প্রথমত: গুপ্তধনের সংজ্ঞা: অধিকাংশ আলিম বলেছেন, ­—আর তাদের সংজ্ঞাটিই বিশুদ্ধ: গুপ্তধন বলতে জমিনে পুতে রাখা সকল সম্পদকে বুঝানো হয়, যেমন প্রত্নতত্ত্ব, স্বর্ণ, রূপা, সীসা, পিতল, বাসন-কোসন ও অন্যান্য আসবাব-পত্র, তবে জাহিলি যুগের হওয়া শর্ত, অর্থাৎ নিশ্চিত হতে হবে যে, গুপ্তধন ইসলামের পূর্বযুগে মাটিতে পুতে রাখা হয়েছে, (গুপ্তধনের গায়ের তারিখ ও অন্যান্য নিদর্শন দেখে যা বুঝা যায়) অতঃপর কেউ নিজের জমি খনন করতে গিয়ে তার সন্ধান পায়। যেমন, ঘরের খুঁটি অথবা কুপ অথবা কোনও খনন কাজে বেরিয়ে আসে। আর যদি গুপ্তধন বের করতে টাকা-পয়সা ব্যয় হয় তখন সেটি গুপ্তধন থাকবে না, যাকাতের সম্পদের ন্যায় সাধারণ সম্পদ গণ্য হবে, যেমন পূর্বে বলেছি।

একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যদি এই জমি, (যেখানে গুপ্তধন পাওয়া গেছে) কারও থেকে ক্রয় করা হয়, আর গুপ্তধনে প্রমাণ থাকে যে, যার থেকে জমি ক্রয় করা হয়েছে তারই এই সম্পদ, তখন বিক্রেতাকে সম্পদ ফেরত দেওয়া জরুরি, আর তখন সে ব্যক্তিই তার যাকাত দিবে। অনুরূপ জমি যদি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন হয়, আর রাষ্ট্র কাউকে লিজ বা ভাড়া দেয়, তাহলে রাষ্ট্রকে গুপ্তধন ফেরত দেওয়া জরুরি, রাষ্ট্র তার যাকাত দিবে।

আর যদি জানা যায় গুপ্তধন ইসলাম বিকাশ লাভ করার পর মাটিতে পুতে রাখা হয়েছে, তাহলে এই প্রাপ্তধন গুপ্তধন হবে না, বরং কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদ হবে, অর্থাৎ কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদের ন্যায় গণমাধ্যমে তার এক বছর ঘোষণা দিবে, (অমুক সম্পদ অমুক জায়গায় পাওয়া গেছে) যেন মালিক পর্যন্ত ঘোষণা পৌঁছে যায়, যদি নিদর্শন দ্বারা মালিকের পরিচয় পাওয়া যায় তবে তাকে ফেরত দেওয়া ওয়াজিব, অন্যথায় সে নিজেই তার মালিক হবে এবং নিসাব বরাবর হলে তার যাকাত দিবে, কারণ এটি জাহিলি যুগের গুপ্তধন নয়।[1]

দ্বিতীয়ত: গুপ্তধন থেকে যাকাত দেওয়ার পরিমাণ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: وفي الرِّكَاز: الخُمس “গুপ্তধনের যাকাত এক পঞ্চমাংশ”।[2] অর্থাৎ যে গুপ্তধন পাবে সে গুপ্তধন থেকে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে। অধিকাংশ আলিম বলেছেন: যে গুপ্তধন পাবে তার দায়িত্ব এক পঞ্চমাংশ যাকাত বের করা, সে মুসলিম হোক বা মুসলিম দেশে বসবাসকারী যিম্মি হোক। গুপ্তধন প্রাপককে মুসলিম শাসক বাধ্য করবেন, যেন রাষ্ট্রের নিকট এক পঞ্চমাংশ যাকাত হস্তান্তর করে, সে ছোট, বড়, সুস্থ বা পাগল যাই হোক। এটি বিশুদ্ধ মত, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী وفي الرِّكَاز: الخُمس ব্যাপক: ছোট-বড়-সুস্থ-পাগল সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে। আরেকটি বিষয় জানা প্রয়োজন যে, হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় পাঁচভাগ থেকে অবশিষ্ট চার ভাগ প্রাপকের হক।

তৃতীয়ত: গুপ্তধনের নিসাব: হাদীসের বাহ্যিক অর্থ বলে, গুপ্তধনে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিসাব শর্ত নয়। অধিকাংশ আলিম এ কথা বলেছেন। অতএব, যে জাহিলি যুগের গুপ্তধন পাবে, সে তার এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে, তার পরিমাণ কম হোক বা বেশি হোক।

চতুর্থত: এক পঞ্চমাংশ গুপ্তধনের হকদার: গুপ্তধনের খাত হাদীসে নির্ণয় করা হয়নি, তাই ফকিহগণ ইখতিলাফ করেছেন: গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ যাকাতের আট খাতে ব্যয় করবে, না গণিমতের ন্যায় জনস্বার্থে ব্যয় করবে?

বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, এক পঞ্চমাংশ জনস্বার্থে ব্যয় করবে, অর্থাৎ মুসলিম শাসক তার খাত নির্ণয় করবে, যেখানে স্বার্থ দেখবে সেখানে ব্যয় করবে।[3]পঞ্চমত: গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার সময়: হাদীসের বাহ্যিক অর্থ বলছে যে, গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার জন্য বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়, বরং যখন পাবে তখন তার এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে, এতে কারও দ্বিমত নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:وفي الرِّكَاز: الخُمس গুপ্তধনে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব। এতে তিনি বছর পূর্ণ হওয়ার শর্তারোপ করেন নি।

>
[1] আশ-শারহুল মুমতি‘: (৬/৯৬-৯৭)।

[2] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

[3] তামামুল মিন্নাহ ফিত-তালিক আলা ফিকহিস-সুন্নাহ: (পৃ. ২৭৮)।