম আন-নাওয়াউয়ী ‘আল-মাজমূ‘’ (৬/৫১৪)-তে বলেছেন :

“আর ই‘তিকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা সম্পর্কে অধিকাংশ (‘আলিমগণ) যে মত তা‘কীদের সাথে পোষণ করেন এবং এটিই সঠিক মত যে এর জন্য মাসজিদে অবস্থান শর্ত (অর্থাৎ ই‘তিকাফ মাসজিদে হতে হবে) এবং তা বেশি বা অল্প সময়ের জন্য হতে পারে, কিছু সময় বা মুহূর্তের জন্যও”।

আর এ ব্যাপারে তাঁরা বেশ কয়েকটি দলীল দিয়েছেন :

১. ই‘তিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা যা দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হতে পারে। আর শারী‘আতে এমন কোনো দলীল পাওয়া যায় না, যা কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়।

ইবনু হাযম বলেছেন :

“ই‘তিকাফ আরবদের ভাষায়-অবস্থান করা। তাই আল্লাহ তা‘আলার মাসজিদে তাঁর নৈকট্য লাভের আশায় যে কোনো অবস্থানই হল ই‘তিকাফ.........সময়সীমা কম হোক বা বেশি হোক, যেহেতু কুর’আন ও সুন্নাহ নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা বা সময় নির্ধারণ করেনি”। [আল-মুহাল্লা (৫/১৭৯)]

২. ইবনু আবী শাইবাহ, ইয়া‘লা ইবনু উমাইইয়াহ –রাহিমাহুল্লাহ-থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন : “আমি মাসজিদে ‘সা‘আহ’ বা কিছু সময় অবস্থান করি আর আমি ই‘তিকাফ করার জন্যই অবস্থান করি।” এটি দ্বারা ইবনু হাযম-‘আল-মুহাল্লা’-তে (৫/১৭৯) দলীল পেশ করেছেন।

হাফিয ইবনু হাজার ‘ফাতহুল বারী’-তে তা উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন (অর্থাৎ কোনো মন্তব্য করেন নি)।

আর সা‘আহ হল সময়ের কিছু অংশ, বর্তমান পরিভাষায় ব্যবহৃত ষাট মিনিটের এক ঘণ্টা নয়। [উল্লেখ্য যে সাম্প্রতিক পরিভাষায় ‘আরাবীতে এক ঘণ্টা(৬০ মি:) কে সা‘আহ বলে।]

‘আলিমগণের মধ্যে কারও কারও মতে এর (ই‘তিকাফের) সর্বনিম্ন সময় একদিন। এটি ইমাম আবূ হানীফাহ’র এক বর্ণনা এবং মালিকী ফিক্বহী মাযহাবে কেউ কেউ এ মত পোষণ করেছেন।

আর শাইখ ইবনু বায ‘মাজমূ‘আল ফাত্‌ওয়া’ তে (১৫/৪৪১) বলেছেন :

“ই‘তিকাফ হল আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মাসজিদে অবস্থান করা, সময় কম হোক বা বেশি হোক। কারণ আমার জানা মতে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না, যা একদিন, দুই দিন বা এর বেশি কিছু নির্দিষ্ট হওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করে। আর তা শারী‘আতসম্মত একটি ‘ইবাদাত যদি না কেউ নাযর (মান্নত) করে,-নাযরের (মান্নতের) দ্বারা তা ওয়াজিব হয়ে যায়। আর তা নারী ও পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”