৩৫১৩

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই

৩৫১৩-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল- হে আল্লাহর রসূল! যদি কোনো লোক এসে আমার ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করতে চায়, তখন আমার কী করণীয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে তোমার ধন-সম্পদ থেকে তোমার মাল দিবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সাথে লড়াই-বিবাদ করতে চায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তুমিও তা-ই কর। অতঃপর লোকটি বলল, যদি সে আমাকে হত্যা করে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তো তুমি শহীদ। অতঃপর লোকটি বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করে ফেলি? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে সে হবে জাহান্নামী। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ جَاءَ رَجُلٌ يُرِيدُ أَخْذَ مَالِي؟ قَالَ: «فَلَا تُعْطِهِ مَالَكَ» قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَاتَلَنِي؟ قَالَ: «قَاتِلْهُ» قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلَنِي؟ قَالَ: «فَأَنْتَ شَهِيدٌ» . قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلْتُهُ؟ قَالَ: «هُوَ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة قال: جاء رجل فقال: يا رسول الله ارايت ان جاء رجل يريد اخذ مالي؟ قال: «فلا تعطه مالك» قال: ارايت ان قاتلني؟ قال: «قاتله» قال: ارايت ان قتلني؟ قال: «فانت شهيد» . قال: ارايت ان قتلته؟ قال: «هو في النار» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: شَهِيْدٌ (শহীদ) কাদের বলা হয় বা শহীদ বলার কারণ:

* নযর বিন শুমায়ল বলেনঃ শহীদ অর্থ প্রত্যক্ষধর্মী। আর শহীদ যেহেতু জীবিত থাকে তাই তাকে شَهِيْدٌ বলা হয়। কারণ তাদের রূহ দারুস্ সালাম জান্নাত প্রত্যক্ষ করে। আর অন্যদের রূহ শুধু কিয়ামত দিবসে তা দেখতে পায়।

* ইবনুল আম্বারী বলেনঃ যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা ও ফেরেশতামন্ডলী শাহীদের জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করেন তাই তাকে শহীদ বলা হয়। তখন شَهِيْدٌ-এর অর্থ হবে مشهود له (যার জন্য সাক্ষ্য দান করা হয়)।

* কেউ কেউ বলেছেনঃ শহীদগণের আত্মা বের হওয়ার সময় তার সাওয়াব ও মর্যাদা দেখতে পায়, তাই তাকে শহীদ বলা হয়।

* কেউ কেউ বলেনঃ রহমাতের মালাক (ফেরেশতা) তাকে অবলোকন করে বা তার আত্মাকে নিয়ে যায়, তাই তার নাম শহীদ।

* আবার কেউ কেউ বলেনঃ যেহেতু তার সর্বশেষে উত্তম কাজের ও ঈমানের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়, তাই তাকে শহীদ বলা হয়।

* কোনো একজন মুহাদ্দিস বলেনঃ শাহীদের একজন সাক্ষী থাকে তা তার শাহাদাতের জন্য সাক্ষ্য দান করে। সে সাক্ষী হলো তার রক্ত। কেননা সে যখন পুনরুত্থিত হবে তখন তার ক্ষতস্থান ঝরাতে থাকবে।

* আযহারী ও অন্যরা অপর একটি মত বর্ণনা করেন : তারা বলেন- শহীদগণ কিয়ামতের দিন উম্মাতের জন্য সাক্ষ্য দানকারীদের অন্যতম হওয়ায় তাকে শহীদ বলা হয়। তবে এই কথায় শাহীদের নিজস্ব কোনো স্বকীয়তা প্রমাণ হয় না। (শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ২২৫)

শহীদ তিন প্রকার: প্রথমতঃ যুদ্ধের কারণে কাফিরের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি। এই শ্রেণীর শহীদ আখিরাতের সাওয়াবে ও দুনিয়ার বিধানে তথা তাকে গোসল না দেয়া ও তার জন্য সালাতুল জানাযা আদায় না করা উভয় ক্ষেত্রে শহীদ হিসেবে গণ্য।

দ্বিতীয়তঃ এই শ্রেণীর শহীদ আখিরাতে শাহাদাতের ফযীলত বা সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু দুনিয়াতে শাহীদের বিধান প্রযোজ্য হবে না। যেমন : পেটের পীড়ায় নিহত ব্যক্তি, মহামারিতে নিহত, দেয়াল চাপা পড়ে নিহত; নিজের সম্পদ হিফাযাত করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি যাদেরকে সহীহ হাদীস শহীদ বলে অভিহিত করেছে। এই শ্রেণীর শহীদকে গোসল দিতে হবে ও জানাযা আদায় করাতে হবে। তবে এই শহীদগণ প্রথম শ্রেণীর শহীদদের সাওয়াব লাভ করবে না।

তৃতীয়তঃ যে ব্যক্তি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে গানীমাতের জন্য কাফিরদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়। এই ধরনের ব্যক্তিকে হাদীসে শহীদ নামে অ্যাখ্যা দিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই শ্রেণীর শাহীদের ও পর দুনিয়াতে শাহাদাতের বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং তাকে গোসল দেয়া হয় না এবং সালাতুল জানাযা আদায় করা হয় না। আর তার জন্য আখিরাতে পূর্ণ সাওয়াব হবে না। আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত। (শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ২২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص)