পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩২-[৬৫] সাহল ইবনু হানযালিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হুনায়নের যুদ্ধের দিন তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে ভ্রমণে বের হলেন। ভ্রমণটি কিছুটা দীর্ঘ হলো, এমনকি সন্ধ্যা এসে গেল। এমন সময় একজন অশ্বারোহী এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক পাহাড়ের উপর উঠেছিলাম, তখন দেখতে পেলাম, হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা সকলে এসে পড়েছে। তাদের সাথে তাদের মহিলাগণ, মালসম্পদ এবং সর্বপ্রকারের গবাদিপশু রয়েছে; আর তারা সকলে হুনায়ন এলাকায় একত্রিত হয়েছে।
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) হালকা হেসে বললেন, ইনশা-আল্ল-হ! আগামীকাল এ সমস্ত জিনিস মুসলিমদের গনীমাতের সম্পদে পরিণত হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) - বললেন, আজ রাতে (তোমাদের) কে আমাদেরকে পাহারা দেবে? আনাস ইবনু আবূ মারসাদ আল গানবী (রাঃ) বললেন, আমিই হে আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আচ্ছা আরোহণ কর। তখন তিনি তাঁর অশ্বে আরোহণ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি এই পাহাড়ী রাস্তায় অগ্রসর হও, এমনকি এ পাহাড়ের উপরে পৌছে যাও। (বর্ণনকারী বলেন,) যখন ভোর হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাতের জন্য বের হলেন। দু’ রাক্আত সুন্নাত পড়ে প্রশ্ন করলেন, তোমরা তোমাদের অশ্বারোহীর আভাস পেয়েছ কি? তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আভাস পাইনি।
অতঃপর সালাতের জন্য ইকামাত দেয়া হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত আদায় করতে করতে আড় চোখে সেই গিরিপথের দিকে তাকাচ্ছিলেন। সালাত শেষ করেই তিনি (সা.) বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের অশ্বারোহী এসে পৌছেছে। (বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বৃক্ষরাজির মাঝে পাহাড়ী পথে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেন, আমি রওয়ানা হয়ে ঐ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিলাম, যেখানে উঠার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে নির্দেশ করেছিলেন। যখন আমি সকালে উপনীত হলাম, তখন আমি উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এদিক-সেদিক দৃষ্টি দিলাম কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) সে অশ্বারোহীকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি রাতের বেলায় অবতরণ করেছিলে? তিনি বললেন, না। তবে শুধু সালাতের জন্য অথবা প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এরপর তুমি অন্য কোন প্রকারের (নফল) ’আমল না করলেও তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن سهل ابْن الْحَنْظَلِيَّةِ أَنَّهُمْ سَارُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَأَطْنَبُوا السَّيْرَ حَتَّى كَانَت عَشِيَّةً فَجَاءَ فَارِسٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي طَلِعْتُ عَلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَإِذَا أَنَا بِهَوَازِنَ عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ بِظُعُنِهِمْ وَنَعَمِهِمُ اجْتَمَعُوا إِلَى حُنَيْنٍ فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ تِلْكَ غَنِيمَةٌ الْمُسْلِمِينَ غَدا إِن شَاءَ الله ثمَّ قَالَ مَنْ يَحْرُسُنَا اللَّيْلَةَ قَالَ أَنَسُ بْنُ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيُّ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ارْكَبْ فَرَكِبَ فَرَسًا لَهُ فَقَالَ: «اسْتَقْبِلْ هَذَا الشِّعْبَ حَتَّى تَكُونَ فِي أَعْلَاهُ» . فَلَمَّا أَصْبَحْنَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى مُصَلَّاهُ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ قَالَ هَلْ حسستم فارسكم قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَسِسْنَا فَثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَهُوَ يَلْتَفِتُ إِلَى الشِّعْبِ حَتَّى إِذَا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ أَبْشِرُوا فَقَدْ جَاءَ فَارِسُكُمْ فَجَعَلْنَا نَنْظُرُ إِلَى خِلَالِ الشَّجَرِ فِي الشِّعْبِ فَإِذَا هُوَ قَدْ جَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسلم فَقَالَ إِنِّي انْطَلَقْتُ حَتَّى كُنْتُ فِي أَعْلَى هَذَا الشِّعْبِ حَيْثُ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصبَحت اطَّلَعت الشِّعْبَيْنِ كِلَيْهِمَا فَلَمْ أَرَ أَحَدًا فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ نَزَلْتَ اللَّيْلَةَ قَالَ لَا إِلَّا مُصَلِّيَا أَوْ قَاضِيَ حَاجَةٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلَا عَلَيْكَ أَنْ لَا تَعْمَلَ بعدَها» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (2501) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ) অর্থাৎ স্বীয় পিতার উটের উপর। অর্থাৎ- সকলেই একত্রিত হয়ে। কথিত আছে যে এক ব্যক্তি তাঁর সকল ছেলে-মেয়েকে একটি উটের উপরে বহন করত। এটি আরবদের একটি প্রবাদ বাক্য। এর দ্বারা তারা আধিক্য বুঝায়।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন যে, (عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ)-এর মধ্যকার (عَلَى) মূলত (مع) অর্থে হয়েছে। আর এ বাক্য প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর এ প্রবাদ বাক্যের উৎস হলো, এক ‘আরব গোত্রের কিছু লোক কোন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে স্বীয় বাসস্থান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। অতএব ঐ সকল লোক এখান থেকে রওয়ানা হলো। যেহেতু তারা তাদের পিছনে কোন জিনিস ফেলে যেতে চাচ্ছিল না, তাই তারা এক একটি জিনিস নিজেদের সাথে নিয়ে নিল। এমনকি তাদের নিকট যে উট ছিল সেগুলোও সাথে নিয়ে নিল।
এ অবস্থা দেখে কিছু লোক বলল, (جاءواعلى بكرةأبيهم) অর্থাৎ এ সকল লোক (সব কিছু নিয়ে) এসেছে এমনকি স্বীয় পিতার উটও নিয়ে এসেছে। পরবর্তীতে এ বাক্য এমন লোকদের ক্ষেত্রে প্রবাদ বাক্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে লাগল যারা নিজেদের সাথে তাদের সকল মাল-সামানা ও সকল লোক সহকারে আগমন করে এমতাবস্থায় তাদের সাথে কখনো উট থাকত আবার কখনো থাকত না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(أَنْ لَا تَعْمَلَ بعدَها) অর্থ- ঐ রাতের পর তুমি অন্য কোন ‘আমল না করলেও... অর্থাৎ অন্য কোন নফল ও ফাযীলাতের কাজ না করতে পারলেও আজ রাতে তুমি যে গুণের কাজ করেছ তা তোমার মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে। ইবনুল মুবারক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে রাসূল (সা.) -এর পক্ষ থেকে সুসংবাদ আছে যে, আল্লাহ তার পূর্বের ও পরের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তবে এতে সন্দেহের অবকাশ আছে।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ এই রাতের পর তুমি যদি কোন অতিরিক্ত কল্যাণকর কাজ নাও কর তবে তোমার কোন সমস্যা হবে না। কারণ এই রাতের ‘আমল তোমার জন্য সাওয়াব ও ফাযীলাতের দিক দিয়ে যথেষ্ট। তিনি এখানে নফল ও সাওয়াবের কথা বলেছেন, ফরযের কথা বলেননি। কারণ ফরয কাজ বান্দার থেকে কম করা হয় না। এটারও সম্ভাবনা আছে যে, উক্ত ঘোষণার মধ্যে আমল দ্বারা জিহাদ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তুমি আজকের রাত্রিতে আল্লাহর রাস্তায় আমাদের পাহারাদারির দায়িত্ব যেভাবে পরিশ্রম, বীরত্ব ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেছ এরপর যদি তুমি জিহাদে শরীক নাও হও তবুও তোমাকে এ ব্যাপারে কোন ধরপাকড় করা হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)