পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর ভালবাসা সেসব ব্যক্তিদের জন্য অবধারিত যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরের শুভাকাঙ্খী হয় একে অন্যের জন্য খরচ করে
৫৭৬. আবু মুসলিম আল খাওলানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমি মু‘আয বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ভালবাসি কিন্তু এটা দুনিয়ার কোন স্বার্থের জন্য নয়, যা আমি আাপনার কাছে পাওয়ার আশা রাখি আর আপনার ও আমার মাঝে কোন আত্নীয়তার সম্পর্কও নেই।” তিনি বলেন: “তাহলে কী জন্য (ভালবাসেন)?” আমি বললাম: “আল্লাহর জন্য।” রাবী বলেন, অতঃপর তিনি আমার চাদরের কিনারা ধরে তাঁর কাছে টেনে নেন তারপর বলেন: “যদি আপনি সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তবে শুভ সংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালবাসা ব্যক্তিগণ আরশের ছায়ায় থাকবে, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না। তাঁদের সম্মানজনক অবস্থানের কারণে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।” রাবী বলেন, “তারপর আমি সেখান থেকে বের হয়ে ‘উবাদাহ বিন সামিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে আসি এবং তাঁকে মু‘আয বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস বর্ণনা করি। তখন ‘উবাদাহ বিন সামিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন: “আমার ভালবাসা অবধারিত তাদের জন্য যারা আমার জন্য পরস্পরকে ভালবাসে, আমার ভালবাসা অবধারিত তাদের জন্য যারা আমার জন্য পরস্পরের শুভাকাঙ্খী হয়, আমার ভালবাসা অবধারিত তাদের জন্য যারা আমার জন্য পরস্পরকে দেখতে যায়, আমার ভালবাসা অবধারিত তাদের জন্য যারা আমার জন্য পরস্পরের জন্য খরচ করে; তাঁরা নূরের মিম্বারের উপর থাকবে, তাঁদের মর্যাদাগত অবস্থানের জন্য নবী ও সিদ্দীকগণও ঈর্ষান্বিত হবেন।”[1]
قَالَ أَبُو حَاتِمٍ: أَبُو مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيُّ اسْمُهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ ثَوْبٍ يَمَانِيٌّ تَابِعِيٌّ مِنْ أَفَاضِلِهِمْ وَأَخْيَارِهِمْ وَهُوَ الَّذِي قَالَ لَهُ الْعَنْسِيُّ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ قَالَ: لَا قَالَ: أَتَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ؟ قَالَ: نَعَمْ فَأَمَرَ بِنَارٍ عَظِيمَةٍ فَأُجِّجَتْ وَخَوَّفَهُ أَنْ يَقْذِفَهُ فِيهَا إِنْ لَمْ يُوَاتِهِ عَلَى مُرَادِهِ فَأَبَى عَلَيْهِ فَقَذَفَهُ فِيهَا فَلَمْ تضُرَّهُ فَاسْتَعْظَمَ ذَلِكَ وَأَمَرَ بِإخْرَاجِهِ مِنَ الْيَمَنِ فَأُخْرِجَ فَقَصَدَ الْمَدِينَةَ فَلَقِيَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ فَسَأَلَهُ مِنْ أَيْنَ أَقْبَلَ فَأَخْبَرَهُ فقَالَ لَهُ: مَا فَعَلَ الْفَتَى الَّذِي أُحْرِقَ؟ فقَالَ: لَمْ يَحْتَرِقْ فَتَفَرَّسَ فِيهِ عمر أنه هو فقال: أقسمت عليه بِاللَّهِ أَنْتَ أَبُو مُسْلِمٍ قَالَ: نَعَمْ فَأَخَذَ بِيَدِهِ عُمَرُ حَتَّى ذَهَبَ بِهِ إِلَى أَبِي بَكْرٍ فَقَصَّ عَلَيْهِ الْقِصَّةَ فسُرَّا بِذَلِكَ وَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أُرَانَا فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ مَنْ أُحْرِقَ فَلَمْ يَحْتَرِقْ مِثْلَ إِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقِيلَ: إِنَّهُ كَانَ لَهُ امْرَأَةٌ صَبِيحَةُ الْوَجْهِ فَأَفْسَدَتْهَا عَلَيْهِ جَارَةٌ لَهُ فَدَعَا عَلَيْهَا وَقَالَ: اللَّهُمَّ أعْمِ مَنْ أَفْسَدَ عَلَيَّ امْرَأَتِي فَبَيْنَمَا الْمَرْأَةُ تَتَعَشَّى مَعَ زَوْجِهَا إِذْ قَالَتِ: انْطَفَأَ السِّرَاجُ؟ قَالَ زَوْجُهَا: لَا فَقَالَتْ: فَقَدْ عميتُ لَا أُبْصِرُ شَيْئًا فَأُخْبِرَتْ بِدَعْوَةِ أَبِي مُسْلِمٍ عَلَيْهَا فَأَتَتْهُ فَقَالَتْ: أَنَا قَدْ فَعَلْتُ بِامْرَأَتِكَ ذَلِكَ وَأَنَا قَدْ غَرَّرْتُهَا وَقَدْ تُبْتُ فَادْعُ اللَّهَ يَرُدُّ بَصَرِي إِلَيَّ فَدَعَا اللَّهَ وَقَالَ: اللَّهُمَّ رُدَّ بَصَرَهَا فَرَدَّهُ إِلَيْهَا.
আবু হাতিম ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন: “আবু মুসলিম আল খাওলানী, তাঁর নাম আব্দুল্লাহ বিন সাওব ইয়ামানী, একজন শ্রেষ্ঠ তাবে‘ঈ ছিলেন। তাঁকে আনাসী (ভন্ড, যে নিজেকে নবী দাবী করেছিল) বলেছিল: “তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল?” আবু মুসলিম বলেন: “না।” সে আবার জিজ্ঞেস করে: “তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল?” তিনি বলেন: “হ্যাঁ। ”অতঃপর সে বিশাল আকারের আগুন প্রজ্জ্বলিত করার আদেশ দেয় এবং তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার ভয় দেখায়, যদি সে তার উদ্দেশ্যের সাথে একাত্বতা পোষণ না করে। কিন্তু তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানালে সে তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করে। কিন্তু আগুন তাঁর কোন ক্ষতিই করে না। তখন বিষয়টি সে খুব গুরুতর মনে করে এবং তাঁকে ইয়ামান থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ জারি করে। ফলে তাঁকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। অতঃপর তিনি মদীনা অভিমুখে রওনা হন এবং উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কোথা থেকে এসেছেন, তিনি তাঁকে তা জানান। তারপর উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেন, “ঐ যুবকের কী খবর যাকে আগুনে জ্বালানো হয়?” তিনি বলেন: “তিনি পুড়েননি।” তখন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বুঝতে পারেন যে, ইনিই সেই ব্যক্তি। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, “আপনিই কি আবু মুসলিম?” তিনি বলেন: “জ্বী, হ্যাঁ “অতঃপর উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর হাত ধরে আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে নিয়ে যান এবং তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করেন। এতে তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং বলেন: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এই উম্মাতের মাঝেও ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মতো এমন ব্যক্তিকে দেখিয়েছেন, যাকে আগুনে দেওয়া হলেও আগুনে পুড়েননি।”
আরো বলা হয়ে থাকে যে, তাঁর একজন স্ত্রী ছিল খুবই সুন্দর চেহারার অধিকারিনী। অতঃপর তাঁর প্রতিবেশী এক নারী তাঁর স্ত্রীর চেহারা নষ্ট করে দেয়। ফলে তিনি তার বিরুদ্ধে বদ-দু‘আ করে বলেন: “হে আল্লাহ, যে আমার স্ত্রীর চেহারা নষ্ট করে দিয়েছে, তাকে তুমি অন্ধ করে দাও।” অতঃপর সেই নারী তার স্বামীর সাথে রাতের খাবার খাচ্ছিল, এমন সময় সে বলে: “বাতি কি নিভে গেছে?” তার স্বামী জবাব দেয়: “না।” তখন সে বলে: “আমি অন্ধ হয়ে গেছি, আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।” অতঃপর তাকে আবু মুসলিমের বদ-দু‘আর কথা জানানো হলে সে তাঁর কাছে এসে বলে: “আমিই আপনার স্ত্রীর সাথে এমন আচরণ করেছি। আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছি। অবশ্য আমি তাওবা করেছি। অতএব আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন তিনি যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন।” অতঃপর তিনি তার জন্য দু‘আ করে বলেন: “হে আল্লাহ, তুমি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দাও। ফলে আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন।”
ذِكْرُ إِيجَابِ مَحَبَّةِ اللَّهِ لِلْمُتَنَاصِحِينَ وَالْمُتَبَاذِلِينَ فِيهِ
أخبرنا أيو يَعْلَى حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ أَبِي زُمَيْلٍ حَدَّثَنَا أَبُو الْمَلِيحِ الرَّقِّيُّ عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي مَرْزُوقٍ عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيِّ قَالَ: قُلْتُ لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ لِغَيْرِ دُنْيَا أَرْجُو أَنْ أُصِيبَهَا مِنْكَ وَلَا قَرَابَةَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ قَالَ: فَلِأَيِّ شَيْءٍ؟ قُلْتُ: لِلَّهِ قَالَ: فَجَذَبَ حُبْوَتِي ثُمَّ قَالَ: أَبْشِرْ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (الْمُتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ يَغْبِطُهُمْ بِمَكَانِهِمِ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاءُ) ثُمَّ قَالَ: فَخَرَجْتُ فَأَتَيْتُ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ فَحَدَّثْتُهُ بِحَدِيثِ مُعَاذٍ فقَالَ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: (حُقَّت مَحَبَّتِي عَلَى الْمُتَحَابِّينَ فيَّ وحُقَّت مَحَبَّتِي عَلَى الْمُتَنَاصِحِينَ فيَّ وحُقَّت مَحَبَّتِي عَلَى الْمُتَزَاوِرِينَ فيَّ وحُقَّت مَحَبَّتِي عَلَى الْمُتَبَاذِلِينَ فيَّ وَهُمْ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ والصديقون بمكانهم.)
الراوي : أَبو مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيّ | المحدث : العلامة ناصر الدين الألباني | المصدر : التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان
الصفحة أو الرقم: 576 | خلاصة حكم المحدث: صحيح.
হাদীসটি সানাদকে আল্লামা শু‘আইব আল আরনাঊত রহিমাহুল্লাহ উত্তম বলেছেন। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (আত তা‘লীকুর রাগীব: ৪/৪৭।)