২০৯৭

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইতিকাফ

الإِعْتِكَابِ এর শাব্দিক অর্থ হলো, কোন বিষয়ের আবশ্যকতা এবং নিজকে তার ওপর আটকে রাখা, তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, সাধারণ অবস্থান তা যে কোন স্থানেই হোক।

পারিভাষিক অর্থে ইতিকাফ হলো, নির্দিষ্ট কোন বিষয়কে আবশ্যকীয় করতঃ মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়।

’আল্লামা কুসতুলানী (রহঃ) বলেন, শাব্দিক অর্থেই ইতিকাফ হলো, অবস্থান করা, আটক রাখা, ভালো কিংবা মন্দ কোন বিষয়কে আবশ্যক করা। যেমন আল্লাহ তা’আলার বাণী,

لَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ অর্থাৎ- ’’মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় তোমরা রমণীদের সাথে সঙ্গম কর না।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৭)

’আল্লামা ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, ইতিকাফ সুন্নাত, তা মানুষের ওপর ওয়াজিব নয়। তবে যদি কোন ব্যক্তি তার নিজের ওপর মানতের মাধ্যমে ইতিকাফ ওয়াজিব করে নেয়, তবে তা পালন করা ওয়াজিব।


২০৯৭-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবসময়ই মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেছেন, তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْاِعْتِكَافِ

وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بعده

وعن عاىشة: ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يعتكف العشر الاواخر من رمضان حتى توفاه الله ثم اعتكف ازواجه من بعده

ব্যাখ্যা: (ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُه مِنْ بَعْدِه) অর্থাৎ- মৃত্যুর পরে তার সুন্নাত জিন্দা করণার্থে এবং তার পথের উপর অবিচল থাকার জন্য তার রমণীগণ ইতিকাফ করতেন।

এখানে দলীল হলো ইতিকাফ খাস ‘ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নারীরা ইতিকাফের ক্ষেত্রে পুরুষের মতই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতিপয় স্ত্রীকে ইতিকাফ করার অনুমতি প্রদান করেছেন।

‘আল্লামা নাবাবী বলেন, এ হাদীস নাবীদের ইতিকাফ বিশুদ্ধ হওয়ারই দলীল, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে নারীদের ইতিকাফ বাড়ির মসজিদে বৈধ এবং তা হলো তার বাড়ির নির্জন ঘর যা সালাতের জন্য বরাদ্দ। আর তিনি বলেন, মসজিদে ইতিকাফ করা পুরুষের জন্য বরাদ্দ। তিনি বলেন, পুরুষের জন্য বাড়ির সালাতের জায়গায় ইতিকাফ বৈধ নয়। ‘আল্লামা ইবনুল কুদামাহ্ বলেন, নারীর জন্য প্রত্যেক মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ, জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত হওয়া (জামা‘আত) তার ওপর ওয়াজিব নয়। আর ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, নারীর ইতিকাফ বাড়িতে হবে না।

আমরা বলব, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِى الْمَسَجِدِ ‘‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফকারী।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৭)

এখানে মাসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন স্থানের নাম যা গঠন করা হয়েছে তাতে সালাত আদায় করার জন্য। আর বাড়িতে যে সালাতের স্থান তা মাসজিদ নয়, কেননা তা সালাতের জন্য গঠিত হয়নি। যদি তাকে মাসজিদ বা নামাজের জায়গা বলা হয় তা মাযাজী বা হুকমী। অতএব তার জন্য প্রকৃত মসজিদের হুকুম প্রযোজ্য নয়। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ তাঁর নিকট মসজিদে ইতিকাফ করার অনুমতি চেয়েছেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুমতি দিয়েছেন মসজিদেই ইতিকাফ করার জন্য।

যদি (মাসজিদ) তাদের ইতিকাফের স্থান না হতো, তবে মসজিদে ইতিকাফের অনুমতি দিতেন না। যদি মাসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ইতিকাফ বৈধ হত, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তাদেরকে জানিয়ে দিতেন। যেহেতু ইতিকাফের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে মাসজিদ শর্ত, কাজেই নারীদের জন্যও মাসজিদ শর্ত। যেমন ত্বওয়াফের জন্য উভয়ের একই শর্ত।

আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস যা আমরা উল্লেখ করেছি তা আমাদের জন্য দলীল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের ইতিকাফ অপছন্দ করেছেন ঐ অবস্থাতে তাদের তাঁবুর আধিক্যের কারণে। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা দেখছিলেন, অতঃপর তাদের ওপর তাদের নিয়্যাতের বিপর্যয়ের আশংকা করছিলেন। আর এজন্যই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইতিকাফ বর্জন করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধারণা করেছিলেন যে, নিশ্চয়ই তারা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ) তাঁর সাথে অবস্থানের প্রতিযোগিতা করছে। তারা (ইমাম আবূ হানীফাহ্ সহ অন্যান্যরা) যে অর্থ উল্লেখ করেছেন, (নারীদের ইতিকাফ বাড়িতে করতে হবে, মসজিদে বৈধ নয়) ব্যাপারটা তাই যদি হত, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাড়িতে ইতিকাফের নির্দেশ দিতেন, তাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফের অনুমতি দিতেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم)